এখন ‘অবৈধ’, তবুও নারাজ হল ছাড়তে

এন এইচ সাজ্জাদ, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০১ এপ্রিল ২০১৯, ১৯:১৫ | প্রকাশিত : ০১ এপ্রিল ২০১৯, ১৮:৫২

ছাত্র হিসেবে হলের আবাসিকত্ব ফুরিয়েছে। তবুও তারা হলে থাকেন। অন্যদিকে আসন না পেয়ে নানা সমস্যায় নাকাল অনেক শিক্ষার্থী। বিক্ষোভ পরবর্তী এমনই একদল শিক্ষার্থীকে আসন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আর আসনগুলো ছেড়ে চলে যেতে বলা হয়েছে অবৈধভাবে থাকা প্রাক্তন ছাত্রদের। আর এটিই মানতে পারছেন না ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম (এসএম) হলের ছাত্রলীগের একাংশ।

আবাসন সমস্যায় জর্জরিত এসএম হলে নিয়মিত শিক্ষার্থীদের কক্ষে রবিবার রাতে আসন বরাদ্দকে কেন্দ্র করে হল সংসদ ও ডাকসু নেতৃবৃন্দের প্রতি বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে হল শাখা ছাত্রলীগ। হলে নানা রকম স্লোগান, ছাত্রলীগের জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার ও এক ছাত্রলীগ নেতার রুমের দরজার গ্লাস ভাঙা এই প্রতিক্রিয়ার অংশ বলে জানিয়েছেন হল ছাত্রলীগের বেশ কয়েকজন নেতা।

‘অবৈধ’ (যাদের স্নাতকত্তোর শেষ হয়েছে) ও ‘বহিরাগত’ শিক্ষার্থীদের হল থেকে বের করার দাবিতে একদল শিক্ষার্থী রবিবার সন্ধ্যায় বিক্ষোভ মিছিল বের করে। তার দশ মিনিট পরে হল শাখা ছাত্র সংসদের ভাইস প্রেসিডেন্ট (ভিপি) এম এম কামাল উদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক (জিএস) জুলিয়াস সিজার তালুকদারসহ সংসদের সকল নেতৃবৃন্দ বিষয়টি নিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন এবং বিষয়টি কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নেতাদের অবহিত করেন।

ডাকসুর ভাইস প্রেসিডেন্ট (ভিপি) নুরুল হক নুরু, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) গোলাম রাব্বানী ও সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) সাদ্দাম হোসাইন এসএম হলে যান। তারা শিক্ষার্থীদের দাবিদাওয়া শুনেন। এসময় শিক্ষার্থীরা ‘একটা একটা আদু ভাই ধর, ধইরা ধইরা জবাই কর’ বলে স্লোগান দিতে থাকেন।

আর এমন স্লোগান মানতে পারেননি হল শাখা ছাত্রলীগের জ্যেষ্ঠ নেতারা। তবে ঠিক কেন তাদের এই স্লোগানে আপত্তি সেটা জানা যায়নি। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক সাধারণ শিক্ষার্থীরা বলছেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে আদু ভাইয়ের মতো হলে থাকার যে অলিখিত নিয়ম ছাত্রলীগ তৈরি করেছে সেটি টিকিয়ে রাখতেই জ্যেষ্ঠ নেতৃবৃন্দের আপত্তি’।

এদিকে রুম বরাদ্দের সময় কে বা কারা কেন্দ্রীয় ও হল সংসদ নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে হলের ২৭ নাম্বার রুমের গ্লাস ভেঙ্গে ফেলেন। ওই রুমটিতে থাকতেন হল শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগাঠনিক সম্পাদক তানভির শিকদার।

এই ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থার হুশিয়ারি দিয়েছেন হল ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান তাপস। ঘটনার কয়েক ঘন্টা পর তিনি তার ফেসবুক টাইমলাইনে একটা স্ট্যাটাস পোস্ট করেন। তিনি লিখেন, ‘যারা আমার ছাত্রলীগের সাংগাঠনিক সম্পাদকের রুমের দরজার গ্লাস ভেঙ্গে দেয়, লাথি দেয়, তাদের ছাড় দেওয়া হবে না। ডাকসু ও হল সংসদকে ব্যবহার করে যারা এসব করতে চায় তারা কারা...? এক বিন্দু পরিমাণও ছাড় দেওয়া হবে না।’

এছাড়া হলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাওসার আল আমিন তার ফেসবুকে লিখেন, ‘আমি কট্টরপন্থী ছাত্রলীগ, আদর্শের জায়গায় কোনও ছাড় নেই আমার কাছে। রাজপথের ছাত্রলীগের বিশ্বাসী, মেকানিজম বুঝি না। সুশীল ছাত্রলীগ আমার থেকে দূরে থাকেন’।

কারা ওই রুমের গ্লাস ভেঙেছে জানতে চাইলে হল ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি তাহাসান আহমেদ রাসেল জানান, এই ঘটনায় জড়িত কাউকে এখন পযন্ত তারা শনাক্ত করতে পারেননি। প্রশাসনের সহায়তায় আশা দোষীকে শাস্তির আওতায় আনা হবে বলেও প্রত্যাশা করেন তিনি।

ডাকসু নির্বাচনে এসএম হল ছাত্র সংসদে ছাত্রলীগের পূর্ণ প্যানেল জয়লাভ করে। ছাত্রলীগের ওই প্যানেলে কয়েকজন ছাড়া হল ছাত্র সংসদের সকল নির্বাচিত নেতাই হল ছাত্রলীগের বিভিন্ন পদে ছিলেন।

এদিকে কেন্দ্রীয় ডাকসু নেতারা হল থেকে চলে যাওয়ার পর রবিবার মধ্যরাতে একটা পাল্টা মিছিল বের করে হল শাখা ছাত্রলীগ। যদিও ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে মাস দুয়েক আগে এক নোটিশে জানানো হয়েছিল ‘রাত দশটার পর সকল ধরনের রাজনৈতিক কর্মকান্ড নিষিদ্ধ।’

তবে এই মিছিলের ব্যাপারে জানেন না হল শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। তারা এ প্রতিবেদককে বলেন ‘আমরা এই মিছিলের ব্যাপারে কিছুই জানি না’।

তাহলে কারা করল এই মিছিল। এমন প্রশ্নের জবাবে হলের এসএম হল সংসদের জিএস জুলিয়াস সিজার তালুকদার বলেন, ‘কারা করেছে সেটা আমিও জানি না। এই কর্মকান্ডের দায়ভারও আমি নিতে পারব না। কারণ ব্যাক্তিগতভাবে আমি বা আমার কোনও অনুসারী সেই মিছিলে যাইনি। এছাড়া রাত দশটার পর ছাত্রলীগের রাজনৈতিক কর্মকান্ডে নিষেধাজ্ঞা আছে।’

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হল ছাত্রলীগের জ্যোষ্ঠ নেতাদের দেওয়া বিভিন্ন স্ট্যাটাসকে বাধা হিসেবে দেখছেন কিনা জানতে চাইলে ঢাকাটাইমসকে তিনি বলেন, ‘কিছুটা তো বাধা হিসেবেই দেখছি। কারণ তারা যেভাবে স্ট্যাটাস দিচ্ছে মনে হচ্ছে যেন তাদের রুম থেকে অন্যায়ভাবে বের করে দেওয়া হচ্ছে। তবে আশা করছি সবার সাথে আলোচনার মাধ্যমে দ্রুত এসব সমস্যার সমাধান করতে পারব।’

ঢাকাটাইমস/০১এপ্রিল/ডিএম

সংবাদটি শেয়ার করুন

শিক্ষা বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিক্ষা এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :