আল্লাহকে পাওয়ার সাধনায় ইতেকাফ

মুহম্মদ আলতাফ হোসেন
  প্রকাশিত : ২৫ মে ২০১৯, ২০:১৬
অ- অ+

মাহে রমজানের আজ বিশতম দিন। মাগফেরাতের দশকের শেষ দিন। আগামীকাল থেকে শুরু হবে নাজাতের দশক। আজ সূর্যাস্তের আগেই ইতেকাফ শুরু করতে হবে। ইতেকাফের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে, কোনো জিনিসকে আঁকড়ে ধরা এবং এর উপর নিজ সত্তা ও আত্মাকে আটকে রাখা। আর পারিভাষিক অর্থ হচ্ছে, আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে কোনো ব্যক্তির মসজিদে বাস ও অবস্থান করা। ইতেকাফ সবসময়ই করা যায়। তবে রমজান মাসে উত্তম এবং রমজানের শেষ দশকে লাইলাতুল কদর তালাশের উদ্দেশ্য তা সর্বোত্তম। ইতেকাফ এমন এক নির্জনতা যেখানে ব্যক্তি আল্লাহর ইবাদত, জিকির ও আনুগত্যের উদ্দেশ্য নিজের আত্মা ও সত্তাকে একান্তভাবে নিয়োজিত করে এবং নামাজ, রোজা, কোরআন তেলাওয়াত, ইসলামি জ্ঞান চর্চা ও গবেষণায় নিজেকে সম্পূর্ণ ব্যস্ত রাখে। একই কারণে তিনি দুনিয়ার সব কাজ ও ব্যস্ততা থেকে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য দূরে থাকেন। আল্লাহর সন্তুষ্টি ও নৈকট্য লাভের পথে যেন কোনো দুনিয়াবি চিন্তা ও কাজ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে না পারে।

ইতেকাফ কিছুতেই বৈরাগ্যবাদ নয়। বৈরাগ্যবাদ স্থায়ী জিনিস আর ইতেকাফ হচ্ছে সাময়িক। ইতেকাফের উদ্দেশ্য হলো সৃষ্টির সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করা এবং স্রষ্টার সাথে সম্পর্ক কায়েম করা। আল্লাহর সাথে পরিচয় যত গভীর হবে, সম্পর্ক ও ভালোবাসা তত গভীর হবে এবং তা বান্দাকে পুরোপুরি আল্লাহর কাছে নিয়ে যাবে। আল্লাহর পথে যাত্রা অব্যাহত রাখা নির্ভর করে যোগ্য ও সঠিক মনের ওপর। মন শত বিচ্ছিন্ন থাকলে সে পথে অগ্রসর হওয়া যায় না। সে জন্যই মনকে আল্লাহর দিকে ধাবিত করা দরকার। অথচ অতিরিক্ত পানাহার, মানুষের সাথে অতিরিক্ত মেলামেশা, বেহুদা ও বেশি কথাবার্তা এবং অতিরিক্ত ঘুম মনকে বিচ্ছিন্ন বিক্ষিপ্ত করে রাখে এবং ব্যক্তিকে সব উপত্যকায় বিচরণ করায়। সে জন্য আল্লাহর পথে যাত্রা বাধা প্রাপ্ত হয় কিংবা দুর্বল হয়ে পড়ে। তাই মেহেরবান আল্লাহ রোজার মাধ্যমে অতিরিক্ত পানাহার ও যৌন কামনাকে রোজার বিধানের মাধ্যমে দূর করার ব্যবস্থা করেছেন। আর ইতেকাফের উদ্দেশ্য হলো, আল্লাহর ব্যাপারে মন নিবিষ্ট করা, তার সাথে নির্জনে বাস করা এবং স্রষ্টার উদ্দেশ্যে সৃষ্টি থেকে দূরে অবস্থান করা যাতে করে তার চিন্তা ও ভালোবাসা মনে স্থান করে নিতে পারে।

রাসুল সা. বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্য একদিন ইতেকাফ করে, আল্লাহ সেই ব্যক্তি ও দোজখের মধ্যে তিন খন্দক পরিমাণ দূরত্ব সৃষ্টি করেন।’ প্রত্যেক খন্দক পূর্ব ও পশ্চিমের দূরত্বের চাইতে বেশি। নবীজি আরও বলেছেন, যে ব্যক্তি রমজানে ১০ দিন ইতেকাফ করে, তা দুই হজ ও দুই ওমরার সওয়াবের সমান। ইতেকাফকারী গুনাহ থেকে বিরত থাকে। তাকে সব নেক কাজের কর্মী বিবেচনা করে বহু সওয়াব দেয়া হবে।’

ইতেকাফ সুন্নাত। রমজানের শেষ দশ রাত্রে লাইলাতুল কদর অনে¦ষণে ইতেকাফ করার বিধান চালু হয়েছে। কিন্তু ইতেকাফের মান্নত করলে তা পালন করা ওয়াজিব হবে। রমজান ছাড়াও যেকোনো সময় মসজিদে অনির্ধারিত সময়ব্যাপী ইতেকাফ করা যায়। পবিত্র কোরআন মজিদে আল্লাহ বলেছেন, ‘আমার ঘরকে তাওয়াফ ও ইতেকাফকারীদের জন্য পবিত্র রাখো।’

রাসুল সা. রমজানে ১০ দিন ইতেকাফ করতেন। তবে ইন্তেকালের বছর তিনি ২০ দিন ইতেকাফ করেন। হজরত আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, রাসুল সা. আমৃত্যু রমজানের শেষ দশকে ইতেকাফ করতেন।

আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সা. বলেন: ‘যে মসজিদে জামাত হয় সে মসজিদ ছাড়া ইতেকাফ হবে না। মূলকথা, ইতেকাফ যত নির্জন হয় এবং লোকজনের সাথে মেলামেশা যত কম হয় ততই ভালো। ইতেকাফকারী আল্লাহর কাছে নীরবে একাকী দোয়া ও কান্নাকাটি করবে এবং ইবাদত করবে।

ইতেকাফের মোস্তাহাব বিষয় হচ্ছে, বেশি বেশি নামাজ পড়া, কোরআন তেলাওয়াত, অর্থ ও ব্যাখ্যাসহ তাফসির পড়া এবং ইসলামি বইপুস্তক পড়া অর্থাৎ দীনি এলেম অর্জন করা। বেহুদা কথা ও কাজ থেকে বিরত থাকা। ঝগড়াঝাটি এবং গাল-মন্দ না করা। মসজিদের একটি অংশে অবস্থান করা।

ইতেকাফকারীর জরুরি কাজের জন্য মসজিদের বাইরে যাওয়া জায়েজ আছে। আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: ইতেকাফকারীর জন্য সুন্নাত হলো রোগী দেখতে না যাওয়া, জানাজায় অংশ গ্রহণ না করা, স্ত্রী সহবাস না করা এবং খুব বেশি প্রয়োজন না হলে মসজিদ থেকে বের না হওয়া।

ইতেকাফের বিরাট সওয়াব ও মর্যাদা লাভ করার জন্য সবারই সচেষ্ট হওয়া দরকার। বিশেষ করে তা মসজিদে, রমজানে এবং রমজানের শেষ দশকে হলে এর মর্যাদা বহু বহু গুণ বেশি।

লেখক: ধর্মীয় নিবন্ধকার

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
জুলাই উইমেন্স ডে উপলক্ষে জনতা ব্যাংকের আলোচনা সভা
সিরাজগঞ্জে পৃথক স্থান থেকে দুই যুবকের মরদেহ উদ্ধার
জাতীয় পার্টি আর ভাঙবেন না, বাবাকে আর অপমান করবেন না: এরিক এরশাদ
মোহাম্মদপুরে পুলিশের বিশেষ অভিযান, পেশাদার মাদক কারবারিসহ ৩৫ জন গ্রেপ্তার
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা