স্ত্রীকে হত্যা করে আত্মহত্যা বলে চালানো বেলালকে ধরল পিবিআই

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ১২ জুন ২০১৯, ২৩:৫৩
অ- অ+

চারমাস আগে নিজের স্ত্রীকে হত্যা করে তা আত্মহত্যা বলে প্রচার করেছিল বেলাল মিয়া। কিন্তু নিহত পোষাক শ্রমিক শম্পা পরকীয়ায় জড়িয়েছেন এমন সন্দেহ থেকে দুইজনের মধ্যে ঝগড়ার একপর্যায়ে ওড়না দিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করেন বেলাল।

পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) তদন্তে বের হয়ে এসেছে এই তথ্য। বুধবার স্ত্রীকে হত্যার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন বেলাল মিয়া।

মঙ্গলবার ভোরে গাইবান্ধার সাদুল্যাপুরের নিজ বাড়ি থেকে বেলালকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। গ্রেপ্তারের পর পিবিআইয়ের কাছে স্ত্রীকে খুনের বর্ণনা দিয়েছেন তিনি।

চলতি বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় ঢাকার আশুলিয়ার দুর্গাপুরে নিজ বাসায় খাটের ওপর থেকে শম্পার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনার পরদিন শম্পার চাচা সাইদুল মণ্ডল বাদী হয়ে বেলাল মিয়ার বিরুদ্ধে আশুলিয়া থানায় হত্যা মামলা করেন। থানা পুলিশ মামলার কোনো কূলকিনারা করতে না পারায় ১২ মার্চ মামলাটি পিবিআইতে স্থানান্তর করা হয়।

পিবিআই জানায়, শম্পা ছিলেন বেলালের খালাতো বোন। পারিবারিকভাবে তাদের বিয়ে হয়। ঢাকার আশুলিয়ার ওই বাসায় তারা দেড় বছর ধরে থাকতেন। শম্পা একটি পোশাক কারখানায় এবং বেলাল মিয়া একটি ব্যাগ তৈরির কারখানায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। তাদের পাঁচ বছর বয়সী মেয়ে তামান্না গ্রামের বাড়ি থাকতো।

বিয়ের পর থেকে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মনোমালিন্য চলে আসছিল। এর জের ধরে বেলাল স্ত্রীকে হত্যা করেছেন বলে নিহতের চাচা মামলার এজাহারে উল্লেখ করেছেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের ঢাকা জেলার (উত্তর) এসআই সালেহ ইমরান ঢাকাটাইমসকে বলেন, মামলাটি হাতে আসার পর কয়েকবার মোবাইলে বেলালের সঙ্গে আমার কথা হয়। কিন্তু প্রতিবারই কৌশলে তিনি বোঝাতে চাইতেন শম্পা আত্মহত্যা করেছেন। বেলাল জানান ঘটনার দিন শম্পা গার্মেন্টসের পিকনিকে গিয়েছেন। কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানতে পারি ওই দিন পিকনিকে যাননি শম্পা। পরে অনেক চেষ্টা করে বেলালকে গ্রেপ্তার করা হয়।

জিজ্ঞাসাবাদে বেলাল প্রথমে জানান কারখানা থেকে এসে শম্পাকে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলতে দেখেন। পরে তাকে দ্রুত নিচে নামিয়ে শাশুড়িকে ফোনে বিষয়টি জানান। কিন্তু পরে জেরার মুখে বেলাল হত্যার কথা স্বীকার করেন। শম্পা পরকীয়ায় জড়িয়েছেন এমন সন্দেহ থেকে দুইজনের মধ্যে ঝগড়ার একপর্যায়ে ওড়না দিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করেন বেলাল।

সালেহ ইমরান বলেন, বেলাল শুরু থেকে ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে এটিকে আত্মহত্যা বলে প্রচার করেন। এমনকি ঢাকা থেকে ময়নাতদন্ত শেষে স্ত্রীর মরদেহ বাড়ি নিয়ে সঙ্গে সঙ্গে দাফন করে দেন। ঘটনার একদিন পর ১৭ ফেব্রুয়ারি নিহতের চাচা শহীদুল মন্ডল বেলাল মিয়াকে আসামি করে মামলা করেন। এ অবস্থায় আত্মগোপনে চলে যান বেলাল।

স্বীকারোক্তিতে বেলাল জানিয়েছেন, শম্পার বড় বোনের স্বামী মিরাজের সঙ্গে অবৈধ সম্পর্ক আছে এমন সন্দেহ থেকে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মনোমালিন্য হয়। ঘটনার দিন মিরাজ তাদের বাসায় আসায় ক্ষুব্ধ হয়ে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে স্ত্রীকে হত্যা করেন। ঘটনার পর বেলাল আত্মীয়-স্বজনকে ফোন দিয়ে জানান কথা কাটাকাটির পর তার অনুপস্থিতিতে গলায় ফাঁস দিয়েছেন শম্পা।

এদিকে নিহত শম্পার বাবা হত্যা মামলাটি আর চালাতে রাজি ছিলেন না। শম্পার বাবার ভাষ্য, মামলা চালানোর সামর্থ্য নেই। পাশাপাশি বেলালের সঙ্গে তার পরিবারের মীমাংসা হয়েছে। মেয়ে তামান্নার নামে ১০ শতাংশ জমি লিখে দিয়েছেন বেলাল।

পিবিআইয়ের এসআই সালেহ ইমরান বলেন, ঘটনার পর থেকে এটিতে আত্মহত্যা বলে এসেছেন বেলাল। শম্পার পরিবারও এটিকে আত্মহত্যা বলে বিশ্বাস করেছে। তবে আসামি গ্রেপ্তারের পর হত্যার কথা স্বীকার করায় এখন বিচার চাচ্ছে শম্পার পরিবার।

(ঢাকাটাইমস/১২জুন/বিইউ/ইএস)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
সুনামগঞ্জ সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি নিহত
মিটফোর্ড হত্যার বিচার দ্রুততম সময়ে হবে: আইন উপদেষ্টা
সিলেট বিভাগের ১৯ আসনে প্রার্থী ঘোষণা খেলাফত মজলিসের
সমুদ্র অভিযানে সাহসিকতার জন্য আইএমওর প্রশংসাপত্র পেল কোস্ট গার্ড
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা