সাক্ষাৎকারে র‌্যাব-১ অধিনায়ক

গ্যাং কালচার: অভিভাবকরা সতর্ক হোন

সিরাজুম সালেকীন, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ২৯ জুলাই ২০১৯, ০৯:৪০
অ- অ+

ঢাকায় উপদ্রপ হয়ে দাঁড়ানো গ্যাং কালচারের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। র‌্যাবের র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল সারওয়ার-বিন-কাশেম বলছেন, বাবা মাকে তাদের সন্তানদের দেখভাল করে রাখতে হবে। কারণ, তাদের ছেলেরা ফাঁদে পড়ছে। অপরাধে জড়িয়ে পড়া গোষ্ঠী নানাভাবে তাদের প্রলুব্ধ করে দলে টানছে। আর একবার দলের সদস্য হয়ে গেলে ফিরে আসা কঠিন।

তরুণদের মধ্যে এই প্রবণতা কেন গড়ে উঠছে?

‘গ্যাং কালচারের কারণ এলাকায় আধিপত্য বিস্তার। তাছাড়া প্রেমঘটিত বিষয়ে নিজেকে হিরো দেখাতে গিয়েও বড় ধরনের অপরাধ করছে। পাড়া মহল্লায় একটা গ্যাং থেকে আরেকটা গ্যাং কীভাবে হবে সেটার নিয়েও চলে দ্বন্দ্ব। ছোট ছোট ছেলেদের দিয়ে গড়ে তোলা হচ্ছে এসব গ্যাং। তাদের দলনেতা অধিকাংশ স্বল্পশিক্ষিত। দেখা গেছে অনেকে একসময় বাস-ট্রাকের চালক ও হেলপার ছিল। কেউ বা ছিনতাইকারি ছিল। এখন মাস্তান হয়ে গেছে। নিজেদের নেতা বানাতে তৈরি করেছে গ্যাং। কম বয়সী স্কুল-কলেজ পড়–য়াদের ভেড়াচ্ছে সেই দলে। অনেক ভালো পরিবারের ছেলেরা অভিযানে ধরা পড়ছে।

কীভাবে দলে ভেড়াচ্ছে?

গ্যাং নেতাদের গ্রেপ্তারের পর তারা জানিয়েছে, শিক্ষার্থীদের প্রথমে মাদকের ছোঁয়ায় প্রলোভিত করে। পরে মোবাইলে প্রাপ্তবয়স্কদের নানা জিনিস দেখানো হয়। এরপর অস্ত্র দেখিয়ে হাতের হাতে দেওয়া হয়। বোঝানো হয় তারা এখন থেকে নায়ক। এতে কিশোররা বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করে। মেধাবী কিশোরদের চাপে ফেলে জোর করে তাদের দলে টানছে।

কীভাবে তারা নিজেদের জানান দিচ্ছে?

প্রতিটি গ্রুপের নিজস্ব লোগো রয়েছে। যা তারা দেয়াল লিখন ও ফেসবুকে ব্যবহার করে। মূলত পশ্চিমা চলচ্চিত্র অনুসরণ করে তারা গ্যাং চালাত এবং সেসব সিনেমা বেশি দেখত। সম্প্রতি পিএসবি নামে একটা গ্রুপকে ধরা হয়েছে। ডান্স মাস্টার হিসেবে পরিচয় দিলেও ড্যান্স বিষয়ে কোনো প্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞান নেই। তারা মূলত নাচের প্রশিক্ষণের একাডেমিক খুলে ‘ড্যান্স’-এর কথা বলে ‘গ্যাং’য়ে আকৃষ্ট করছিল।

র‌্যাব ছাড়া আর কারা অভিযান চালাচ্ছে?

আমরা চেষ্টা করছি এখান থেকে তাদের সরানোর। র‌্যাবের পাশাপাশি ডিবি, পুলিশসহ প্রতিটি বাহিনী কাজ করছে। যতটুকু জানি পুলিশ বেশ কয়েকটি সুন্দর সুন্দর কাজ করছে। বিশেষ করে স্কুল-কলেজ থেকে যারা বেরিয়ে আসছে তাদের বুঝিয়ে শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে ফিরিয়ে দিয়ে আসছে। যারা এরই মধ্যে অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে তাদের গ্রেপ্তার করে আইনের হাতে সোপর্দ করছি। এছাড়া র‌্যাবের ওয়েবসাইট ও রিপোর্ট-টু র‌্যাব নামক অ্যাপসের মাধ্যমেও কিশোর গ্যাং সংক্রান্ত তথ্য র‌্যাবকে জানানো যাবে।

কী ধরণের অস্ত্র তাদের কাছে মিলছে?

কিশোর গ্যাং যখন মাদকের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে, তখনই সেখানে অস্ত্র চলে আসে। এর সঙ্গে হত্যা এবং ধর্ষণের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছে। সম্প্রতি ১১ জনকে গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে দুটি শর্টগান, চারটি গুলি ও দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। গ্যাংয়ের সদস্যরা সব ধরনের জঘন্য অপরাধ কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে যাচ্ছে। এজন্য অভিভাবকদের সক্রিয় এবং সচেতন হয়ে সন্তানদের খোঁজ খবর রাখার আহ্বান করছি।

উপায় কী?

তাদের অপরাধের গণ্ডি বড় হচ্ছে। এটা সমাজের জন্য খুবই উদ্বেগজনক। অভিযান চালানো হচ্ছে। র‌্যাবের পক্ষ থেকে সুধী সমাজ, অভিভাবক এবং শিক্ষকদের একটি বার্তা দেয়া হচ্ছে যে- আপনারা সবাই এখনই কিশোর গ্যাং প্রতিরোধে এগিয়ে আসুন। গ্যাং কালচার থেকে বেরিয়ে অন্য কিছুতে কিশোরদের নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে আপনারা উদ্যোগী হন। কিশোরদের বই পড়াতে উৎসাহিত করা যায়, শরীর গঠনের জন্য জিম কালচার, অথবা খেলাধুলার জায়াগায় তাদের আরও বেশি সম্পৃক্ত করা যেতে পারে।

ঢাকাটাইমস/২৯জুলাই/এসএস/এমআর

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
পল্লীবন্ধু এরশাদ চিরকাল মানুষের হৃদয়ে কণক প্রদীপ হয়ে জ্বলবেন
চাঁদা না দেওয়ায় পল্লবীতে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে সন্ত্রাসী হামলা, গুলিবর্ষণ: গ্রেপ্তার ৩
ছন্দে ফিরলেন লিটন, সমতায় ফিরল টাইগাররা
১২ দিনে রেমিট্যান্স এলো ১০৭ কোটি মার্কিন ডলার
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা