চামড়ার অবিশ্বাস্য দরপতন, মাটিতে পুঁতে প্রতিবাদ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ১৩ আগস্ট ২০১৯, ২১:২৮| আপডেট : ১৩ আগস্ট ২০১৯, ২২:১৪
অ- অ+
সুনামগঞ্জে একটি মাদ্রাসার ৯০০ চামড়া মাটিতে পুঁতে ফেলা হয়

কোরবানির পশুর চামড়ার দাম আগে কখনো এতটা কম ছিল এমনটা স্মরণ করতে পারছে না কেউই। গত কয়েক বছর ধরেই চামড়ার দর কম, তবে এবারের বিষয়টি অনেকের কাছে অবিশ্বাস্য। একটি লাখ টাকার গরুর চামড়া ২০০ থেকে ৪০০ টাকা বিক্রির উদাহরণ নিকট-অতীতে আর নেই।

অবিশ্বাস্য এই দরপতনে ক্ষুব্ধ হয়ে প্রতিবাদস্বরূপ অনেকে চামড়া মাটিতে পুঁতে রাখছেন। কেউ কেউ ময়লার ভাগাড়ে ফেলে দিয়েছেন।

চামড়ার মৌসুমি ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, সিন্ডিকেট করে কাঁচা চামড়ার দাম কমানো হচ্ছে। অন্যদিকে আড়তদাররা বলছেন, চামড়া কেনার পুঁজিই নেই তাদের। এজন্য তারা চামড়া কিনছেন না।

আর ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন বলছে, তারা আরও ১০ দিন পরে চামড়া কিনবেন। এখন যা হচ্ছে এর সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততা নেই।

এবার ঢাকায় প্রতি বর্গফুট গরুর কাঁচা চামড়া ৪৫ থেকে ৫০ টাকা, ঢাকার বাইরে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা; খাসির কাঁচা চামড়া সারাদেশে ১৮ থেকে ২০ এবং বকরির চামড়ার দাম ১৩ থেকে ১৫ টাকা নির্ধারণ করে দেয় সরকার৷ তবে ওই দামে কোথাও চামড়া বিক্রি হয়নি৷

সোমবার ঈদের দিন চামড়ার ক্রেতা ছিল অনেক কম। আর যেসব মৌসুমি ব্যবসায়ী চামড়া সংগ্রহ করেন তারাও অনেক কম দাম হাঁকেন। তাদের দাম শুনে অনেকে ক্ষুব্ধ হন। দিন শেষে অল্প দামে কেনার পরও প্রতি চামড়া কয়েকশ টাকা করে লোকসান গুনতে হচ্ছে বলে দাবি করেছেন ব্যবসায়ীরা।

৯০০ চামড়া মাটিতে পুঁতে প্রতিবাদ

সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলায় একটি মাদ্রাসার সংগ্রহ করা ৯০০ পশুর চামড়া মাটিতে পুঁতে ফেলা হয়েছে। এর একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।

মঙ্গলবার উপজেলার সৈয়দপুর-শাহারপাড়া ইউনিয়নের সৈয়দপুর হোসাইনিয়া হাফিজিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসার সামনে এসব চামড়া পুঁতে ফেলা হয়।

জানা যায়, প্রতি বছরের মতো এবারও ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম থেকে ঈদের দিন ওই মাদ্রাসার পক্ষে কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহ করা হয়। মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষে চামড়া বিক্রির জন্য দিনভর অপেক্ষা করেও তা বিক্রি করতে পারেননি। ক্ষোভে মঙ্গলবার বিকালে ওইসব চামড়া মাদ্রাসা পাশে মাটিতে পুঁতে দেয় কর্তৃপক্ষ।

মাদ্রাসাটির পরিচালক হাফেজ মাওলানা সৈয়দ ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘চামড়া কিনতে আসেনি কেউ। বাধ্য হয়ে চামড়াগুলো মাটিতে পুঁতে ফেলা হয়েছে।’ চামড়াগুলো সংগ্রহে এবং চামড়ায় লবণ ব্যবহারে ৫০ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে বলে জানান তিনি।

শুধু সৈয়দপুরেই নয়, সিলেট, চট্টগ্রাম, দিনাজপুরসহ দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে খবর পাওয়া গেছে, সেখানেও চামড়ার মূল্য না পেয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে অনেকে তা মাটিতে পুঁতে রাখেন। কোথাও কোথাও আবর্জনার ভাগাড়ে ফেলে দেয়া হচ্ছে।

কী বলছেন ব্যবসায়ী ও ট্যানারি মালিকরা

ব্যবসায়ীরা জানান, গত ছয় বছর ধরে কোরবানির চামড়ার দাম প্রতিনিয়ত কমছে। ২০১৪ সালে একটি গরুর চামড়ার পিস বিক্রি হয় দেড় হাজার টাকায়। খাসির পিস ছিল ১২০ টাকা। পরের দুই বছরে গরুর চামড়ার দাম নেমে আসে হাজারের আশপাশে। ২০১৭ সালে সাভারে ট্যানারি স্থানান্তর শুরু হলে বাজার আরও নিম্নমুখী হয়।

তাদের দাবি, এভাবে চললে কয়েক বছরের মধ্যে দেশীয় চামড়ার বাজার দখল করে নেবে বিদেশিরা।

ট্যানারি মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহীন আহমেদ জানান, আরও ১০ দিন পর থেকে চামড়া কেনা শুরু করবেন তারা৷ মঙ্গলবার গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘কিছু মধ্যসত্বভোগী সস্তায় চামড়া কিনছে৷ ঈদের সময় কয়েক দিন এদের দৌরাত্ম থাকে, তবে সরকারের বেঁধে দেওয়া দামেই এরা আমাদের কাছে চামড়া বিক্রি করে, মাঝেমধ্যে একটু বেশি দামও দিতে হয়।’

‘ট্যানারি মালিকরা চামড়া কেনা শুরু না করা পর্যন্ত এই অস্থিতিশীলতা থাকে৷ মৌসুমী ব্যবসায়ীরা এক-দুই দিনের মধ্যে তাদের পুঁজি নিয়ে বের হয়ে যেতে চান, আর তখনই মধ্যসত্বভোগীরা সুযোগ নেয়।’

এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে বাজার ব্যবস্থাপনা ঠিক করার তাগিদ দিয়ে শাহীন বলেন, ‘যুগ যুগ ধরে চলা চামড়া সংগ্রহ প্রক্রিয়া উন্নত করতে হবে৷ বিভাগীয় শহর ও বড় বড় শহরে কোল্ডস্টোরেজ স্থাপন এবং চামড়া সংক্ষরণের ব্যবস্থাপনা উন্নত করতে হবে৷ দেশ এগোলেও চামড়া সংগ্রহের প্রক্রিয়া এখনো প্রাচীনযুগের মতো রয়ে গেছে, এটাকে ডেভেলপ করলে এই যে ব্লেইম গেইম- ট্যানারি মালিকরা চামড়া কিনছেন না, দামও দিচ্ছে না, এগুলো আসত না৷ এসব নিয়ে আমরা শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব দিয়েছি।’

সরকারের উদ্যোগ

এদিকে চামড়ার উপযুক্ত দাম নিশ্চিত করতে কাঁচা চামড়া রপ্তানির অনুমতি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এতদিন রপ্তানি নীতি আদেশ অনুযায়ী, বাংলাদেশ থেকে কাঁচা চামড়া রপ্তানি নিষিদ্ধ ছিল।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্ধারিত মূল্যে কাঁচা চামড়া কেনাবেচা নিশ্চিত করতে ব্যবসায়ীদের সহযোগিতাও চেয়েছে সরকার।

মঙ্গলবার বিকালে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নির্ধারিত মূল্যে কোরবানির পশুর চামড়া ক্রয়-বিক্রয় হচ্ছে না। এ বিষয়ে চামড়া শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যবসায়ীদের দায়িত্বশীল হওয়ার আহ্বান জানানো হচ্ছে।

কাঁচা চামড়ার গুণাগুণ যাতে নষ্ট না হয়, সেজন্য স্থানীয়ভাবে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে চামড়া সংরক্ষণের জন্যও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ব্যবসায়ী ও স্থানীয় প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে।

কাঁচা চামড়া রপ্তানির পথ খুলে দিলে চামড়ার দাম কিছুটা বাড়বে জানিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মফিজুল ইসলাম বার্তা সংস্থা ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘আমরা চিন্তাভাবনা করছি কাঁচা চামড়া রপ্তানি করার অনুমতি দেবো৷ এটা হলে আশা করছি দামটা আরেকটু বাড়বে৷ পাশাপাশি দেশীয় শিল্প যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেদিকেও আমরা লক্ষ্য রাখছি।’

কবে সেই অনুমতি দেওয়া হবে জানতে চাইলে বাণিজ্য সচিব বলেন, ‘উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা করেছি, আমরা হয়ত রপ্তানির অনুমোদন দেব, কালকে (বুধবার) অফিস খুললে চামড়াখাতের সঙ্গে জড়িতদের নিয়ে বৈঠক করে কাঁচা চামড়া রপ্তানির অনুমতির ঘোষণা দেওয়া হবে।’

(ঢাকাটাইমস/১৩আগস্ট/জেবি)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
পাকিস্তানে বৃষ্টি ও বন্যায় ১১০ জনের প্রাণহানি
এআই দিয়ে তৈরি ভিডিও নিয়ে ইউটিউবের নতুন নীতিমালা
এবার এনসিপির ‘কলম’ ও ‘মোবাইল ফোন’ মার্কা নিয়ে টানাটানি
সৌদিতে বিদেশি পর্যটক ও ভ্রমণকারীদের জন্য নতুন ড্রাইভিং নির্দেশনা
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা