সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশনে ময়লার বদলে বসতি

নজরুল ইসলাম, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১০:৫৯| আপডেট : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১৩:১১
অ- অ+

শুক্রবার দুপুর ১২টা। চুলোয় ভাতের হাঁড়ি বসিয়ে সবজি কাটছেন এক নারী। পাশে এক শিশু মাটি দিয়ে খেলছে। আরেকজন বিছানায় শুয়ে মমতাজের গান শুনছে। ইস্কাটন গার্ডেন রোডের (পুরাতন এলিফেন্ট রোড) সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশনের বর্তমান চিত্র এটি।

অথচ এই স্টেশন ঘরে জমা হওয়ার কথা বিভিন্ন স্থান থেকে আনা ময়লা-আবর্জনা। সেই ময়লা-আবর্জনা আসছে ঠিকই, কিন্তু ফেলা হচ্ছে স্টেশনের বাইরে রাস্তায়, ফুটপাতে। ফলে পরিবেশের দূষিত ও নোংরা হচ্ছে, পথচারীদের জায়গাটি পার হতে হয়ে নাক চেপে।

প্রায় তিন বছর আগে শহরের গুরুত্বপূর্ণ এই স্থানে আড়াই কাটা জায়গা নিয়ে এই সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন তৈরির কাজ শুরু করে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। এর পাশেই বিটিসিএলসহ সরকারি নানা দপ্তরের অফিস, বেসরকারি ভবনের অবস্থান। এই সড়কে আছে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়, পুলিশ কনভেনশন সেন্টার, মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর, সরকারি বড় বড় প্রকল্পের অফিস, আন্তর্জাতিক নানা দপ্তরসহ সরকারি কর্মকর্তাদের আবাসিক এলাকা।

এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে মাসের পর মাস অসমাপÍ ফেলে রাখা হয়েছে সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন। টাইলস করা সুদৃশ্য এই স্টেশনে যেটুকু কাজ শেষ হয়েছে তাতে অনায়াসে এটি ব্যবহার করা যেতে পারে বলে জানায় সেখানকার লোকজন।

জানা গেছে, ডিএনসিসির এই ট্রান্সফার স্টেশন সাময়িকভাবে ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল একাধিকবার। কিন্তু পুরোপুরি কাজ শেষ না করার অজুহাতসহ বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে সেটা পিছিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ডিএনসিসির উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আন্তরিকতার অভাবে এটি উদ্বোধন সম্ভব হচ্ছে না বলেও অভিযোগ রয়েছে।

ডিএনসিসির এই অবহেলায় সেখানে ময়লা-আবর্জনার বদলে স্থায়ী বসতি গড়ে তুলছে সিটি করপোরেশনের কয়েকজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী। পাশাপাশি ডিএনসিসির নির্মাণ সরঞ্জাম রাখার স্থায়ী জায়গা বানিয়ে ফেলেছে। আর সেগুলো পাহারা দেওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষ বেতন দিয়ে রেখেছে একজন নিরাপত্তাকর্মী।

সরেজমিনে দেখা যায়, সেখানে রাখা আছে রড, কাঠ, বাঁশ, ইট-সুরকি, লোহার পাটাতন। এসব মালামাল বহনকারী একটি পিকআপ। মালামাল পাহারা দেওয়ার জন্য নিরাপত্তাকর্মীর জন্য টিন-কাঠের তৈরি একটি ঝুপড়ি ঘর। আর সেখানে বসবাসকারী কয়েকজন পরিচ্ছন্নতাকর্মীর বিভিন্ন জিনিসপত্র।

ট্রান্সফার স্টেশনের ভেতরে অনেক দিন থেকে বসবাস করছেন পরিচ্ছন্নতাকর্মী ফাতেমা। তার কাছ থেকে জানা যায়, এটার কাজ শুরু হয়েছে তিন বছর দুই মাস আগে। অল্প কিছু কাজ বাকি আছে। তবে কয়েকবার চেষ্টা করা হয়েছে এখানে ময়লা ফেলা শুরু করার। কিন্তু শেষমেশ তা হয়নি।

ফাতেমার সঙ্গে কথা বলা শেষ হওয়ার আগেই আরেক পরিচ্ছন্নতাকর্মী জানান, এটি ব্যবহার না হওয়ায় তারা এখানে থাকছেন। কাজ শুরু হলে চলে যাবেন।

রাস্তার দক্ষিণ পাশের ফুটপাতসহ পুরো অংশ জুড়ে সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন করা হয়েছে। এর পেছনে দেয়াল ঘেঁষে ফুটপাতের মতো জায়গা রাখা হয়েছে। সেটি পথচারী চলাচলের জন্য রাখা হয়েছে কি না বোঝা দায়।

সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশনে ময়লা ফেলা না হলেও তার সামনের রাস্তায় দুটি ডাস্টবিনে দীর্ঘদিন থেকে ময়লা-আবর্জনা ফেলে আসছে ডিএনসিসি। ফলে এই সড়কটি ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। ডাস্টবিন ভরে ময়লা পড়ছে মূল সড়ক আর ফুটপাতে। পথচারীরা বাধ্য হয়ে অনেকটা সড়কের মাঝখান দিয়ে নাকমুখ চেপে চলাচল করেন।

সড়কে পড়ে থাকা ময়লা-আবর্জনার মধ্যে রয়েছে ককশিট, ডাবের খোসা, চিপসের প্যাকেট, বোতলসহ নানা ধরনের মাটির হাঁড়িও। সেগুলোতে জমে আছে পানি, যা ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশার বংশবিস্তারে সহায়ক হতে পারে।

এই সড়কের সামনে দিয়ে নাকে হাত দিয়ে যাচ্ছিলেন ইস্কাটন গার্ডেন রোডের ফিরোজ হোসেন। তিনি বলেন, ‘অনেক দিন আগে থেকে দেখছি সিটি করপোরেশন ময়লা ফেলার জন্য বড় একটা ঘর করছে। কিন্তু ময়লা সেই আগের মতো রাস্তায় ফেলছে। ঘর তৈরি হওয়ার পরও কেন রাস্তায় তারা ময়লা ফেলছে বুঝতে পারছি না।’

ইস্কাটন গার্ডেন রোড এলাকাটি দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের আওতায়। বিষয়টি নিয়ে কথা বলার জন্য ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মুন্সি কামরুজ্জামানের মোবাইল ফোনে একাধিকবার চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি। একপর্যায়ে ফোনটি বন্ধ করে দেন।

কথা হয় দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা এয়ার কমোডর মো. জাহিদ হোসেনের সঙ্গে। এটির কাজ প্রায় শেষের দিকে বলে জানান তিনি। ঢাকা টাইমসকে তিনি বলেন, ‘সামান্য একটু কাজ বাকি আছে, সেটা হলেই চালু করা হবে এটি।’ এটির কাজে বিলম্বের জন্য ঠিকাদারের গাফিলতিকে দায়ী করেন প্রধান বর্জ কর্মকর্তা।

(ঢাকাটাইমস/১৪সেপ্টেম্বর/মোআ)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
মিটফোর্ড হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত অপরাধীদের চিহ্নিত করার দাবি মির্জা ফখরুলের
পুরান ঢাকায় ব্যবসায়ী হত্যা: টিটন গাজী পাঁচ দিনের রিমান্ডে
গণহত্যা মামলায় শর্তসাপেক্ষে রাজসাক্ষী মামুনকে ক্ষমা, পূর্ণাঙ্গ আদেশ প্রকাশ
ইংরেজি ভাষা আয়ত্তের বিকল্প নেই: এডাস্ট চেয়ারম্যান
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা