ওসির স্ট্যাটাসে কপাল খুলল ঝালমুড়ি বিক্রেতার

আমিনুল হক সাদী, কিশোরগঞ্জ
 | প্রকাশিত : ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০৯:৩০

কিশোরগঞ্জের মিঠামইন থানার ওসি জাকির রব্বানী তার ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন- ‘ভব সংসার মায়াজাল’। এ পোস্টটি পড়ে মিঠামইনের ঝালমুড়ি বিক্রেতা ফিরোজের পাশে দাঁড়ান করিমগঞ্জের সন্তান শিল্পপতি এরশাদ উদ্দিন। তিনি ফিরোজকে ১০,০০০ টাকা দেন। সেই অর্থ সবার উপস্থিতিতে মিঠামইন থানার ওসি জাকির রব্বানী ইসলামপুর গ্রামের খেঁটে খাওয়া ফিরোজ মিয়ার হাতে তুলে দেন।

ওসি জাকির রব্বানী ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘সেদিন ছিল মিঠামইন বাজারের হাটবার। রাস্তার পাশে দোকানে পসরা সাজিয়ে কেনাবেচায় সŸাই ব্যস্ত। যতটুকু ফাঁকা রাস্তা আছে, গা ঘেষাঘেষি করে ভিড় ঠেলে যাতায়াত করছে। আমি ও ঠিক সেভাবে যাচ্ছিলাম। পোস্ট অফিসের সামনে কিছুটা ফাঁকা। হঠাৎ একটি লাথি মারার শব্দ পেলাম। পেছনে তাকিয়ে দেখি ছোট একটি ছেলে শিশু বয়স দেড়/দুই বছর হবে তাকে একটি লোক ফুটবলের মতো লাথি দিয়ে ৪/৫ ফুট দূরে ফেলে দিয়েছে। শিশুটির দূরাবস্থা দেখে ও কান্না শুনে মায়াদার লোকজন সহ্য করতে না পেরে লোকটিকে আক্রমণ করে উত্তমমাধ্যম দিতে লাগল। আমি ততক্ষলে উত্তেজিত লোকজনের কবল থেকে মুক্ত করে শিশুটিকে মারার কারণ জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন, বাচ্চাটি তার। ভ্যানে করে ছোলা, মুড়ি, বিস্কুট ইত্যাদি বিক্রি করে সংসার চালান। ছেলেকে বারবার মানা করার পরও রিকশা ভ্যানের চেইনে হাত দেয়। বারবার তার প্রতি নজর দিতে হয়। ফলে বেচাকেনায় অসুবিধা হয়। তাই রাগে ছেলেকে লাথি মারছে। আমি বললাম, শিশুকে নির্যাতন করা অপরাধ। আইনবিরোধী কাজ। লোকটি বলল, স্যার! আমি এ দুইটি বাচ্চা নিয়ে অনেক কষ্টে আছি। আমার বৌ নাই। বাচ্চারা মা-হারা। আমার পাশে কেউ নাই। ভ্যানে তাকিয়ে দেখি, পেছনে মালামালের মধ্যে একটি বাচ্চা ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে বসে আছে। লাথি মারা বাচ্চাটিকে লোকটি কোলে তোলে নিল। বাচ্চার কান্না থামিয়ে দিল। বললাম, বাচ্চাদের মা কি মারা গেছে। বলল না। এক বছর আগে তাকে ত্যাগ করে অন্যের সাথে চলে গেছে। জড়ো হওয়া লোকজন বলছিল, ওকে উচিত শিক্ষা দিতে। কিন্তু আমি পারি নাই। মায়ের আদর স্নেহ হতে বঞ্চিত শিশু দুটিকে কত কষ্ট করে লালন-পালন করছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তাকে আবার কি শিক্ষা দেব! তার কাছে আমার অনেক শেখার আছে। যার নেই কোন ঘরবাড়ি, নেই কোন রোজগারের ভালো কিছু, নেই পাশে স্বজন। নেই কোন সংসার। পরনের নেই জামাকাপড়। এই ভবের সংসারে মায়ার টানে ঘানি টানতে টানতে কোনরকম খেয়ে না খেয়ে ছেলে দুটোকে বড় করছে- সে জন্য ধন্যবাদই পায়। পরিশেষে জীবনযুদ্ধে সংগ্রামী পুরুষটিকে বললাম, শত কষ্ট হলেও আর কখনো যেন বাচ্চাকে নির্যাতন না করে। তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এ বিষয়টি ফেসবুকে তুলে ধরায় এগিয়ে আসেন করিমগঞ্জের শিল্পপতি এরশাদ উদ্দিন।

শিল্পপতি এরশাদ উদ্দিন বলেন, ওসি জাকির রব্বানীর ফেসবুকে এমন মানবদরদী স্ট্যাটাস দেখে মনকে বুঝাতে পারিনি। খেঁটে খাওয়া ফিরোজের পাশে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে পেরে ভাল লাগছে।

ফিরোজ বলেন, ফেরি করেই চলছে এই গরিবের সংসার। আমার দুর্দিনে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়ায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।

(ঢাকাটাইমস/২৯সেপ্টেম্বর/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

দিনাজপুরে ভোট গণনার পর সংঘর্ষ, পুলিশের গুলিতে ইউপি সদস্য প্রার্থীর সমর্থক নিহত

বহিষ্কৃত প্রার্থীর পক্ষে প্রচারে অংশ নিলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে: সেলিম ভূইয়া

নোয়াখালীতে গরমে অসুস্থ এক শিক্ষক ও ১৪ শিক্ষার্থী

জয়পুরহাটে জামায়াত-শিবিরের ৬১ নেতাকর্মী কারাগারে

হিট স্ট্রোকে মাদারীপুরে ব্যবসায়ী ও কৃষকের মৃত্যু

সালথায় তীব্র গরমে অসুস্থ স্কুলের ১৩ শিক্ষক-শিক্ষার্থী 

আদালত চত্বর থেকে পালিয়ে যাওয়া আসামি ঢাকায় গ্রেপ্তার

শতকোটি ব্যয়ে রংপুরে হচ্ছে ৪৬০ বেডের ক্যানসার, কিডনি ও হৃদরোগ হাসপাতাল

তীব্র খরার পুড়ছে পাটক্ষেত, পাতালেও মিলছে না পানি! দিশেহারা কৃষক

চাঁদপুরে প্রচণ্ড গরমে অতিষ্ঠ জনজীবন

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :