অমিত শাহের বক্তব্য প্রত্যাহারের আহ্বান বিএনপির

আ.লীগ সরকার এনআরসি ইস্যু এড়িয়ে যাচ্ছে: ফখরুল

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ২২ ডিসেম্বর ২০১৯, ১৭:২৫| আপডেট : ২২ ডিসেম্বর ২০১৯, ১৯:৩৭
অ- অ+

ভারতের নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) ও জাতীয় নাগরিক নিবন্ধন (এনআরসি) নিয়ে দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন তথ্য দিয়েছেন বলে দাবি করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি। তারা এই বক্তব্য অবিলম্বে প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছে।

একই সঙ্গে এনআরসি বাংলাদেশের জন্য আরেকটি রোহিঙ্গা সংকটের সূত্রপাত করবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

আজ রবিবার বিকালে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে স্থায়ী কমিটির সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন বিএনপির মহাসচিব।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘দুই দেশের নেতারা কূটনৈতিকভাবে বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্ক এক সোনালি অধ্যায়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বলে দাবি করলেও ভারতের লোকসভায় অমিত শাহ বলেছেন বাংলাদেশে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টানরা এখনো নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।’

সিএএকে অগণতান্ত্রিক, বৈষম্যমূলক, অসাংবিধানিক ও মানবতাবিরোধী আখ্যায়িত করে সারা ভারতে এখন প্রতিবাদ চলছে। সে কথা উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘কোথাও কোথাও এই প্রতিবাদ সহিংসতায় রূপ নিয়েছে। বিশ্ব গণমাধ্যমও এ বিষয়ে সোচ্চার। এমনকি ভারতের অমুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষও এই বৈষম্যমূলক আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ করছে।’

এই অসন্তোষ কেবল ভারতের সীমান্তের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না, ক্রমান্বয়ে তা গোটা উপমহাদেশের শান্তি ও স্থিতিশীলতাকে বিনষ্ট করবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন মির্জা ফখরুল। বলেন, ‘চরমভাবে আঘাত করবে এই অঞ্চলের শান্তিপ্রিয় জনগণের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির চেতনা ও ঐতিহ্যকে। এর সুদূরপ্রসারী কুপ্রভাবের শিকার হবে জাতি, ধর্ম, বর্ণনির্বিশেষে আমাদের সবাইকে।’

বিএনপির মহাসচিব উদ্বেগ প্রকাশ করেন, ‘এই পরিস্থিতি বাংলাদেশের জন্য আর একটি রোহিঙ্গা সংকটের সূত্রপাত হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। এনআরসি উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের বর্তমান সরকার তাদের ব্যর্থ পররাষ্ট্রনীতির প্রমাণ হিসেবে যেভাবে নির্বিকার রয়েছে, তা স্পষ্টতই আমাদের জনগণ, সার্বভৌমত্ব ও রাষ্ট্রবিরোধী অবস্থান।’

মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও উগ্র বৌদ্ধদের হত্যা-নির্যাতনের মুখে দেশটির রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়ে আছে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা। তাদের মধ্যে সর্বশেষ ২০১৭ সালের আগস্টের শেষ সপ্তাহ থেকে পরবর্তী কয়েক মাসে দলে দলে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা কক্সবাজারে আশ্রয় নেয়।

ফখরুল বলেন, ‘মিয়ানমার যেমন রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে নির্যাতনের মুখে রোহিঙ্গাদের দেশহীন করে বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য করেছে, একইভাবে নাগরিকত্ব আইন ও এনআরসি জটিলতায় সংখ্যালঘু ভারতীয় মুসলিমদের অবৈধ ঘোষণা করে জোর করে বাংলাদেশে পুশ-ইন করার প্রক্রিয়া আমরা লক্ষ করছি।’

বাংলাদেশের সরকার এনআরসি বিষয়টি ভারতের অভ্যন্তরীন ইস্যু আখ্যায়িত করে এড়িয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন বিএনপির মহাসচিব। তিনি বলেন, ‘বাস্তবিক অর্থে, মিয়ানমার থেকে আগত রোহিঙ্গা শরণার্থী এবং এনআরসি ইস্যুতে ভারত থেকে সীমান্ত দিয়ে জোরপূর্বক ঢুকিয়ে দেয়া সংখ্যালঘু ভারতীয় মুসলিমদের মধ্যে কোনো মৌলিক ব্যবধান নাই।’

ভারতের সংসদে দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের বক্তব্যের সমালোচনা করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘অমিত শাহ বিএনপির সরকারের নাম উচ্চারণ করে শিষ্টাচারবহির্ভূতভাবে বলেছেন বাংলাদেশে বিএনপি ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় সেখানে ব্যাপক হারে সংখ্যালঘু নির্যাতন হয়েছে। নির্যাতনের শিকার সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায় ভারতে পালিয়ে এসেছে। এর মাধ্যমে তিনি বিএনপিকে সাম্প্রদায়িক নিপীড়নকারী দল হিসেবে চিহ্নিত করার অপচেষ্টা চালিয়েছেন।’

‘হিন্দুত্ববাদী ভারত প্রতিষ্ঠার রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ও বিএনপির কাঁধে বন্দুক রেখে মিথ্যাচারের মাধ্যমে এ অঞ্চলের রাজনীতিকে একটি অসুস্থ পরিবেশের দিকে ঠেলে দিয়েছে। অথচ এ দেশের বর্তমান সরকার এটি এড়িয়ে যাচ্ছে।’ বলেন বিএনপির মহাসচিব।

অমিত শাহ ও ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রাবীশ কুমারের বক্তব্য অসত্য, অপব্যাখ্যামূলক, একপাক্ষিক, বৈষম্যমূলক, বিভ্রান্তিকর এবং চরমভাবে প্রশ্নবিদ্ধ বলে মন্তব্য করেন ফখরুল। বলেন,‘ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্রের ওই বক্তব্য আমরা দৃঢ়তার সঙ্গে প্রত্যাখ্যান করছি।’

ঐতিহ্যগতভাবে একটি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্বব্যাপী সমাদৃত- উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, ‘জিয়াউর রহমান থেকে শুরু করে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি সরকারের সময় বরাবরই বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অক্ষুণ্ন ছিল। বিএনপির সব আমলেই তার সরকার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অটুট রাখতে সফল হয়েছে।’

‘আমরা আশা করি, দুই দেশের জনগণের বৃহত্তর স্বার্থে বাংলাদেশ ও বিএনপি সম্পর্কে ভারতীয় পার্লামেন্টে যে অসত্য বক্তব্য দেয়া হয়েছে, ভারত সরকার তা অবিলম্বে প্রত্যাহার করে নেবে এবং ভবিষ্যতে পারস্পরিক সহযোগিতা ও সহমর্মিতার লক্ষ্যে এ ধরনের বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্য প্রদানে বিরত থাকবে।’

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মহাসচিব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুরুর ওপর ছাত্রলীগ ও মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের নেতাকর্মীদের হামলার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সাদস্য ড. খন্দকার মোশারফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বেগম সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন।

(ঢাকাটাইমস/২২ডিসেম্বর/মোআ)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
ফিরতি ট্রেনযাত্রা : আজ বিক্রি হচ্ছে ৯ জুনের টিকিট
প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৪৪তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ
গাজায় এক দিনে ইসরায়েলি হামলায় ৬৭ ফিলিস্তিনি নিহত
উপদেষ্টারা ক্ষমতার লোভে পড়ে গেছে: আমিনুল হক 
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা