চীনের করোনাভাইরাস যেভাবে সারা বিশ্বে ছড়ালো

ঢাকাটাইমস ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ২৮ মার্চ ২০২০, ১৯:৩৫| আপডেট : ২৮ মার্চ ২০২০, ২১:১৯
অ- অ+

১৯৬০ সালে প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত করা হয়। বিভিন্ন ধরনের করোনাভাইরাসের মধ্যে মানুষে সংক্রমিত হয় সাতটি ভাইরাস। এই ভাইরাস বিভিন্ন প্রাণী থেকে মানুষে সংক্রমিত হয় কিন্ত এখন পর্যন্ত সংক্রমণের নির্দিষ্ট উৎস বের করা সম্ভব হয়নি।

চীনের উহানের একটি বাজার থেকে ছড়িয়ে পড়ে করোনাভাইরাস। এ সময় মার্কিন একদল বিজ্ঞানী বলেছিলেন, তারা নতুন এক ধরনের করোনাভাইরাসের সন্ধান পেয়েছেন যা বিশ্বে দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছিলেন।

একই সঙ্গে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বিশ্বে সাড়ে ছয় কোটি মানুষের প্রাণহানি ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন তারা। চীনের উহান থেকে ৩১ ডিসেম্বর ২০১৯ তারিখ থেকে যেভাবে করোনাভাইরাস সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে তার কিছু টাইমলাইনের ঘটনাপ্রবাহ দেয়া হলো।

৩১ ডিসেম্বর ২০১৯ এই দিন চীন সরকার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে উহানে নিউমোনিয়ার মতো একটি ভাইরাসে কয়েকজনের আক্রান্ত হওয়ার তথ্য নিশ্চিত করে। এক কোটি ১০ লাখ মানুষের হুবেই প্রদেশের বন্দরনগরী উহানের এই ভাইরাস শনাক্ত করতে পারেনি চীন।

আক্রান্তদের কয়েকজন হুনানের সামুদ্রিক খাবারের পাইকারি বাজারে কাজ করতেন। পরে গত ১ জানুয়ারি এই বাজার বন্ধ ঘোষণা করা হয়। দেশটির স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা এখনও এই ভাইরাস শনাক্তের কাজ করছেন। বিশ্বজুড়ে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় ১ জানুয়ারি পর্যন্ত চীনে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৪০ জন।

৫ জানুয়ারি ২০২০ চীনা কর্মকর্তারা কয়েক বছর আগের একই ধরনের করোনাভাইরাস সিভিয়ার একিউট রেসপিরেটরি সিন্ড্রোমের (সার্স) সঙ্গে এই ভাইরাসের মিল থাকার সম্ভাবনা নাকচ করে দেন। ২০০২-২০০৩ সালের দিকে চীনে সার্সের প্রকোপে অন্তত ৭৭৪ জনের প্রাণহানি ঘটে, আক্রান্ত হয় ৮ হাজারের বেশি মানুষ।

৭ জানুয়ারি ২০২০ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য বলছে, এই দিন চীনা কর্তৃপক্ষ উহানে নতুন ধরনের একটি ভাইরাস শনাক্ত করা হয়েছে বলে জানায়। এই ভাইরাস করোনাভাইরাস পরিবারের; যা সার্সের মতোই এবং আক্রান্তদের সর্দি, জ্বর, শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যাও দেখা দেয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এই ভাইরাসের নাম দেয় ২০১৯-এনসিওভি। এটি সাধারণ একটি ভাইরাস, যা সর্দি-কাশি কিংবা সংক্রমিত ব্যক্তির স্পর্শে ছড়িয়ে পড়ে।

১১ জানুয়ারি ২০২০ নতুন এই করোনাভাইরাসে প্রথম এক ব্যক্তির মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে চীন; যিনি ওই সামুদ্রিক খাবারের বাজার থেকে খাদ্যপণ্য কিনেছিলেন। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর তার শারীরিক কোনও উন্নতি ঘটেনি। ৯ জানুয়ারি সন্ধ্যায় তিনি হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান বলে জানায় চীন।

১৩ জানুয়ারি ২০২০: চীনের বাইরে প্রথমবারের মতো এই ভাইরাসে আক্রান্তের সন্ধান পাওয়া যায় থাইল্যান্ডে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, সম্প্রতি উহান থেকে থাইল্যান্ডে ফিরে আসা এক নারীর শরীরে ওই ভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া গেছে।

১৬ জানুয়ারি ২০২০ জাপানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় দেশটিতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত এক ব্যক্তির খবর নিশ্চিত করে। ওই ব্যক্তিও সম্প্রতি উহান থেকে জাপানে ফিরে এসেছেন।

১৭ জানুয়ারি ২০২০ উহানে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দ্বিতীয় ব্যক্তির মৃত্যু হয়। এই দিন যুক্তরাষ্ট্রের তিনটি বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ উহান থেকে ফিরে আসা বিমানের যাত্রীদের শরীর পরীক্ষার ঘোষণা দেয়। একই দিনে এ ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে বলে যুক্তরাষ্ট্র, নেপাল, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, ভিয়েতনাম ও তাইওয়ান নিশ্চিত করে।

২০ জানুয়ারি ২০২০ চীনে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত তৃতীয় ব্যক্তির মৃত্যু এবং ২০০ জনের বেশি মানুষের সংক্রমিত হওয়ার খবর আসে। হুবেই প্রদেশের বাইরে দেশটির রাজধানী বেইজিং ছাড়াও সাংহাই ও শেনঝেন প্রদেশেও নতুন রোগী পাওয়া যায়। ওইদিন চীনের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন চ্যানেল সিসিটিভিতে দেশটির এক বিশেষজ্ঞ বলেন, সংক্রমিত এই ভাইরাস একজন মানুষের শরীর থেকে অন্যজনের শরীরে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এই ঘোষণার পর দেশটিতে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

২২ জানুয়ারি ২০২০ চীনে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা ১৭ জনে পৌঁছে এবং সংক্রমিত হয় পাঁচ শতাধিক। ইউরোপীয় বিভিন্ন দেশ উহান থেকে ফিরে আসা বিমানের যাত্রীদের শরীর পরীক্ষা বৃদ্ধি করবে।

২৩ জানুয়ারি ২০২০ উহানে আকাশ ও রেলপথে যোগাযোগ বন্ধ ঘোষণা করা হয়। একই পদক্ষেপ নেয়া হয় হুবেই প্রদেশ, জিয়ানতাও ও চিবিতেও। ২৫ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়ার কথা থাকলেও নতুন চান্দ্রবর্ষের উদযাপন বাতিল করে বেইজিং কর্তৃপক্ষ। হুবেইয়ের বাইরে প্রথম এই ভাইরাসে একজনের প্রাণহানি ঘটে।

ওইদিন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানায়, এখনই এই ভাইরাসের মহামারি আন্তর্জাতিক পরিসরে উদ্বেগ তৈরির মতো পরিস্থিতিতে পৌঁছায়নি।

২৪ জানুয়ারি ২০২০ চীনে করোনাভাইরাসে প্রাণহানি ২৬ জনে পৌঁছায়। দেশটির সরকার ৮৩০ জনের বেশি মানুষের আক্রান্ত হওয়ার তথ্য নিশ্চিত করে। হুবেই প্রদেশের ৪ কোটি ১০ লাখ মানুষের ১৩টি শহরে ব্যাপক কড়াকড়ি আরোপ করা হয়। সাংহাইয়ের ডিজনিল্যান্ড ও আরও কিছু শহরের বিনোদন উদ্যান বন্ধ ঘোষণা করা হয়। বেইজিং বলছে, চীনের মহাপ্রাচীরের কিছু অংশ এবং দেশটির ঐতিহাসিক কিছু স্থাপনা বন্ধ করে দেয়া হয়।

২৫ জানুয়ারি ২০২০ হুবেই প্রদেশের আরও পাঁচটি শহরে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। একই দিনে হংকংয়ে ভাইরাস এমারজেন্সি জারি এবং মূল ভূখণ্ড চীন ভ্রমণে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়।

বিলম্ব হলেও আক্রান্ত রোগীদের সেবা-শুশ্রুষা এবং নতুন করে আক্রান্ত হওয়া ঠেকাতে চীন অভিনব কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। প্রথমেই তারা আক্রান্ত ও ঝুঁকিতে থাকা লোকদের আলাদা করে ফেলেছে। আক্রান্তদের চিকিৎসায় পুরাতন কোন হাসপাতাল তারা ব্যবহার করেনি। মাত্র ছয়দিনে একহাজার শয্যাবিশিষ্ট একটি হাসপাতাল তৈরি করেছে। যা বিশ্বে সবচেয়ে দ্রুত হাসপাতাল তৈরির রেকর্ড।

২০০৩ সালে সার্সে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য চীন সরকার বেইজিংয়ে শিয়াওটাংশান হাসপাতাল নির্মাণ করেছিল। এই হাসপাতাল তৈরি করা হয়েছিল সাত দিনে, যা ওই সময়ের রেকর্ড।

এছাড়া পুরাতন হাসপাতালগুলোতে শত শত আলাদা ইউনিট তৈরি করেছে তারা। উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা নাগরিকদের সরকারি ব্যবস্থাপনায় কোয়ারেন্টাইন এবং কম ঝুঁকিতে থাকা নাগরিকদের হোম কোয়ারেন্টাইনের ব্যবস্থা করেছে। চীনের নীতি এবং চীনের সরকার এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলায় অন্য সরকারের চেয়ে অনন্য। এই মুহূর্তে বিশ্বের উচিত চীনের করোনাভাইরাস মোকাবেলায় তাদের পদক্ষেপগুলো মেনে চলা।

(ঢাকাটাইমস/২৮ মার্চ/আরজেড/এজেড)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
সরকারি অনুদান পাচ্ছে ৩২ চলচ্চিত্র, তালিকা প্রকাশ
ঢাকায় সৌদি আরবের নতুন রাষ্ট্রদূত
মগবাজারে হোটেলে তিনজনের মৃত্যুর ঘটনায় মামলা, কেয়ারটেকার গ্রেপ্তার
যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ৫৬ বন্দির সাজা মওকুফ
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা