মিল্কভিটার সেবা, কল করলেই পৌঁছে যাবে পণ্য

হাবিবুল্লাহ ফাহাদ, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ০২ এপ্রিল ২০২০, ১৩:২০| আপডেট : ০২ এপ্রিল ২০২০, ১৪:১৫
অ- অ+

সাধারণ ছুটিতে সারাদেশ। লকডাউন ঘোষণা না হলেও কার্যত অচল সব কিছু। পথে সাধারণ মানুষের চলাচলের উপায় নেই। বাড়িতে রোজকার দুধ দিতে আসা লোকটিও আসতে পারছেন না। তাই বন্ধ দুধের যোগান।

অনেকে ছোট শিশুদের নিয়ে পড়েছেন বিপাকে। প্রতিদিনের খাদ্য তালিকা থেকে বাদ দিতে হচ্ছে দুধ। আবার যেসব শিশুরা দুধের ওপর নির্ভরশীল তারা কষ্ট পাচ্ছে। তাদের কথা ভেবে ঢাকায় ‘হোম ডেলিভারি’ সেবা দিচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় ইউনিয়ন লিমিটেড (মিল্ক ভিটা)।

নির্ধারিত নম্বরে করলে চাহিদামত দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য পৌঁছে যাবে বাসায়। তার চেয়েও বড় কথা হচ্ছে, পণ্য বাসায় পৌঁছতে কোনো বাড়তি টাকা নেওয়া হচ্ছে না। সরবরাহ একেবারে বিনামূল্যে। কেবল পণ্যের দাম দিলেই হবে। পণ্য অর্ডার করার নির্ধারিত নম্বরটি হচ্ছে- ০১৯০৪৪৪১১০০

জানতে চাইলে মিল্কভিটার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (যুগ্মসচিব) অমর চান বণিক ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘করোনার সংকটকালে জনসেবার অংশ হিসেবে আমরা ঘরে ঘরে পণ্য পৌঁছে দিচ্ছি। কোনো হোম ডেলিভারি চার্জও নেওয়া হচ্ছে না। মিল্কভিটার পণ্যের প্রতি মানুষের আস্থা রয়েছে। আমরা উৎপাদনের ক্ষেত্রে প্রতিটি পণ্যের গুণগত মান বজায় রাখি। করোনা সংকট কেটে গেলে সারা বছর অনলাইনের মাধ্যমে পণ্য বিক্রির ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

বাসায় পণ্য সরবরাহের কাজটি সমন্বয়ের দায়িত্বে আছেন সমবায় বিভাগের উপনিবন্ধক তোফায়েল আহম্মদ। তিনি বর্তমানে প্রেষণে মিল্কভিটায় অতিরিক্ত মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) পদে কর্মরত আছেন। সরাসরি ফোন ধরে ক্রেতার অর্ডার নিচ্ছেন তিনি।

জানতে চাইলে মিল্কভিটার এই উদ্যোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘মুজিববর্ষ উপলক্ষে স্বাধীনতার মাসের শুরু থেকে মিল্কভিটার পণ্য হোম ডেলিভারি দেওয়ার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। মিল্কভিটার চেয়ারম্যান শেখ নাদির হোসেন লিপু স্যারের নির্দেশে আমরা এই কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। পুরো বছর ধরেই আমরা ক্রেতাদের এই সেবা দিবো।’ ভবিষ্যতেও এই সেবাটি চালু রাখার চিন্তা আছে বলেও জানান তিনি।

করোনা প্রাদুর্ভাবে সাধারণ ছুটির সময়টাতে এই কার্যক্রম আরও জোরদার করা হয়েছে জানিয়ে তোফায়েল আহম্মদ বলেন, ‘মানুষের এখন ঘরে থাকা জরুরি। সেক্ষেত্রে তাদের কাছে খাবার পৌঁছতে হবে। করোনা প্রতিরোধে দুধ খুবই গুরুত্বপূর্ণ খাবার। এ বিষয়টি মাথায় রেখে এই সংকটের মধ্যেও আমরা সেবা চালু রেখেছি।’

তিনি বলেন, ‘সাধারণত আমরা ক্রেতাদের কমপক্ষে ৫০০ টাকার পণ্যের অর্ডার করতে বলি। তবে এই সংকটকালীন সময়ে কোনো শর্ত চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে না। ৫০০ টাকার কম অর্ডার করলেও আমরা চাহিদানুযায়ী পণ্য পৌঁছে দিচ্ছি। ডেলিভারি চার্জও ফ্রি।’

তবে পণ্য পৌঁছে দেওয়া নিয়ে বিরূপ অভিজ্ঞতাও জানিয়েছেন মিল্কভিটার সরবরাহ কাজে নিয়োজিত কয়েকজন কর্মী। এক্ষেত্রে মাঠ পর্যায়ে কর্মরত কিছু পুলিশ সদস্যদের অহযোগিতাপূর্ণ আচরণের কথা বলেছেন তারা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সরবরাহ কাজে নিয়োজিত কর্মী বলেন, বৃহস্পতিবার হাতিরঝিল এলাকায় পুলিশ তাকে নির্ধারিত গন্তব্যে যেতে দেয়নি। মিল্কভিটার পরিচয় দেওয়ার পরও ফিরিয়ে দিয়েছেন। যে কারণে নির্ধারিত ঠিকানায় পণ্য পৌঁছাতে পারেননি তারা।

এছাড়া আরেক সরবরাহ কাজে নিয়োজিত কর্মী অভিযোগ করেন খিলগাঁও-বাসবো এলাকায় পুলিশকে মিল্কভিটার ব্যবস্থাপনা পরিচালকের স্বাক্ষরিত অফিস অর্ডার দেখানো হলে তিনি তা ছিড়ে ফেলে দেন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সমবায় ক্যাডারের ২৫ ব্যাচের কর্মকর্তা তোফায়েল আহম্মদ বলেন, ‘সরকার ঘোষণা দিয়েছে উৎপাদন ও রপ্তানীমুখী শিল্প খোলা থাকবে। আমরা তো উৎপাদনমুখী শিল্প। আমাদের অফিস আদেশেও লেখা আছে, ঢাকা ডেইরি, বাঘাবাড়ি ও টেকেরহাট এই তিনটি কারখানা খোলা থাকবে। ডেলিভ্যারিম্যানদের কেউ কেউ বিরূপ অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। অথচ পুলিশের ঊর্ধ্বতন অনেক কর্মকর্তা আমাদের ফোন করে পণ্য অর্ডার করছেন। তারা এই ধরনের কাজকে সাধুবাদ জানাচ্ছেন।’

তোফায়েল আহম্মদ জানান, তারা সব বাধা-বিপত্তি পেরিয়েও নানান পথে গ্রাহকের বাসায় তাদের চাহিদামতো পণ্য পৌঁছে দিচ্ছেন।

এ কাজে পুলিশের সহযোগিতা কামনা করে তিনি বলেন, ‘গৃহবন্দী মানুষ খাবার না পেলে কী খাবে? অনেক বাসায় বাচ্চারা আছে। তারা দুধের অভাবে কষ্ট পাচ্ছে। আমরা তো জনগণের সেবার জন্যই কাজটি করছি। পুলিশ যদি আমাদের সহযোগিতা না করে তাহলে তো আমরা নির্বিঘ্নে সেবাটি চালিয়ে যেতে পারবো না। এ ক্ষেত্রে তাদের সহযোগিতা কামনা করি।’

মিল্কভিটার পণ্যের মধ্যে রয়েছে, তরল দুধ, টোনড মিল্ক, ফ্লেভার্ড মিল্ক, লাবাং, মাঠা, মাখন, ঘি, ননীযুক্ত গুঁড়াদুধ, ননী বিহীন গুঁড়াদুধ, ক্যান্ডি চকলেট, আইসক্রিম, চকোবার, ললিজ, রসমালাই, মিষ্টি দই, টক দই, রসগোল্লা, কাঁচা সন্দেশ, প্যারা সন্দেশ, মোজারেলা চিজ।

ঘরে বসে যারা পণ্য পেয়েছেন তাদের অনেকেই বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তুলে ধরে প্রশংসা করেছেন। সংকটকালে রাষ্ট্রায়ত্ত সমবায় ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান মিল্কভিটার এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাচ্ছেন তারা।

জয়দীপ দে শাপলু নামে একজন ক্রেতা লিখেছেন, ‘বাসায় দুটো ছোট বাচ্চা। মিল্কভিটার নম্বরে কল করলাম।... অনুরোধ করলেন আমার চাহিদা আর ঠিকানা ম্যাসেজ করতে।...আজ সকাল হতে না হতেই দেখি আমার বাসার সামনে দুধের গাড়ি!’

(ঢাকাটাইমস/ ২ এপ্রিল/ এইচএফ)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
পাকিস্তানে বৃষ্টি ও বন্যায় ১১০ জনের প্রাণহানি
এআই দিয়ে তৈরি ভিডিও নিয়ে ইউটিউবের নতুন নীতিমালা
এবার এনসিপির ‘কলম’ ও ‘মোবাইল ফোন’ মার্কা নিয়ে টানাটানি
সৌদিতে বিদেশি পর্যটক ও ভ্রমণকারীদের জন্য নতুন ড্রাইভিং নির্দেশনা
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা