করোনা-দুর্যোগে স‍াড়ে ৪ কোটি উচ্চ মধ্যবিত্তকে এগিয়ে আসতে হবে

ড. কাজী এরতেজা হাসান
| আপডেট : ১৮ এপ্রিল ২০২০, ০৯:৫৬ | প্রকাশিত : ১৮ এপ্রিল ২০২০, ০৯:৫০

ইতিহাসে এমন নজির নেই, যখন পুরো পৃথিবীর একসাথে অসুখ হয়েছে। বর্তমান সময়ে ঘটনা এমনই ঘটেছে করোনাভাইরাসের করাল গ্রাসে। পৃথিবীর ২ শতাধিক দেশ আজ করোনাভাইরাসের কারণে আক্রান্ত হয়েছে। এ অবস্থার বাইরে বাংলাদেশও নেই। পৃথিবীর অনেক ধনী ও আধুনিক রাষ্ট্রকেও হিমশিম খেতে হচ্ছে এই করোনা মোকাবিলা করতে গিয়ে।

করোনার প্রভাবে বাংলাদেশের স্বাভাবিক অবস্থা পুরোপুরি থমকে গেছে। এ অবস্থায় সবচেয়ে কষ্টে আছেন নিম্ন আয়ের মানুষগুলো। যারা কর্মহীন, অসহায় এবং ছিন্নমূল তাদের অবস্থা তো বর্ণনাতীত। পৃথিবীতে সবকিছুই আইন করে মানানো যায়, কিন্তু ক্ষুধার জ্বালা মানুষ সইতে পারে না। তাই দুর্যোগের এই সময়ে মানুষের ক্ষুধার জ্বালা মেটানোর কাজটাই সবচেয়ে কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে আমাদের সামনে।

পরিস্থিতি দিন দিন যেভাবে অবনতির দিকে যাচ্ছে, তাতে করে শুধু সরকারের পক্ষে সামাল দেয়া কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় আমাদের সমাজের উচ্চ-মধ্যবিত্ত যারা আছেন তাদের এগিয়ে আসার কোনো বিকল্প নেই। মানবতার দুয়ার খুলে দিয়ে উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবারের লোকজন যদি দেশের প্রতিটি গরিব এবং নিম্ন মধ্যবিত্তদের দায়িত্ব নেন, তাহলে এ সংকটে কেউ না খেয়ে থাকবে না।

ওয়েলথ-এক্সের এক প্রতিবেদনে বাংলাদেশে ধনী ও অতিধনীর সংখ্যা দ্রুতগতিতে বৃদ্ধির চিত্র উঠে এলেও বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) প্রতিবেদনে দরিদ্র মানুষের আয়ে বড় ধরনের বৈষম্য বেড়ে যাওয়ার বিপরীত চিত্রও রয়েছে। বাংলাদেশে গত ৫ বছরে ১৭ শতাংশ হারে অতি ধনীর সংখ্যা বেড়েছে। বিবিএস’র সর্বশেষ বাংলাদেশে সাড়ে ৪ কোটি মানুষ রয়েছে যারা উচ্চ-মধ্যবিত্ত শ্রেণির। তারা স্বচ্ছল। তাদের আয় অন্যান্যদের তুলনায় ভালো।

‘ওয়ার্ল্ড আলট্রা ওয়েলথ রিপোর্ট-২০১৮' শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ধনকুবেরের সংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান তাদের প্রতিবেদনে না থাকলেও ধনকুবের বৃদ্ধির হারে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে৷ বাংলাদেশে এখন শতকরা ১৭ দশমিক ৩ ভাগ হারে অতি ধনীর সংখ্যা বাড়ছে৷ আর এই হার বিশ্বে সর্বোচ্চ৷ বাংলাদেশের পরই চীনের অবস্থান৷ চীনে বাড়ছে ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ হারে৷ এরপর যথাক্রমে আছে ভিয়েতনাম, কেনিয়া, ভারত, হংকং এবং আয়ারল্যান্ড৷ ২০১২ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ধনকুবের বাড়ার হার পর্যবেক্ষণ করে বাংলাদেশের শীর্ষ অবস্থান নির্ণয় করা হয়েছে৷

যাদের সম্পদের পরিমাণ তিন কোটি ডলার বা তার চেয়ে বেশি, তাদেরকে অতি ধনী বা ধনকুবের বলছে ওয়েলথ এক্স৷ বাংলাদেশি মূদ্রামানে যাদের সম্পদ আড়াইশ' কোটি টাকার বেশি, তারাই অতি ধনী৷ বাংলাদেশে অতি ধনী বৃদ্ধির হারে শীর্ষে থাকলেও অতি ধনীর সংখ্যা কত তা বলা হয়নি৷ আর সংখ্যার দিক দিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান কত তা-ও নেই ওয়েলথ এক্স-এর প্রতিবেদনে৷

সেদিক বিবেচনায় এই সাড়ে ৪ কোটি মানুষ যদি করোনা পরিস্থিতিতে নিম্ন ও মধ্য আয়ের লোকজনের পাশে এসে দাঁড়ায় তাহলে পরিস্থিতি অনেকটাই ভালো হয়ে যাবে। ধরুন, দেশের প্রতিটি ধনী মানুষ যদি একটি করে নিম্ন আয়ের মানুষের পরিবারের দায়িত্ব নিয়ে নেন, তাহলে সারাদেশের প্রায় ১০ থেকে ১২ কোটি মানুষ আর না খেয়ে থাকবে না। কেননা প্রতিটি পরিবারেই ৩ থেকে ৫ জন সদস্য রয়েছেন। বাকি যে ২ থেকে আড়াই কোটি মানুষ রয়েছে তাদের মধ্যে ১ কোটি লোককে সরকার নিয়মিতভাবে ত্রাণ সহায়তা দিয়ে আসছেন। বাকিদেরও সরকার ব্যবস্থা করতে পারবেন। তাহলে খ্যাদ্যের সংকটে পড়তে হবে না মানুষকে।

২০১০সালে বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দায় যখন ইউরোপের বাতি নিভেছিলো তখন শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে নিরাপদ রেখেছিলেন। এবার গোটা পৃথিবীর মানবজাতির উপর নেমে আসা ধ্বংসলীলায় অর্থনীতি স্তব্ধ। সামনে মহাবিপর্যয়। নোবেল লরিয়েট অর্থনীতিবিদরাও বলছেন এটাই এখন চ্যালেন্জের। রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা দেশ ও জনগণকে বুক দিয়ে আগলে রাখছেন। আসুন দেশের উচ্চ মধ্যবিত্তরা কয়েকটি করে পরিবারের দায়িত্ব নেই ইবাদতের মতোন। আমাদের মানুষ ও দেশ নিরাপদ থাকবে।

কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের ভাষা পরিশেষে বলতে চাই, ‘ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়, পূর্ণিমার চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি।’ ক্ষুধার্ত মানুষের জন্য কোনো কথাই কার্যকর হয় না। মানুষের ক্ষুধা নিবারণের জন্য অবশ্যই খাদ্য চাই। করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ ইতিমধ্যেই করেছে। তাই মানবিক দিক বিবেচনায় শুধু গরিব অসহায় মানুষের পাশে ধনী এবং উচ্চবিত্তরা দাঁড়ালেই সরকারের পক্ষে এ দুর্যোগ মোকাবিলা করা সহজতর হবে বলেই বিশ্বাস করি। তাই এ সমাজে যারা উচ্চ মধ্যবিত্ত আছেন তারা এখনই মানুষের পাশে দাঁড়ান। তাহলেই করোনা মোকাবিলায় আমরা জয়ী হবো ইনশাল্লাহ। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন। বাংলাদেশ চিরজীবী হোক। আমিন।

লেখক: সম্পাদক ও প্রকাশক, দৈনিক ভোরের পাতা ও ডেইলি পিপলস টাইম। পরিচালক, এফবিসিসিআই

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :