সাক্ষাৎকারে বিল্ড ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপারসন

জাতীয় অর্থনৈতিক টাস্কফোর্স গঠন জরুরি

জহির রায়হান, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ২৩ এপ্রিল ২০২০, ০৭:৪১| আপডেট : ২৩ এপ্রিল ২০২০, ১১:৩৬
অ- অ+

করোনার শিকার বিশ্বের প্রায় সব দেশ। এর প্রভাবে বিপর‌্যস্ত বিশ্ব অর্থনীতি। এক নতুন অর্থনৈতিক ব্যবস্থার মুখোমুখী হতে যাচ্ছে প্রতিটি দেশ। সম্ভাব্য এই পরিস্থিতি মাথায় রেখে বাংলাদেশকে পরিকল্পনা করতে হবে বলে মনে করেন বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্টের (বিল্ড) ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপারসন এবং ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সাবেক প্রেসিডেন্ট আবুল কাসেম খান। তার অভিমত, এমন পরিস্থিতিতে করণীয় ঠিক করতে ন্যাশনাল ইকোনমিক এক্সপার্ট গ্রুপ বা টাস্কফোর্স গঠন অত্যন্ত জরুরি।

এ টাস্কফোর্সে অর্থ মন্ত্রণালয়, এনবিআর, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে দেশের অর্থনীতিবিদ এবং ব্যবসায়ী নেতারা থাকবেন।

আবুল কাসেম খান এ কে খান অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেডের পরিচালক এবং এ কে খান টেলিকম লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের করণীয় নিয়ে তার ভাবনাগুলো উঠে এসেছে ঢাকাটাইমসের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকার।

আগামী বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে বেশি গুরুত্ব দেওয়ার পরামর্শ আবুল কাসেম খানের। বলেন, এখানে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কীভাবে আরও সরকারের সঙ্গে কাজ করতে পারে সেটা বের করতে হবে। কৃষিতে গুরুত্ব দিতে হবে। প্রণোদনা যেন সঠিক লোকের কাছে যায় সেটা নিশ্চিত করতে হবে।

বর্তমানে সংকটে সব শিল্পই ক্ষতিগ্রস্ত। এমন পরিস্থিতিতে কী পরিকল্পনা নেয়া যায়- জানতে চাইলে আবুল কাসেম খান বলেন, এটা একটা মহাসংকট। এমন সংকট পৃথিবীর কোনো দেশই দেখেনি আগে। এটা মোকাবেলার জন্য কোনো মেকানিজম নেই। কীভাবে অর্থনীতিকে চাঙ্গা রাখা যায় এ জন্য সব দেশই নানা সুযোগ-সুবিধা দিয়েছে এবং দিবে। এটা কিছু মডিফাই করবে। বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও করোনার প্রভাব পড়েছে। রেমিট্যান্স বলেন, আমদানি-রপ্তানি, কনজামশন-ডিমান্ড বলেন, সব জায়গায় আমরা ক্ষতির সামনে দাড়িয়ে আছি। অর্থনীতিকে কতদিন আমরা এভাবে অচল করে রাখব, সেটার ওপর ভিত্তি করে পলিসি সাপোর্ট নিতে হবে।

‘এখন করোনার সমাধান এক মাসে হবে নাকি আঠারো মাসে হবে, এটা আমরা কেউ জানি না। যত বেশি সময় যাবে তত ইমপ্যাক্ট এনালাইসিস অনেক বেশি দৃশ্যমান হবে। সেই অনুয়ায়ী পলিসি হবে। এটা এক মাসে যদি ঠিক হয়ে যায়, তাহলে এক ধরনের পলিসি সাপোর্ট লাগবে শর্টটাইম। এটা ছয় মাস চললে মধ্যমেয়াদি থেকে দীর্ঘমেয়াদি পলিসি প্রয়োজন।

বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্টের (বিল্ড) থেকে সরকারের কাছে বেশ বিছু প্রস্তাব দেয়া হয়েছে জানিয়ে সংগঠনের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপারসন আবুল কাসেম বলেন, আমরা একদম সুনিদিষ্ট প্রস্তাব দিয়েছি। প্রধানমন্ত্রীর প্রণোদনা ঘোষণা দেয়ার আগে এ প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল।

‘করোনায় ব্যবসায়ীদের যেখানে প্রথম ধাক্কাটা আসবে, সেটা হলো ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল সংকট। রেভিনিউ কালেকশন বন্ধ হয়ে গেছে, ট্যাক্স পেমেন্টের সময় চলে আসছে এবং কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান তার কর্মচারীদের ছাটাইয়ে বাধ্য হচ্ছে। এই চারটা জায়গা চিহ্নিত করে আমরা শর্টটার্ম বাস্তবতা দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলছি। প্রথমত ট্যাক্সটাকে কীভাবে আমরা একটা কোয়ার্টার পিছিয়ে দিতে পারি। যেখানে কোনো জরিমানা হবে না। এটা করা হলে হাতে টাকা থাকবে। তিনি পরে ট্যাক্স দিবেন। এটা আমরা সরকারের কাছে চেয়েছি।

বর্তমান সংকটেও যেসব প্রতিষ্ঠান কর্মী ছাটাই করবে না তাদের জন্য সরকার যেন বিশেষ সুবিধা রাখে এমন প্রস্তাব দিয়েছে বিল্ড। আবুল কাসেম খান বলেন, ‘আমরা চাচ্ছি যে কর্মসংস্থান যেন ধরে রাখতে পারি। বছরের শেষে যখন আমরা ইনকাম ট্যাক্স দেব সেখানে যেন দুই শতাংশ ছাড় দেয়া হয়। এভাবে কিছু পদক্ষেপ নিয়ে ব্যবসায়ীদের সাহায্য করফ যেতে পারে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্টিমুলাস প্যাকেজ ঘোষণায় ব্যবসায়ীদের আত্মবিশ্বাস বেড়েছে বলে মনে করেন আবুল কাসেম খান। ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প ও সার্ভিস সেক্টরের প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল–সুবিধা দেওয়ার লক্ষ্যে ৩০ হাজার কোটি টাকা এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য ২০ হাজার কোটি টাকার একটি ঋণসুবিধাসহ আরও সুবিধা ঘোষণা দিয়েছে সরকার। এটাকে সাধুবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, এটা খুব সাহসী পদক্ষেপ হয়েছে। আমাদের ব্যবসায়ীদের কনফিডেন্ট বাড়াতে এটা সহায়ক হয়েছে।

বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো সংশ্লিষ্ট ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল বাবদ ঋণ দেও্য়ার ক্ষেত্রে কিছু শর্ত দেয়া হয়েছে। যেমন বলা হচ্ছে ওয়ার্কিং ক্যাপিটালের ৩০ শতাংশ দেয়া হবে। সেটা আবার ব্যাংক ক্লাইন্ট রিলেশনশিপের ওপর ভিত্তি করে দেয়া উচিত। এমন কিছু শর্ত পুনবিন্যাসের আহ্বান জানান তিনি।

আবুল কাসেম বলেন, যে ব্যবসায়ীদের ব্যাংকে একাউন্ট নেই তারাও যেন সহজে ঋণসুবিধা নিতে পারে সেটিও দেখতে হবে। ছোট ও মাঝারি ধরনের ব্যবসায়ীদের অনেকের সঙ্গে ওনাদের (ব্যাংকের) লেনদেন নাই বলতে পারেন। যারা ধার করে বা বিভিন্নভাবে সঞ্চয় করে টাকাটা ব্যবসায় লাগিয়েছেন। এমন ব্যবসায়ীরা এখানে বাদ পড়ে যাবেন। আমরা তাদের কথাটাও বিবেচনায় রাখতে বলেছি।

সরকারের ঘোষিত প্রণোদনা বাস্তবায়ন, মনিটরিং, করোনার প্রভাব মূল্যায়ন ইত্যাদি সমন্বয়ের জন্য ন্যাশনাল ইকোনমিক ট্রাসফোর্স গঠন করলে তা সুদূরপ্রসারী একটা কাজ হবে বলে মনে করেন সাবেক ডিসিসিআই প্রেসিডেন্ট। তিনি বলেন, এখানে ব্যবসায়ী নেতারা, বিভিন্ন এসোসিয়েশন নেতারা থাকবেন; অর্থ মন্ত্রণালয়, এনবিআর, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বিভিন্ন সরকারি সংস্থার প্রতিনিধিরা থাকবেন, অর্থনীতিবিদরা থকবেন। তারা আমাদের অর্থনীতির উপরে করোনার প্রভাব নিয়ে কাজ করবেব। কোন কোন খাত বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেটা দেখবেন। সমন্বয় করবেন। মানিটরিং বলেন, এক্সিকিউশন বলেন সেটা করবে। এটা করা হলে প্রণোদনাটা একটা প্রক্রিয়ার মধ্যে এলো।

করোনার প্রভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে ক্ষুদ্র শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো এমন মন্তব্য করে আবুল কাসেম খান বলেন, অবশ্যই বড় ফ্যাক্টরিও এফেক্টেট হবে। কিন্তু এখানে প্রধান এফেক্টেট হবে ছোট প্রতিষ্ঠান। বড় প্রতিষ্ঠানে সক্ষমতা আছে এটা কাটিয়ে ওঠার। কিন্তু ছোট প্রতিষ্ঠানগুলোর টিকে থাকার মতো সক্ষমতা নেই। তারা ব্যাংকিং সাইটের বাইরে কাজ করছে।

ন্যাশনাল ইকোনোমিক ট্রাস্কফোরসে খাতভিত্তিক কমিটি হতে পারে। বলেন আবুল কাসেম খান, তাদের সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব দেয়া যেতে পারে। ধরেন, একটি কমিটি অর্থনীতি নিয়ে কাজ করলো, একটি ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প নিয়ে কাজ করলো, একটা গ্রুপ রপ্তানি নিয়ে কাজ করলো, বন্দর নিয়ে কাজ করলো। তাহলে আমার মনে হয় মনিটরিংটা ভালো হবে।

সরকার এখন স্বাস্থ্য খাতসহ কয়েকটি ক্ষেত্রে বেশি ব্যস্ত। বেসরকারি খাত কীভাবে সরকারের সঙ্গে সমন্বয় করে স্বাস্থ্য খাতে আরো জোরালো ভূমিকা নিতে পারে? আবুল কাসেম খান বলেন, স্বাস্থ্য খাতে আগামী বাজেটে নিশ্চই গুরুত্ব পাবে। বেসরকারি খাতকে কীভাবে আরও বেশি করে এদিকে যুক্ত করা যায়, আরও বেশি সরকারি-বেসরকারি অংশীদারি (পিপিপি) মডেল ভিত্তিতে কাজ করা যায় যে পদক্ষেপ নিতে হবে।

আবুল কাসেম খান বলেন, করোনা আমাদের বুঝিয়ে দিয়েছে এখানে আমাদের অনেক উন্নতি করতে হবে। সরকারি স্বাস্থ্যসেবা এবং বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবার মধ্যে একটা তফাত আছে। সেটা অর্থনৈতিক ও সেবা দুই ক্ষেত্রেই। আমাদের চেষ্টা হবে এটাকে একটা লেবেলে নিয়ে আসা। এজন্য প্রাইভেট সেক্টরের যেখানে সাপোর্ট প্রয়োজন সেটা সরকারকে দিতে হবে। ইনভেস্টমেন্ট, পলিসিগত সাপোর্ট এগুলো দেখতে হবে।’

বিল্ডের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রস্তাব দেয়া হয়েছে বলে জানান আবুল কাসেম খান।

আগামী কয়েক বছর করোনা প্রভাব পড়বে বলয়ে আশঙ্কা করছেন বিল্ড ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপারসন আবুল কাসেম। প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগে (এফডিআই) প্রভাব পড়বে।

বিশ্ব অর্থনীতিতে আসবে বিশাল পরিবর্তন। কবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে এটা কেউ বলাতে পারছে না। তাই আমাদের এ ব্যপারে এখনই প্রস্তুত থাকতে হবে।

ইন্টারনেট কানেটিভিটি, অনলাইন শপিং, অনলাইনে পেমেন্ট, অনলাইন ব্যাংকিংয়ে সুযোগ-সুবিধা নিতে বেশি আগ্রহী মানূষ। বাসায় পণ্য পাওয়ার আগ্রহ বাড়বে। টেলিকম সেক্টর, আইসিটি সেক্টর, আইটি সেক্টরকে কীভাবে বেশি সাপোর্ট দেয়া যায় সেদিকে জোর দিতে হবে সরকারকে।

কৃষি ও কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণে জোর দেয়ার তাগিদ দিয়ে আবুল কাসেম খান বলেন, কৃষি যান্ত্রিকীকরণে আরও বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। করোনার কারণে এখন গ্লোবালাইজ ইকোনমি থেকে লোকালাইজ ইকোনমি হবে। এটা নতুন ট্রেন্ড। আপনি যতটুকু সেলফ সাফিসিয়ান করতে পারবেন তত নিরাপদ থাকবেন আপনি। আপনি কৃষি দিয়ে, নিজস্ব উৎপাদন দিয়ে সেইফ থাকবেন।

অনেক দেশ তাদের খাদ্যপণ্য আগে মজুদ করবে, তারপর রপ্তানির কথা ভাববে মন্তব্য করে আবুল কাসেম খান বলেন, এখন আমাদের নতুনভাবে চিন্তা করতে হবে। আমাদের অর্থনীতিকে, আমাদের কৃষিকে আধুনিকায়ন বলি বা কমার্সিয়ালাইজ বলি, এটা গভীরভাবে চিন্তা করতে হবে।

(ঢাকাটাইমস/২৩এপ্রিল/মোআ)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
সম্পূরক শুল্ক কমিয়ে আনতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনার করার ওপর গুরুত্বারোপ আমীর খসরুর
তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিষয়ে সংশোধনীকে শক্তিশালী করতে চায় বিএনপি: সালাহউদ্দিন  
বিমানবন্দরে চোরাচালানে ‘জিরো টলারেন্সে’ কাস্টমস
মাহদির নতুন মিউজিক ভিডিও ‘জানরে তুই আয়না’
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা