শেরপুরে অস্তিত্বহীন ও নামসর্বস্ব ২০ গ্রন্থাগারে সরকারি অনুদান

সুজন সেন, শেরপুর
  প্রকাশিত : ২৯ জুন ২০২০, ১৩:২৪| আপডেট : ২৯ জুন ২০২০, ১৩:২৬
অ- অ+

শেরপুরে সাইনবোর্ডসর্বস্ব ২০টি বেসরকারি গ্রন্থাগার সরকারি অনুদান পেয়েছে। এসব গ্রন্থাগারকে বই কিনতে চলতি বছর প্রায় সাড়ে ৯ লাখ টাকা অনুদান দেয় সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়। নামে থাকলেও কাজে নেই এমন গ্রন্থাগারের নামে অর্থ বরাদ্দ হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে স্থানীয় পাঠক ও লেখকরা।

সাইনবোর্ডসর্বস্ব গ্রন্থাগারের নামে সরকারি অনুদান বরাদ্দের অভিযোগ পেলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক।

জেলা বেসরকারি গ্রন্থাগার সমিতির তথ্যমতে, শেরপুর জেলায় ২৮টি গ্রন্থাগার রয়েছে। আর জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের সরকারি ওয়েবসাইটে রয়েছে মাত্র ১৭টির তথ্য। কিন্তু অনুদান দেয়া হয়েছে ২০টিকে।

তথ্যানুসন্ধানে একাধিক সূত্রে জানা যায়, জেলা বেসরকারি গ্রন্থাগার কর্তৃপক্ষের মধ্যে অনুদান প্রত্যাশীদের আবেদন আহ্বান করে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়। গত বছরের নভেম্বরে এ-সংক্রান্ত আবেদন চাওয়া হয়। মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত নির্দিষ্ট ফরমে অনুদানের জন্য আবেদন করে ২২টি বেসরকারি গ্রন্থাগারের গ্রন্থাগারিক।

চলতি বছরের ২২ জুন অন্যান্য অনুদান খাত থেকে তিনটি শ্রেণিতে শেরপুরের ২০টি গ্রন্থাগারের জন্য ৯ লাখ ১৯ হাজার টাকা মঞ্জুর করে মন্ত্রণালয়। আর ২৫ জুন (গত বৃহস্পতিবার) রাতে জেলা সরকারি গণগ্রন্থাগারের ফেসবুক পেজে ওই তালিকা প্রকাশ করা হয়। এর পরপরই নিন্দার ঝড় ওঠে পাঠক ও লেখক মহলে।

সরেজমিন অনুসন্ধানে ২০টি গ্রন্থাগারের মধ্যে ১০টির দৃশ্যমান কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। আর বাকি ১০টি শুধু সাইনবোর্ডেই সীমাবদ্ধ। এগুলোর বেশির ভাগ করা হয়েছে বাড়ির বারান্দায়। সেখানে বৃষ্টির সময় কাপড় শুকানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। কয়েকটি জায়গায় বই রাখার আলমারি থাকলেও সেখানে বাসা বেঁধেছে মাকড়শা। এ ছাড়া চায়ের দোকানের আলমারিতে সরকারি বিদ্যালয়ের বই রেখে তৈরি করা হয়েছে গ্রন্থাগার। বাবা ও মেয়ের নামে আলাদা দুটি ‘গ্রান্থাগার’ও পাওয়া গেছে।

এলাকায় গ্রন্থাগার আছে এমন তথ্য জানেন না স্থান্য লোকজন। সদর উপজেলার পাকুরিয়া ইউপির সাবেক সদস্য কামাল উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের গ্রামে কোনো পাঠাগারের কথা আমরা শুনিনি। কেউ যদি পাঠাগারের নামে টাকা নেয়ার চেষ্টা করে তাহলে এটা জালিয়াতি ছাড়া আর কিছু না।’

একই ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান হায়দার আলী বলেন, ‘এসব পাঠাগারের দৃশ্যমান কোনো কার্যক্রম নেই। সরকার যদি কোনো অনুদান দেয় তাহলে অবশ্যই স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে সরেজমিনে তদন্ত করে দেয়া উচিত। তাহলে সবাই এর সুফল পাবে।’

সাহিত্যিক হুইসেল হোসেন বলেন, যারা সাইনবোর্ডসর্বস্ব পাঠাগার করেছেন তাদের কাউকেই কোনো বইমেলাতে দেখা যায়নি। সরকারি অনুদান লোপাট করাই তাদের উদ্দেশ্য।

সরকারের এই অনুদানকে ভিক্ষার সঙ্গে তুলনা করেন আনিসুর রহমান পাবলিক লাইব্রেরির গ্রন্থাগারিক আনিসুর রহমান। তিনি বলেন, ‘এই কয়টা টাকা তো সরকারের ভিক্ষা। নিবন্ধন করতে অফিসে অফিসে ঘুরেই তো এই টাকা খরচ হয়ে যায়। এটা নিয়ে আপনাদের (সাংবাদিক) এত আগ্রহের মানে বুঝলাম না।’

নূর মোহাম্মদ স্মৃতি পাঠাগারের গ্রন্থাগারিক নূরনবী হোসেন দাবি করেন, করোনার কারণে পাঠাগারের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। কিছুদিনের মধ্যে আবার চালু করা হবে।

যুব বিজ্ঞান ও মহিলা সংস্কৃতি পাঠাগারের গ্রন্থাগারিক আফসানা হোসেন মুক্তি বলেন, বেসরকারিভাবে চালানোর কারণে কার্যক্রম ছোট। এবার অনুদান পাওয়ায় পাঠাগার বৃহৎ পরিসরে সাজানো হবে।

জেলা বেসরকারি গ্রন্থাগার সমিতির সভাপতি আফজল হোসাইন বলেন, বরাদ্দ না পাওয়ায় অনেকের কার্যক্রম বন্ধ ছিল, এখন সবাইকে ভালোভাবে কার্যক্রম চালাতে চিঠি দেয়া হবে।

অন্যদিকে নেতিবাচক মন্তব্যের কারণে জেলা সরকারি গণগ্রন্থাগারের ফেসবুক পেজ থেকে অনুদান পাওয়া গ্রন্থাগারের তালিকা সরিয়ে ফেলেছে প্রতিষ্ঠানটি।

জেলা সরকারি গণগ্রন্থাগারের লাইব্রেরিয়ান সাজ্জাদুল করিম বলেন, ‘এই অনুদান দেয় জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র। কোন বিষয়ে অনুদান দেয়, এটা আমরা জানি না। বেসরকারি গ্রন্থাগার কর্তৃপক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে এই অনুদান প্রদান করে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়। এর সঙ্গে গণগ্রন্থাগারের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। তাই পোস্ট সরিয়ে ফেলা হয়েছে।’

কার্যক্রম ছাড়া অনুদান গ্রহণের বিষয়ে কোনো অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক আনার কলি মাহবুব।

(ঢাকাটাইমস/২৯জুন/মোআ)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
হাসপাতালে জামায়াত আমিরের পাশে মির্জা ফখরুল
কোনো ভুল সিদ্ধান্তে যেন ফ্যাসিবাদ পুনর্বাসনের সুযোগ না পায়: তারেক রহমান 
দেশে গণতন্ত্রের সংকট দেখা যাচ্ছে: মির্জা ফখরুল
দাওয়াত দেয়নি যাব কিভাবে, দিলেও যে যেতাম তেমন না: সালাউদ্দিন
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা