করোনাকালে সন্তানের সঙ্গে ঘর হয়ে উঠুক আনন্দময়

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০৯ জুলাই ২০২০, ১৬:৩৭ | প্রকাশিত : ০৯ জুলাই ২০২০, ১৬:৩৩
ছবির মডেল হয়েছেন: মা ফারিয়া মোশারফ মিশু ও মেয়ে আরফা সিদ্দিকা অঋণী

মহামারি করোনাভাইরাস আমাদের জীবনযাপনকে নানাভাবে ব্যহত করছে। মানুষকে করেছে ঘরবন্দি। বিশেষ করে এই সময়ে শিশুদের অবস্থা আরও নাজেহাল। চঞ্চলমতি শিশুদের জীবনযাত্রাকে প্রভাবিত করেছে। এই পরিস্থিতিতে আমাদের যেমন সুস্থ থাকতে হবে, তেমনি মানসিক যত্ন নিতে হবে। মনে রাখতে হবে, শিশুরা কিন্তু বড়দের আচরণ অনুকরণ করে থাকে। বাবা-মা কিংবা বড়দের কঠোরভাবে স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলা বাচ্চাদেরও উৎসাহিত করবে। মহামারির কঠিন সময়ে নিজের সন্তানদের যত্ন নিতে কিছু সহজ উপায় অবলম্বন করা যেতে পারে।

শিশুদেরকে আমরা কখনো ভয় পেতে দেব না। তাদেরকে করোনা মহামারি সম্পর্কে প্রকৃত তথ্য জানাতে হবে। তাদেরকে বলতে হবে যে, আমরা তাদের সাথেই আছি এবং তাকেও আমরা নিরাপদ রাখতে চাই। তাদেরকে জানান যেতে পারে যে, করোনা ভাইরাস এ আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি শিশুদের সবচাইতে কম।

অন্যদের যত্ন নেওয়ার সুযোগ করে দেওয়া, সমাজের বাকি মানুষদের কথা চিন্তা করার মধ্য দিয়ে শিশুদের মানসিক উন্নতি ঘটানো যেতে পারে। তাদের বয়স্ক প্রতিবেশি/আত্মীয়দের ফোন করে খোঁজ নেওয়া, সুবিধা বঞ্চিত মানুষদের জন্য সাহায্যের ব্যবস্থা করার কাজে উৎসাহ দেওয়া যেতে পারে।

দীর্ঘদিন ধরেই বাচ্চাদের স্কুল বন্ধ। তাদেরকে সৃজনশীল কাজে ব্যস্ত রাখতে হবে। আমাদের ব্যস্ত জীবনে সন্তানদের সাথে গুণগত সময় কাটানোর এটি একটি বড় সুযোগ। শিশুদের সাথে খেলাধুলা করা, একসাথে বসে সিনেমা দেখা, ঘরের কাজ শেখানো, রান্না করা, গৃহপালিত প্রাণী, পাখির যত্ন নেওয়া, গাছের যত্ন নেওয়ার মধ্যে দিয়ে শিশুদের ব্যস্ত রাখা যেতে পারে।

আমাদের সন্তানদের অনুভূতি আমাদেরই বুঝতে হবে। এই মহামারি পরিস্থিতি তাদের মানসিকভাবে কতটুকু বিপর্যস্ত করেছে তা নিয়ে আলোচনা করা যেতে পারে। তাদের প্রশ্ন করার সুযোগ দিতে হবে।

শিশুদের ঘরে বসে পড়াশোনার পাশাপাশি মানসিক বিকাশের দিকেই বেশি নজর দেওয়া দরকার। তবে বাড়িকে একেবারে স্কুল বানিয়ে ফেলা যাবে না। বরং শিশুকে খেলতে দিন এবং খেলায় আপনিও যোগ দিন। ছোট বাচ্চাদের সঙ্গে বাবারা মজাদার খেলা এবং গলা মিলিয়ে গান গাওয়াসহ বিভিন্ন ক্রীড়ার সঙ্গে যুক্ত হতে পারেন।

অনেক সময় অভিভাবকরা বাচ্চাদের অনেক কর্মকান্ডে বিরক্ত হয়। বাচ্চাদের অগোছাল ও খেয়ালিপনা নিয়ে বাবা-মায়ের নেতিবাচক চিন্তা করা উচিত নয়। শিশুরা বিভিন্ন ধরনের খেলার মাধ্যমে নানা বিষয়ে শিখতে ও উপভোগ করতে পারে। এই লকডাউনের মধ্যে বাচ্চাদের সঙ্গে খেলাধূলা করা ও সময় কাটানো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। যেকোনো খেলার অধিনায়কত্বটা তাকেই দিতে হবে।

আপনার শিশু কী করছে তা খেয়াল করুন এবং অনুসরণ করে তাদের আগ্রহের বিষয়টি খুঁজে বের করুন। বাচ্চাদের এগুলো দেখা এবং সে অনুযায়ী বাবা-মায়েদের সাড়া দেয়ার চর্চা ছোট শিশুদের শিখনে সহায়তা এবং সামাজিক ও মানসিক বিকাশের চাবিকাঠি। শিশুদের শেখানোর ক্ষেত্রে কখনো তাড়াহুড়া করা যাবে না। যতো সময়ই লাগুক তাকে তার কাজটি নিজে শেষ করতে দিন। মনে রাখবেন শিশুরা এভাবেই শেখে।

শিশুর সঙ্গে বাবা-মায়ের মজার সম্পর্ক ও খেলাধুলায় অংশ নেয়া শিশুর ওপর কী ধরনের প্রভাব পড়ে তা নিয়ে এখনো গবেষণা চলছে। তবে পল রামচন্দানি একটা বিষয় জোর দিয়ে বলছেন, শিশুর সঙ্গে বাবা-মার ক্রীড়ামূলক সম্পর্ক কতোটা প্রভাব ফেলে তার বৈজ্ঞানিক কোনো ব্যাখ্যা এই মুহূর্তে দেয়া যাচ্ছে না। তবে আমরা নিশ্চিতভাবে জানি, বাচ্চাদের খেলতে পারার স্বাধীনতার সঙ্গে সুস্বাস্থ্য এবং মানসিক চাপ কমাতে সহায়তা করে।

শিশুকে পর্যাপ্ত সময় দিতে হবে। এসময় বাবা-মা সন্তানের পড়াগুলো দেখিয়ে দিতে পারেন। পড়াশোনার একটা রুটিন করে দিতে পারেন। প্রতিদিন অল্প অল্প করে পড়ার টার্গেট করে দিতে পারেন। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পড়া শেষ করতে পারলে তাকে পুরস্কার দেবেন এভাবে তাকে পড়াশোনার প্রতি উৎসাহিত করতে পারেন।

শিশুকে নিয়ে টেলিভিশনে শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান, কার্টুন দেখতে পারেন। শিশুকে গল্প বা কবিতা শোনাতে পারেন। কিছু ইনডোর গেমস যেমন- ক্যারাম, লুডু ইত্যাদি খেলতে পারেন। তবে বেশি সময় নিয়ে টেলিভিশন দেখানো যাবে না। তাহলে আবার আসক্তি হতে পারে। টেলিভিশন দেখার সময় বাচ্চাদের ছোট ছোট প্রশ্নের উত্তর দিন।

শিশুকে গঠনমূলক কাজের ধারণা দিন। বাসার ছোট ছোট কাজগুলো করাতে পারেন। বাবা-মা যখন কাজ করেন তখন কাজে সাহায্য করতে পারে। কাজের লোক যখন থাকবে না তখন কীভাবে চলতে হয় সেই শিক্ষা দিন।

পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা সম্পর্কে শিশুকে ধারণা দিন।

কীভাবে হাত ধোবে, কত সময় নিয়ে ধোবে, হাঁচি-কাশির সময় কীভাবে শিষ্টাচার মেনে চলবে, হাঁচি কাশির পর কীভাবে টিস্যু ব্যবহার করবে, টিস্যু ব্যবহারের পর সেটা কীভাবে ডাস্টবিনে ফেলবে, লিফট ব্যবহার করলে লিফলেট বাটন কীভাবে চাপবে ও কীভাবে দুরত্ত্ব বজায় রেখে দাঁড়াবে এগুলোর সঠিক ধারণা দিন। বার বার হাত ধোওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। নাক, মুখ এবং চোখে যেন বার বার হাত না দেয় সেই শিক্ষা দিন।

এ সময় শিশুর খাবারের প্রতি বিশেষ খেয়াল রাখবেন। একই ধরনের খাবার যেন প্রতিদিন না খাওয়ানো হয়। খাবারের ভিন্নতা আনুন। শিশুকে পরিমিত খাওয়াতে শেখান। বেশি বেশি ভিটামিন- সি, জিঙ্ক ও আয়রন যুক্ত খাবার খেতে দিতে হবে। ফাস্টফুড জাতীয় খাবার, কোমল পানীয় এড়িয়ে চলতে হবে।

শিশুরা যেন নিজেই নিজের যত্ন নিতে পারে। এটা তার ভালোলাগায় পরিণত হয়। খেলার ছলে, আনন্দের সঙ্গে তাদের সেই ব্যবস্থা করতে হবে। শিশুরা যেন কোনো অবস্থাতেই মানসিক অবসাদের ভেতর চলে না যায়। তাদের জন্য এই করোনাকালীন ঘর হয়ে উঠুক আনন্দময়।

ঢাকাটাইমস/৯জুলাই/এসকেএস

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

ফিচার এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :