পদার্থবিজ্ঞানের শিক্ষকদের ভ্রান্তি

মুজিব রহমান
 | প্রকাশিত : ১৭ জুলাই ২০২০, ১১:৩২

অরুণ কুমার বসাক একজন বিশিষ্ট পদার্থ বিজ্ঞানী ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের বরেণ্য শিক্ষক ছিলেন এবং এখনো পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগে এমিরিটাস প্রফেসর। তাঁর ডান হাতের দিকে তাকিয়ে দেখুন- তর্জুনী, মধ্যমা, অনামিকা ও কনিষ্ঠা আঙুলে চারটি আংটি। তিনি শুধু শোভা বর্ধনের জন্যই এগুলো ব্যবহার করেন তা নয়, একটি বিশ্বাস থেকেই করেন। মানুষ অষ্টধাতুর আংটি পরে। কি কি ধাতু আছে এই আংটিতে? সোনা, রূপা, তামা, রাং, সিসা, পারদ ও লোহা। অনেকে কাসা, পিতল ও ব্রোঞ্জ এর কথাও বলেন।

তবে এ তিনটি মৌলিক ধাতু নয়- তামা, রাং/টিন, সিসা/দস্তা এর একেক মিশ্রণ। হীরা, রুবি, নীলকান্ত, পান্না, গার্নেট, গোমেদ, মুক্তা (পাথর নয়) ইত্যাদি পাথর বসানো আংটিও অনেকে পরেন। স্রেফ স্বর্ণ বা রূপার আংটি যারা পরেন তারা অবশ্য শুধু সৌন্দর্যবর্ধনের জন্যই পরেন। অষ্টধাতুর আংটির মধ্যে থাকা পারদ ও সিসা মানব শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকারক। অন্য ধাতুগুলোও হাতে ব্যবহার করলে ক্ষতি ছাড়া, কোন উপকার হওয়ার সুযোগ নেই। কোন পাথরেরও কোন উপকারিতা নেই। কেতু, রাহু বা শনির দোষ বলেও কিছু নেই আর কোন দোষ কাটানোর ক্ষমতাও নেই পাথরের।

বসাক স্যার যখন পাথর বসানো আংটি পরেন তখন পাথর ব্যবসায়ীদের জন্য সুখ বয়ে আনেন আর বিজ্ঞানমনস্ক মানুষের জন্য বিড়ম্বনা তৈরি করেন। লিটন দেওয়ান চিশতিরা দেখাতে পারেন- দেখুন দেশের সেরা পদার্থবিজ্ঞানের শিক্ষকও আংটি পরেন। বিজ্ঞানের শিক্ষক হলেই তিনি বিজ্ঞানমনষ্ক হবেন তার নিশ্চয়তা থাকে না। যদি কেউ না হন তবে ক্ষতি অনেক।মৌলবাদী চক্র তাকে ব্যবহার করে বিজ্ঞানমনষ্কতার বিপক্ষে মতাদর্শ গড়ে তুলতে সচেষ্ট হন।

এমনটা আমরা দেখি এম. শমশের আলীর ক্ষেত্রেও। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক ছিলেন। এর আগে তিনি ইতালির ট্রিস্টে তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের আন্তর্জাতিক কেন্দ্রে কাজ করেছিলেন। বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন, এর পরিচালকসহ বিভিন্ন পদে পাকিস্তান ও বাংলাদেশ পারমাণবিক শক্তি কমিশনগুলিতেও কাজ করেছিলেন। বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছিলেন তিনি বাংলাদেশের সাউথ ইস্ট বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য ছিলেন। তিনি যখন কোয়ান্টাম মেথডের ক্লাসে বক্তব্য রাখেন তখন হতাশ হতে হয়।

ধ্যানকে মানুষের আত্মউন্নয়ন ও ব্যাক্তিত্বের বিকাশে এই ম্যাথড প্রয়োগ করে। এরসাথে কোয়ান্টাম মেকানিক্সের কোন সম্পর্ক নেই, নামটি স্রেফ চুরি করা। বিখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানীদের নাম ব্যবহার করে এবং তাদের বক্তব্য বিকৃত করেই তারা কাজ করে। এম. শমশের আলী কোয়ান্টাম মেথড নিয়ে একটি বই লিখেছেন ‘ইসলাম বিজ্ঞান মেডিটেশন’ নামে যা প্রকাশ করেছে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন। বইটিতে তার ১৭টি প্রবন্ধ রয়েছে যাতে আত্ম উন্নয়ন ও কোয়ান্টামের কথা লিখেছেন। তিনি দুই দশক ধরে কোয়ান্টাম মেথড নিয়ে কাজ করছেন বলেও বইটি থেকে জানা যায়।

বইটির ভূমিকায় তিনি কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন, গুরুজী ও মা-জীর কাছে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। তিনি ওয়াজেও বক্তব্য রাখেন। বিভিন্ন স্থানে তাঁর নামের আগে আল্লামাও লেখা দেখা যায়। তার কারণে কোয়ান্টাম মেথড যে কোয়ান্টাম মেকানিক্সের অংশ নয় সেটা মানুষকে বুঝানো মুশকিল হয়ে যায়।

এমনটা আরো দেখেছি। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানের একজন শিক্ষিকার কথা আগেও বলেছি, যিনি কালী দেবীর সাধনা করেন। তাকে প্রশ্ন করলে তিনি বলেছিলেন, পদার্থও শক্তি কালীও শক্তি তাহলে দুটি এক হল না! ওনারই এক সহকর্মীর সাথে সাক্ষাৎ হয়েছিল যিনি তাবলিগ জামাতের নেতা। আমাদের বিক্রমপুরের সরকারি শ্রীনগর ডিগ্রি কলেজের একজন পদার্থবিদ্যার শিক্ষক ছিলেন।

তিনি ক্লাসে সবসময় বলতেন, ‘পদার্থবিদ্যার সমস্তসূত্রই এসেছে কোরআন থেকে’। কোরআন ধর্মগ্রন্থ। এটাতো পদার্থবিদ্যার বই নয়।পদার্থবিদ্যায় আমিও মাস্টার্স করেছি। তাই আমি প্রমাণ করার আহবান জানিয়ে ফেসবুকেই পোস্ট দিয়েছিলাম। সেখানে বলেছিলাম, আপনার কাছেই তাহলে আগামীতে পদার্থবিদ্যার অন্তত দুটি নোবেল আসবে এমন আবিষ্কার প্রত্যাশা করছি। যেহেতু আপনি জেনে গেছেন অতীতের সব আবিষ্কারই কোরআন থেকে হয়েছে তাই আপনিই পারবেন গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার করতে। ওনি ক্লাসে গিয়ে ছাত্রদের হুমকি দিয়েছিলেন যে, কে ফাঁস করেছে? তাকে দেখে নিবেন। কিন্তু চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে এগিয়ে আসেন নি।

পদার্থবিদ্যার অনেক শিক্ষকই আছেন যারা প্রগতিশীল ও বিজ্ঞানমনস্ক। কিন্তু তাদের পরিবর্তে অপ্রগতিশীল ও বিজ্ঞানমনস্ক নন তাদেরই কদর বেশি সামাজিকভাবে। তারা বিজ্ঞানবিরোধী কথা বলে সহজেই জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। এমনসব বই লিখেন যা সাধারণ মানুষ পাঠ করে দ্রুতই বিজ্ঞানমনস্কবিরোধী হয়ে উঠেন। তারা এবং কিছু সংগঠন এ ধরনের শিক্ষকদের খুবই গুরুত্ব দিয়ে বক্তা হিসেবে নিয়ে যান এবং বিজ্ঞানবিরোধী প্রচার করান। বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রায় তারাই হয়ে উঠেন প্রতিবন্ধক।

লেখক: শিক্ষাবিদ

ঢাকাটাইমস/১৭জুলাই/এসকেএস

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফেসবুক কর্নার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :