মেরিনারদের শিপে যোগদান আর করোনাভাইরাস

আতিক ওয়া খান
 | প্রকাশিত : ১৯ জুলাই ২০২০, ১৭:৩৩

১. মধ্যরাতের পর ভোর ৩.৪৫ এ ফ্লাইট। সবার কাছ হতে বিদায় নেয়া সম্পন্ন। ব্যাগেজ গুছিয়ে নিয়ে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি চলছে কিছু বাদ পড়ে গেল কিনা। টেবিলের উপর পাসপোর্ট, টিকেট আর মানিব্যাগটা পড়ে আছে। বহু চেষ্টা তদবির করে প্রায় ৯ মাস পর এই শিপের চাকরিটা পাওয়া গেছে।

সন্ধ্যায় করোনা টেস্টের রিপোর্ট হাতে এল। ছেলেটা বজ্রাহত হয়ে দেখল লেখা কোভিড পজিটিভ। তড়িঘড়ি করে ফ্লাইট ক্যান্সেল করতে হল, হয়ত অন্য কেউ যাবে এখন ছেলেটার জায়গায়৷ অথচ তেমন কোনো উপসর্গ নেই, হালকা গলা ব্যথা ছাড়া। গত কদিনে এপলোতে করোনা টেস্ট আর ম্যানিং অফিসে দুই তিনবার যেতে হয়েছে, তাতেই সংক্রামিত হয়েছে রোগ।

২. যেদিন ফ্লাইট ছিল, সেদিন এই ছেলেটা এয়ারপোর্টে গিয়ে জানল ওকে টু বোর্ড কিংবা এজেন্টের গ্যারান্টি লেটার দিয়ে লন্ডন হয়ে জিব্রাল্টারের ফ্লাইটে চড়তে দিবে না। ভিসা অথবা লাইবেরিয়ার সিডিসি লাগবে। বেচারা বাধ্য হয়ে বাসায় ফিরে এল। সেদিন ওর হাতে কোভিড নেগেটিভ রিপোর্ট ছিল।

ভাগ্যিস ফিরে এসেছিল, কারণ এর কদিন পরেই ওর মধ্যে করোনার সব উপসর্গ ফুটে উঠল। ছেলেটা সংক্রামিত হয়েছে ফ্লাইটের ২ দিন আগে এপলোতে করোনা টেস্ট করতে গিয়ে। দুই সপ্তাহ ভুগে এরপর সুস্থ হয়েছে, আলহামদুলিল্লাহ।

৩. চট্টগ্রামে শিপ জয়েনিং৷ ঢাকা হতে ৩য় ছেলেটা চট্টগ্রাম এসেছে পরিবারের সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে। চট্টগ্রামে ওর কোভিড টেস্ট করিয়ে পাওয়া গেল কোভিড পজিটিভ। অথচ খুবই হালকা বা মৃদু উপসর্গ ছিল শরীরে। বাধ্য হয়ে ফিরে গেল ঢাকায়।

৪. আমার পরিচিত এক প্রবাসী দম্পতি দেশে ৩ মাস লকডাউনে সুস্থ ছিলেন। উনারা কয়েকদিন আগে প্লেনে ট্রাভেল করে আমেরিকা যাবার পরপর করোনা পজিটিভ হয়েছেন৷ উনাদের ধারণা প্লেনের সহযাত্রী হতে আক্রান্ত হয়েছেন।

মেরিনারদের শিপে যোগ দেয়ার জন্য ফ্লাইট শুরু হয়েছে। বাসা হতে বের হবার পর হতে ম্যানিং অফিসে কয়েকবার যাতায়াত, হাসপাতালে করোনা টেস্ট, বাস কিংবা যে কোন ট্রান্সপোর্ট, এয়ারপোর্ট এর ফর্মালিটি, প্লেনের সব সহযাত্রী, আবার এয়ারপোর্ট আর অন্যান্য ফর্মালিটি...শিপে পৌঁছানো পর্যন্ত সর্বোচ্চ সতর্কতা কাম্য৷

সবার উচিত হবে স্ট্যান্ডার্ড মাস্ক, গগলস, গ্লাভস এবং প্রয়োজনে পিপিই পরে ভ্রমণ করা। এবং অবশ্যই সততার সাথে করোনা টেস্ট করা। এর সাথে নিজের এবং অন্যান্যদের জীবনের ঝুঁকি জড়িত৷ শিপে সম্প্রতি দুজন চীফ ইঞ্জিনিয়ার এর মৃত্যু সংবাদ পড়েছি, দুজনেই করোনা পজিটিভ। ভুয়া রিপোর্ট নিয়ে ফ্লাইটে হয়ত চড়তে পারবে কিন্তু নিজের সাথে সাথে ঝুঁকিতে ফেলবে শিপের বাকি সবাইকেও।

একজন মেরিনারও ইনফেক্টেড হয়ে শিপে গেলে সেই শিপে করোনা ছড়িয়ে যেতে সময় লাগবে না। আর শিপের চিকিৎসা সুবিধা সম্পর্কে আমরা সবাই জানি। শিপ হতে নিকটস্থ শহরের চিকিৎসা সুবিধা পাওয়া এখন অনেক কঠিন।

একজন শিপ সুপারিটেন্ডেন্ট আমাকে জানালেন, উনার এক অসুস্থ আর আহত মেরিনারকে সব ফর্মালিটি পূরণ করে সিঙ্গাপুরের হাসপাতালে নিতে মোট ৮ দিন সময় লেগেছে। সবাই সতর্ক থাকুন, নিরাপদ থাকুন।

লেখক: মেরিন অফিসার ও লেখক

ঢাকাটাইমস/১৯জুলাই/এসকেএস

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফেসবুক কর্নার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :