রক্ত নিয়ে প্রতারণা!

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ২২ জুলাই ২০২০, ২৩:৪২
অ- অ+

আশিক হাসান। নিজেকে কখনো পরিচয় দেন স্বেচ্ছাসেবী, কখনো বা বাংলাদেশ ইয়ুথ ফাউন্ডেশনের সভাপতি, আবার কখনো বা বলাকা সংগঠনের সভাপতি। সম্প্রতি রক্ত নিয়ে প্রতারণার অভিযোগ করেছেন রক্তদাতা ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী শাহীনুর ইসলাম শাহীন।

সেই অভিযোগের সূত্র ধরে অনুসন্ধানে বেড়িয়ে আসে আরও কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য। শাহীনের অভিযোগ, রক্ত নিয়ে কাজ করা বলাকার সভাপতি আশিক হাসান আমাকে কল দেয়- ব্লাড ডোনেট করি। তারপর আমি রোগীর মাধ্যমে জানতে পারি তাদের বিল ধরা হয়েছে ১৩৫০ টাকা। কিন্তু ব্লাড ব্যাগও রোগী বাইরে থেকে কিনে দিয়েছে।

শাহীন আরও বলেন, আমি ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তারা আমাকে একটি ভাউচার দেখায়। সেই ভাউচার দেখে আমি অবাক হয়ে যাই। সেখানে এইচবিএসএউয়াই, এইচআইভি, ভিডিআরএল, ক্রস ম্যাচিং করা হয়েছে বলে দেখায়। কিন্তু আমার শুধু ক্রস ম্যাচিং ছাড়া আর কোনো টেস্ট করা হয়নি।

একই অভিযোগ দিলেন মাগফির মাহমুদ বিল্লাল। বিল্লালের অভিযোগ, কোনো ব্লাড ডোনার বা রোগী যদি আশিকের নির্দিষ্ট ক্লিনিক ছাড়া অন্য ক্লিনিক বা হাসপাতালে করতে চায় তখন আশিক রোগীর সাথে খারাপ আচরণ করে।

এ রকম বানোয়াট বিলের শিকার কুষ্টিয়ার খোকসার অনেক মানুষ। তবে খোকসার প্রভাবশালীদের রেফারেন্সের বেলায় আশিক যেন ধোয়া তুলশী পাতা।

আশিক এই অপকর্মের সঙ্গী খোকসা উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও বলাকা খোকসা উপজেলা ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক আফজাল হোসেন।

অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে আশিকের প্রতারণার আরেকটি চাঞ্চল্যকর তথ্য। গত ২ বছর আগে এলাকার যুবসমাজের সমন্বয়ে খোকসাতে গড়ে তোলে খোকসা ইয়ুথ ফাউন্ডেশন নামে একটি সংগঠন। সেই সংগঠনের ব্যানারে সংগঠনটির সদস্যরা উপজেলার বিভিন্ন স্কুল-কলেজ, বাজারসহ সমাজের বিত্তবান মানুষের কাছ থেকে মোট ৩৪ হাজার টাকা কালেকশন করা হয়।

আর ওই কালেকশনের সঙ্গে জড়িত শাহনেওয়াজ ইবনে মারুফ মুন। মুনসহ ওই সংগঠনটির সাথে জড়িত আকাশ, রাসেল বিশ্বাস, জুয়েল রানাসহ ওই সংগঠনের সদস্যরা বলেন, আমরা জানতে পারি- ক্যান্সার আক্রান্ত তাসলিমাকে শুধু টেস্ট ফি বাবদ ৫ হাজার টাকা পরিশোধ করেছে।

এ ব্যাপারে আকাশ হোসেন বলেন, আমরা যা কালেকশন করতাম তা হিসাব করে আশিকের কাছে দিয়ে দিতাম। তারপর যখন জানতে পারি, তাসলিমাকে শুধু টেস্ট বাবদ মাত্র ৫ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। তারপর আমরা আশিকের কাছে হিসাব চাইলে- সে আমাদের একটি হিসাব দেয়।

আমরা সেই হিসাবটির ড্রাফট ছবি তুলে রাখি। সেই হিসাবটির মধ্যে সে যে যে খাত ব্যবহার করেছে- তা সত্যিই হাস্যকর ছিল। হিসাবটির তালিকা ছিল এরকম- তমিজের দোকানের বাকি বাবদ ১ হাজার টাকা, লিটনের দোকানে চা বিল বাবদ ১ হাজার টাকা, নেট বিল ২ হাজার টাকা, বিদ্যুৎ বিল ৪০০ টাকা, ঘর ভাড়া ৩৪৫০ টাকা, রোগীর টেস্ট ৩৫০০ টাকা, ওষুধ ১ হাজার টাকা, ঢাকা যাতায়াত ৮ হাজার ৭০০ টাকা, আবার টেস্ট ও ওষুধ এক হাজার টাকা, মোবাইল লোড ৫০০ টাকা, চেয়ার মেরামত ৮২ টাকা, মনিহারি খরচ ৬০০ টাকা, ইমার্জেন্সি ওষুধ ১ হাজার টাকা, ত্রাণ বক্স ৪২৫ টাকা, নৌকা ভ্রমণ ২ হাজার টাকা, বাসস্ট্যান্ডের আইলান্ড আন্দোলন ১২০০ টাকা, ঘরভাড়া ৪ হাজার, ডাক্তার খরচ ২ হাজার।

আকাশ বলেন, আমরা যতদূর জানি ঢাকায় যাওয়া বাবদ খোকসা উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আল-মাছুম মুর্শেদ শান্ত ভাই বাসের সাতটি টিকিট কেটে দিয়েছিলেন।

এ ব্যাপারে কথা বলা হয় ক্যান্সার আক্রান্ত রোগী তাসলিমার মায়ের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমার মেয়ের জন্য ইয়ুথ ফাউন্ডেশনের ছেলেরা যে টাকা তুলেছিল তার থেকে আমরা মোট ৫ হাজার টাকা পেয়েছি। তাও নগদ না। টেস্ট বাবদ পরিশোধ করেছে। এর মাঝে ঢাকায় গিয়েছিলাম। সেখানে আমাদের ফ্লোরে রেখে ওই ছেলেটি (আশিক) বান্ধবী নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছিল। আমরা মেয়েদের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে সে বলে- আমাদের ঢাকা কমিটির লোকজন তারা।

পরে অনেক কাকুতি-মিনতি করেও দুই হাজার টাকা ওষুধের চেয়েও পাওয়া যায়নি।

এ ব্যাপারে আশিক হাসান বলেন, আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আছে সেসব অভিযোগ শতভাগ অবান্তর ও ভিত্তিহীন।

আর তাছলিমার ব্যাপারে তার সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও তাছলিমার মায়ের অভিযোগ সম্পর্কে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি আশিক হাসান।

এই প্রতারণার কার্যক্রমের সাথে আশিকের সহায়তাকারী ছাত্রলীগ নেতা আফজাল হোসেনের ব্যাপারে উপজেলা ছাত্রলীগে আহ্বায়ক শিমুল আহমেদ খান বলেন, আমি এমন অভিযোগ পাইনি। তবে আমরা এর সত্যতা পেলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেব।

পরে তিনি এলাকার ছেলে হিসেবে বিষয়টি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ করেন।

এ ব্যাপারে খোকসা হেলথ কেয়ার ডায়াগনস্টিক ও প্রাইভেট হাসপাতালের দায়িত্বরত ব্যবস্থাপক শাওনের কাছে শাহীনের টেস্টের রিপোর্ট চাওয়া হলে তিনি শুধু ভাউচারটি দেখান। মূল রিপোর্ট চাইলে- তিনি দিতে পারেননি।

এরপরই ক্লিনিক মালিক ফোন দিয়ে এই প্রতিবেদককে নিউজ প্রকাশ না করার অনুরোধ জানান।

তাছলিমার ঢাকায় যাওয়ার ব্যাপারে খোকসা উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আল-মাছুম মুর্শেদ শান্ত বলেন, আমি বরাবরই খোকসার অসহায় মানুষের পাশে থেকে সাহায্য করার চেষ্টা করি। তারই ধারাবাহিকতায় আমি তাদের ঢাকা যাওয়া-আসা বাবদ বাসের সাতটি টিকেট কিনে দিই। এর বেশি কিছু আমি জানি না।

এসব অভিযোগ খোকসা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মেজবাহ উদ্দীনের কাছে তুলে ধরা হলে তিনি বলেন, আসলে আমি এ ব্যাপারে কিছুই জানি না। আমার কাছে কেউ অভিযোগও দেয়নি। আমি অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেব।

উল্লেখ্য, করোনাক্রান্তির সময়ে খোকসা উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আল-মাছুম মুর্শেদ শান্ত ব্যক্তিগতভাবে ১৫ হাজার মানুষকে খাদ্য সহায়তা দিয়েছেন তার কর্মীদের মাধ্যমে। আর ত্রাণ বিতরণের সকল আপডেট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করতেন তার নেতা-কর্মীরা। আর সেই বিতরণের পোস্টে নানা নেতিবাচক মন্তব্যও করতো বলাকা সভাপতি আশিক।

(ঢাকাটাইমস/২২জুলাই/এলএ)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
বিশ্বের ৪০০ উদ্ভাবনী বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ২৫৭তম উত্তরা ইউনিভার্সিটি
লঙ্কানদের মাটিতে ইতিহাস গড়া জয় টাইগারদের
গোপালগঞ্জের সংঘর্ষ নিয়ে ভুয়া তথ্য ও ছবি ছড়াচ্ছে আ.লীগ: প্রেস উইং
গোপালগঞ্জে কড়াকড়ি কারফিউ চলছে, আজ সন্ধ্যা পর্যন্ত বলবৎ
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা