মধুর যত গুণ

স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং যাবতীয় রোগ নিরাময়ে মধুর গুণ অপরিসীম। খাদ্য ও ওষুধ হিসেবে উভয়বিধ পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ মধু। প্রাচীনকাল থেকেই পারিবারিকভাবে ‘পুষ্টিকর ও শক্তিবর্ধক’ পানীয় হিসেবে মধু সব দেশের মানুষ অত্যন্ত আগ্রহ সহকারে ব্যবহার করে আসছে।
মধুতে যেসব উপকরণ রয়েছে তন্মধ্যে প্রধান উপকরণ সুগার। সুগার বা চিনি আমরা অনেকেই এড়িয়ে চলি। কিন্তু মধুতে গ্লুকোজ ও ফ্রুকটোজ এ দুটি সরাসরি মেটাবলাইজড হয়ে যায় এবং ফ্যাট হিসেবে জমা হয় না।
মস্কো বিশ্ববিদ্যালয়ে মধুর নমুনা পরীক্ষায় দেখা গেছে, এতে অ্যালুমিনিয়াম, বোরন, ক্রোমিয়াম, কপার, লেড, টিন, জিংক ও জৈব এসিড (যেমন-ম্যালিক এসিড, সাইট্রিক এসিড, টারটারিক এসিড এবং অক্সালিক এসিড), কতিপয় ভিটামিন, প্রোটিন, হরমোনস, এসিটাইল কোলিন, অ্যান্টিবায়োটিকস, ফাইটোনসাইডস, সাইস্টোস্ট্যাটিক্স এবং পানি (১৯-২১%) ছাড়াও অন্যান্য পুষ্টিকর উপাদান রয়েছে।
ভিটামিন যেমন- ভিটামিন সি বা অ্যাসকরবিক এসিড, ভিটামিন বি-১, বি-২, বি-৩, বি-৫, বি-৬, ভিটামিন-ই, ভিটামিন-কে, ভিটামিন-এ বা ক্যারোটিন ইত্যাদি বিদ্যমান। মধু এমন ধরনের ওষুধ, যার পচন নিবারক (অ্যান্টিসেপটিক), কোলেস্টেরলবিরোধী এবং ব্যাকটেরিয়াবিরোধী ধর্ম আছে।
প্রতিদিন সকালে এবং বিকালে খালি পেটে চা চামচের দুই চামচ করে মধু ডান হাতের তালুতে নিয়ে চেটে খেতে হবে। নিয়মিত ও পরিমিত মধু খেলে যেসব উপকার পাওয়া যায় তা হলো-
হৃদরোগ প্রতিরোধ করে। রক্তনালি প্রসারণের মাধ্যমে রক্ত সঞ্চালনে সহায়তা করে এবং হৃদপেশির কার্যক্রম বৃদ্ধি করে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
দাঁতকে পরিষ্কার ও শক্তিশালী করে।
দৃষ্টিশক্তি ও স্মরণশক্তি বৃদ্ধি করে।
মধুর রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্ষমতা, যা দেহকে নানা ঘাত-প্রতিঘাতের হাত থেকে রক্ষা করে।
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্যানসার প্রতিরোধ করে ও কোষকে ফ্রি রেডিকেলের ক্ষতি থেকে রক্ষা করে।
বার্ধক্য অনেক দেরিতে আসে।
মধুর ক্যালোরি রক্তের হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বাড়ায়, ফলে রক্তবর্ধক হয়।
যারা রক্ত স্বল্পতায় বেশি ভোগে বিশেষ করে মহিলারা, তাদের জন্য নিয়মিত মধু সেবন অত্যন্ত ফলদায়ক।
গ্লাইকোজেনের লেভেল সুনিয়ন্ত্রিত করে।
আন্ত্রিক রোগে উপকারী। মধুকে এককভাবে ব্যবহার করলে পাকস্থলীর বিভিন্ন রোগের উপকার পাওয়া যায়।
আলসার ও গ্যাস্ট্রিক রোগের জন্য উপকারী।
দুর্বল শিশুদের মুখের ভেতর পচনশীল ঘায়ের জন্য খুবই উপকারী।
শরীরের বিভিন্ন ধরনের নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে এবং উষ্ণতা বৃদ্ধি করে।
ভিটামিন-বি কমপ্লেক্স এবং ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ মধু স্নায়ু এবং মস্তিষ্কের কলা সুদৃঢ় করে।
মধুতে স্টার্চ ডাইজেস্টি এনজাইমস এবং মিনারেলস থাকায় চুল ও ত্বক ঠিক রাখতে অনন্য ভূমিকা পালন করে।
মধু কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
ক্ষুধা, হজমশক্তি ও রুচি বৃদ্ধি করে।
রক্ত পরিশোধন করে।
শরীর ও ফুসফুসকে শক্তিশালী করে।
জিহ্বার জড়তা দূর করে।
মধু মুখের দুর্গন্ধ দূর করে।
বাতের ব্যথা উপশম করে।
মাথা ব্যথা দূর করে।
শিশুদের দৈহিক গড়ন ও ওজন বৃদ্ধি করে।
গলা ব্যথা, কাশি-হাঁপানি এবং ঠান্ডাজনিত রোগের বিশেষ উপকার করে।
শিশুদের প্রতিদিন অল্প পরিমাণ মধু খাওয়ার অভ্যাস করলে তার ঠান্ডা, সর্দি-কাশি, জ্বর ইত্যাদি সহজে হয় না।
শারীরিক দুর্বলতা দূর করে এবং শক্তি-সামর্থ্য দীর্ঘস্থায়ী করে।
ব্যায়ামকারীদের শক্তি বাড়ায়।
মধু খাওয়ার সাথে সাথে শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি করে, ফলে শরীর হয়ে উঠে সুস্থ, সতেজ এবং কর্মক্ষম।
লেখক: ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব), মসলা গবেষণা কেন্দ্র, বিএআরআই, শিবগঞ্জ, বগুড়া
ঢাকাটাইমস/৭নভেম্বর/এসকেএস

মন্তব্য করুন