নির্মাণের পাঁচ বছরেও কাজে আসছে না সেতুটি

জাহাঙ্গীর আলম ভূঁইয়া, সুনামগঞ্জ
  প্রকাশিত : ২৫ মার্চ ২০২১, ১৬:১৯
অ- অ+

হাওরের এক পাশে একটি সেতু। সেতুটির দুপাশেই নেই সংযোগ সড়ক। সেতু নির্মাণের পাঁচ বছর পার হলেও সংযোগ সড়ক নির্মাণের কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ। সেতুটির উত্তর ও দক্ষিণ পাশে আছে বোরো ধান, বাদাম ও সবুজ ফসলী জমির মাঠ।

সংযোগ সড়ক নির্মাণ না হওয়ায় এখানকার উৎপাদিত কৃষিপণ্য পরিবহন করা ও দুই গ্রামের শতাধিক পরিবারের শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ হেঁটেও চলাচল করতে পারছে না। ফলে এই সেতুটি কারো কোনো উপকারেই আসছে না। বছরের পর বছর পার হলেও এই সমস্যা সামাধান না করায় এলাকাবাসীর মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে।

এলাকার লোকজন বলেন, গাজীপুর গ্রামের দুই কিলোমিটার সংযোগ সড়ক নির্মাণ করে সেতুটি তৈরি করা হলে ভালো হত। এলাকার বেকার যুবকরা মটরসাইকেল, টমটম, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতে পারত। এখন সড়কই ঠিকভাবে তৈরি হয়নি। এর ফলে নির্মিত সেতুটি মানুষের কাজে আসছে না।

সেতুটি সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার সদর ইউনিয়নের গাজীপুর গ্রাম সংলগ্ন মাঠিয়ান হাওরে অবস্থান।

উপজেলার গাজীপুর, জামলাবাজ গ্রাম থেকে টাকাটুকিয়া (তাহিরপুর-বাদাঘাট সড়কের) দূরত্ব দুই কিলোমিটার। এই সড়ক সংলগ্ন রয়েছে একটি কলেজ। আর এই সড়ক উপজেলা সদর ও হাসপাতালের সঙ্গে সহজ যোগাযোগ মাধ্যম। কিন্তু দুই কিলোমিটার ডুবন্ত সড়ক উচু করে ১২ মাস চলাচলের উপযোগী করে নির্মাণ না হওয়ায় যুগ যুগ ধরে চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে গ্রামের শতাধিক পরিবারের মানুষ।

২০১৭-১৮ সালে অপরিকল্পিতভাবে এই সেতুটি নির্মাণ করার কারণে বর্ষায় নৌযান চলাচলে ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে। পাশাপাশি সরকারের দায়িত্বশীলদের দায়িত্বহীনতায় বরাদ্দের প্রায় ৩১ লাখ টাকার সুফল ভোগ করা যাচ্ছে না বলে মন্তব্য এলাকাবাসীর।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার (পিআইও) কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে উপজেলার তাহিরপুর সদর ইউনিয়নে গাজীপুর গ্রাম থেকে জামালগড় গ্রামের পাশে তাহিরপুর-বাদাঘাট এলজিইডি সড়ক পর্যন্ত মাটিয়ান হাওরের মধ্যে ডুবন্ত সড়কে সেতু নির্মাণ করে। ৪০ ফুট দৈর্ঘে্যর এ সেতু নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় ৩০ লাখ ৯০ হাজার টাকা।

২০১৮ সালের মে মাসে সংযোগ সড়ক ছাড়াই সেতুটির নির্মাণ কাজ শেষ করে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার (পিআইও) কার্যালয়। ফলে আজ পর্যন্ত কোনো কাজেই আসছে না সেতুটি।

গাজীপুর গ্রামের ইমান আলী, আব্দুল কাদির ও মাফিক মিয়া জানান, বর্ষায় নৌকা চলাচলে ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়। আর সড়ক নির্মাণ না করে অপরিকল্পিতভাবে সেতুটি কেন নির্মাণ করা হলো তা কারো বোধগম্য হচ্ছে না। আর এই টাকা এইভাবে খরচ না করে সড়ক নির্মাণ কাজে ব্যয় করা হলে সঠিক হতো। এখন এই সড়কটি না হওয়ায় ছেলে মেয়েরা স্কুল, কলেজে যেতে পারছে না।

জামলাবাজ গ্রামের বাসিন্দা হানিফ মিয়া বলেন, সড়ক নির্মাণ না করে সেতু নির্মাণ করায় এখন কোনো কাজে লাগছে না। ফলে বর্ষায় নৌকা আর শুষ্ক মৌসুমে আরো তিন থেকে চার কিলোমিটারের বেশি পায়ে হেটে তাহিরপুর-বড়দল সড়ক দিয়ে উপজেলা সদরে চলাচল করতে হয়।

তাহিরপুর সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বোরহান উদ্দিন বলেন, গাজীপুর গ্রামের সঙ্গে সড়ক সংযোগ না থাকায় সেতুটি মানুষের কোনো উপকারে লাগছিল না। পরে তাহিরপুর-বাদাঘাট সড়ক থেকে ওই সেতু পর্যন্ত সড়কে মাটির কাজ করা হয়েছিল। কিন্তু অপর অংশ আর হয়নি। গ্রামবাসীর যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য সড়কটি নির্মাণ হলে ওই সেতুটি গ্রামবাসীর কাজে লাগবে। না হলে কোনো কাজেই আসবে না এটি।

তাহিরপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের উপসহকারী প্রকৌশলী সুব্রত দাস বলেন, সড়কে ব্রিজটি গুরুত্বপূর্ণ। ২০১৯ সালে এই সড়কে মাটির কাজ করা হয়। এই সড়কে গাজীপুর স্কুলের সামনে বড় ভাঙনের জায়গায় আরেকটি বড় সেতু হবে এবং অসম্পূর্ণ সড়কও নির্মাণ হবে। এরকম প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছে। অনুমোদন হলেই কাজ শুরু হবে।

তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান করুনা সিন্ধু চৌধুরী বাবুল জানান, সড়ক না থাকায় গাজীপুর, জামলাবাজ গ্রামের মানুষ এই ব্রিজ দিয়ে চলাচল করতে পারছে না। সংযোগ সড়ক নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় প্রদক্ষেপ নেয়া হবে।

(ঢাকাটাইমস/২৫মার্চ/কেএম)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
সেই রাত স্মরণে তালা ভেঙে বেরিয়ে এলেন রোকেয়া হলের ছাত্রীরা
রাতে ‘তুমি কে আমি কে রাজাকার রাজাকার’ স্লোগানে মুখর ঢাবি ক্যাম্পাস
চাপাতি ধরে ফোন-মানিব্যাগের সঙ্গে জামা-জুতা ছিনতাইয়ের ঘটনায় গ্রেপ্তার ১
সিরাজগঞ্জে সরকারি অফিস ‘দখল করে’ জামায়াতের কার্যালয়ে
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা