খরায় অকেজো কয়েক হাজার নলকূপ, দুর্ভোগ চরমে

আমিনুল হক সাদী, কিশোরগঞ্জ
 | প্রকাশিত : ০৭ এপ্রিল ২০২১, ১৫:২৩

চৈত্র মাসের খরায় পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় কিশোরগঞ্জে কয়েক হাজার সাধারণ নলকূপে পানি উঠছে না। ফলে অকেজো হয়ে পড়ে আছে নলকূপগুলো। ফলে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় সুপেয় পানির অভাবে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। কিছু নলকূপে পানি উঠলেও এর কয়েকটি আবার আর্সেনিকযুক্ত।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরাধীন কিশোরগঞ্জ জেলার হস্তচালিত নলকূপের পরিসংখ্যানে জানা গেছে, জেলার তেরটি উপজেলায় মোট নলকূপ রয়েছে ৪১ হাজার ৯৭৭টি। মোট চালু রয়েছে ৩৮ হাজার ৮৯৬টি। মোট অকেজো রয়েছে তিন হাজার ৮১টি নলকূপ। এছাড়াও এসব সরকারি নলকূপের পাশাপাশি জেলার প্রায় ৩৩ লাখ জনসাধারণের অগভীর ও গভীর নলকূপও রয়েছে হাজার হাজার।

কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার মহিনন্দ ইউনিয়নের গোয়ালাপাড়া, নয়াপাড়া, চরপাড়া, কলাপাড়া, ভাষ্করখিলা, ভদ্রপাড়া, নাথপাড়া, কাশুরারচর, আগপাড়া, দরিয়াবাদ, চংশোলাকিয়াসহ ১৯টি গ্রামের মধ্যে ১০টি গ্রামের নলকূপগুলোয় পানি উঠছে না। কোনো কোনো গৃহস্থ চুরির ভয়ে পাইপ থেকে নলকূপ খুলে ঘরে নিয়ে রেখেছেন। গৃহিণী ও কিশোরীরা কলসি কাঁখে দূরবর্তী নলকূপ থেকে পানি সংগ্রহ করছেন। মসজিদের নলকূপে পানি না ওঠায় মুসল্লিরা অজু করতে পাশের ডোবার পানি ব্যবহার করছেন। এসব গ্রামে বর্তমানে ধোয়া-মোছার কাজে পুকুর কিংবা ডোবার পানি ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে হেপাটাইটিস-বি, ডায়রিয়া, আমাশয়সহ বিভিন্ন পানিবাহিত রোগের সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ফালগুন-চৈত্র-বৈশাখ মাসে খরার কারণে অবস্থা আরও প্রকট আকার ধারণ করবে বলে এলাকাবাসীর আশঙ্কা।

বর্তমান অবস্থা থেকে বলা যায়, দেড় মাস পর ৯০ শতাংশ নলকূপেই পানি উঠবে না। এ ব্যাপারে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন স্থানীয়রা।

ইউনিয়নের নয়াপাড়া গ্রামের শাহ আলম, হুমায়ুন, মুশাহিদ জানান, ‘আমাদের নয়াপাড়া গ্রামে লোকসংখ্যা দেড় হাজার। তার মধ্যে নয়াপাড়ায় সহস্রাধিক মানুষের বাড়িতে পানির কল নেই। পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় অধিকাংশ নলকূপ অকেজো হয়ে পড়ায় পূর্বপাড়া গ্রাম থেকে এলাকার বাসিন্দাদের পানি সংগ্রহ করতে হচ্ছে। কয়েকটি বাড়ির পর একটি নলকূপে পানি পাওয়া যায়।’

গোয়ালাপাড়া জামে মসজিদের ইমাম হাফেজ রবিন জানান, আমাদের মসজিদের নলকূপটিতে পানি না ওঠায় বিকল্প পদ্ধতিতে মুসুল্লীদের জন্য ওজুর ব্যবস্থা করা হয়েছে। আমার নিজের বাড়ির নলকূপেও পানি আসে না।

মহিনন্দ ইউপি চেয়ারম্যান মনসুর আলী জানান, গত পাঁচ বছর ধরে এই সময়টায় পানির স্তর নিচে নামছে। বিশেষ করে পানযোগ্য পানির চরম সংকট চলছে। নলকূপের জন্য অনেকেই আবেদনপত্র ইউপি কার্যালয়ে জমা দিয়েছেন। বরাদ্দ না দিলে আমাদের করার কিছু নেই।

কয়েকজন পৌর নাগরিক জানিয়েছেন, স্থানীয় সরকার বিভাগের পানি বিষয়ে একটি আইন উল্লেখ আছে- পৌরসভার পানি ছাড়া এখানকার নাগরিকরা ব্যক্তিগতভাবে নলকূপ বসানোর জটিলতা রয়েছে। ফলে অনেকেই ব্যক্তিগতভাবে নলকূপ বসাতেও পারছে না।

এ বিষয়ে কিশোরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র পারভেজ মিয়ার সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তিনি ফোন রিসিভ না করেননি।

তবে পৌর সচিব হাসান জাকির জানিয়েছেন, একটি আইন আছে যে, পৌরসভার ভেতরে ভূগর্ভস্থ সকল পানির মালিক পৌরসভার। এই আইনটি অনেক আগেই করা হয়েছে। ব্যক্তিগতভাবে নলকূপ বসাতে কোনো বাঁধা নেই। তবে নলকূপগুলো এক হাজার ফিটের গভীরে হতে হবে। এ কারণে অনেকে বসাতে চায় না। তবে, পৌরসভার সাপ্লাইয়ের পানির কিছুটা সমস্যা আগে ছিল বর্তমানে কোনো সমস্যা নেই।’

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর কিশোরগঞ্জ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মশিউর রহমানের জানান, এসময় জেলার অধিকাংশ এলাকায় পানির স্তর নিচে নেমে যায়। বৃষ্টি না হওয়া এবং প্রচণ্ড খরার কারণে এবার অবস্থা আগের চেয়ে প্রকট। তবে, বৃষ্টি হলে অবস্থার উন্নতি হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

(ঢাকাটাইমস/৭এপ্রিল/পিএল)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

বরিশালে মাদকসহ চার নারী-পুরুষ গ্রেপ্তার 

স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনের লড়াইয়ে ছাত্রলীগ সর্বতোভাবে পাশে থাকবে: গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী

দিনাজপুরে যাত্রীবাহী বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাছের সঙ্গে ধাক্কা: আহত ২৫

উপজেলা নির্বাচন: চেয়ারম্যান প্রার্থীসহ ২৬ জনের বিরুদ্ধে সাইবার ট্রাইব্যুনালে মামলা

চাঁদপুরে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে পুড়িয়ে হত্যা, বেনাপোলে আটক

মানিকগঞ্জে পৌঁছেছে বিমান দুর্ঘটনায় নিহত পাইলট আসিম জাওয়াদের মরদেহ

মেহেরপুরে অপরিপক্ব লিচুতে বাজার সয়লাব

সরাইলে আগুনে পুড়ল ১২ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান

উপজেলা নির্বাচন: আপিলে প্রার্থিতা ফিরে পেলেন রাণীনগরের ৫ জন

ফরিদপুরে কালবৈশাখীর তাণ্ডবে বিধ্বস্ত তিন উপজেলা, বন্ধ বিদ্যুৎ সংযোগ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :