একটি ঘরের আশা সায়জান বেগমের

আসাদ জামান, মানিকগঞ্জ
 | প্রকাশিত : ০১ মে ২০২১, ১২:৪০

‘ভবেতো আমার কেই নাইংকা। শুয়ামিতো (স্বামী) ম্যালা বছর আগেই মইরা গ্যাছে। বেটা ছাওয়ারও নাই। দুইডা মাইয়া আছিল বিয়া দেওনের পর আর খোঁজ খবর রাহে না। আগের বছর বৈশাখ মাসের ঝড়িতে ঘরডা আমার ভাইঙ্গা গেছে। মানইসের কাছ থিক্যা কিছু ট্যাহা পয়সা নিয়া ঘরের চাল উঠাইলেও ব্যাড়া দেওন পারি নাই। তাই পরনের কাপড় দিয়া ব্যাড়া দিয়া রাখছি।’ অশ্রুভরা চোখে এমন করেই আঞ্চলিক ভাষায় নিজের কথাগুলো বলছিলেন ৬৫ বছরের বৃদ্ধা সায়জান বেগম।

বৃদ্ধা সায়জান বেগম মানিকগঞ্জ পৌরসভার পৌলী এলাকায় বসবাস করেন। প্রায় ৩০ বছর আগেই তার স্বামী মারা গেছেন। তার কোনো ছেলে সন্তান নেই। দুই মেয়েকে বিয়ে দেয়ার পর মায়ের কোনো খোঁজ খবর রাখেন না তারা। বিধবা ভাতার কার্ড থাকলেও সেই অর্থ দিয়ে পূরণ হয় না সংসারের অভাব। তাই মানুষের বাড়ি বাড়ি কাজ করে নিজের খাবার জোটান তিনি। আর সম্পদ বলতে ছয় শতাংশ জায়গা আর দুইটি ছাগল আছে তার।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, টাকার অভাবে ঘরের চারপাশের বেড়া দিতে না পারায় পরনের কাপড় দিয়েই বেড়া দিয়েছেন তিনি। গত বছর কালবৈশাখী ঝড়ে থাকার একমাত্র ঘরটি ভেঙে যায়। দুঃস্থ প্রতিবন্ধী এই বৃদ্ধা মানুষের কাছ থেকে কিছু সহযোগিতা নিয়ে ঘরের চাল তুললেও দিতে পারেননি ঘরের বেড়া। তাই পরনের কাপড় দিয়েই প্রায় বছর খানেক ধরে বেড়া তৈরি করে নিদারুন কষ্টে দিন যাপন করছেন তিনি। প্রতিবন্ধী সায়জান বেগম সরকারের কাছে একটি ঘরের দাবি করেছেন।

প্রতিবেশী আসলাম হোসেন বলেন, তিনি আসলেই হত দরিদ্র মানুষ। তার আর্থিক অবস্থা খুবই খারাপ। আমাদের আশপাশের বাড়িগুলোতে যেয়ে টুকটাক কাজ করেন। প্রতিবন্ধী আর বয়স্ক হওয়ার কারণে আগের মতো কাজও করতে পারেন না। তার থাকার ঘরের অবস্থাও ভালো না। শীতের সময় অনেক কষ্ট করে থাকছেন তিনি। সামনে বর্ষাকাল তখন আরো সমস্যা হবে। তার একটা ঘরের বিশেষ প্রয়োজন। সরকার প্রতিবন্ধী সায়জান বেগমকে যদি একটি ঘর তৈরি করে দিতেন তাহলে বাকি দিনগুলো অন্তত এত কষ্ট হতোনা।

আরেক প্রতিবেশী আসমা আক্তার জানান, সায়জান বেগমের কেউ নাই। তার কোনো আয়ের উৎস নাই। সবার কাছ থেকে সাহায্য সহযোগিতা নিয়ে দিনযাপন করছেন। তার ঘরের বেড়া নাই। এর আগে এলাকার সবাই আলাপ আলোচনা করে তাকে বেড়া দেয়ার কথা বলেছিল। তারপর শুনলাম সরকার থেকে নাকি তাকে ঘর বানিয়ে দিবে। এখনতো প্রায় সাত-আট মাস যাবৎ তাকে ঘর দিবে বলে ঘুরাইতাছে লোকজন।

এ বিষয়ে মানিকগঞ্জ পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কবির হোসেন বলেন, আমি পৌরসভা নির্বাচনের আগে তার বাড়িতে গিয়েছিলাম। পরিবারের কেউ তার খোঁজ খবর রাখে না। তার স্বামী অনেক আগেই মারা গেছেন। আমি দেখেছি তার ছোট একটা ঘর আছে। কিন্তু চারপাশে কোনো বেড়া নাই। পরনের কাপড় দিয়ে চারপাশ ঢেকে রেখেছেন, যা দেখে আমার খুব খারাপ লেগেছে। দ্রুত জেলা প্রশাসক ও মেয়র মহোদয়ের সঙ্গে আলোচনা করে সায়জান বেগমকে একটি ঘরের ব্যবস্থা করে দেয়ার বিষয়ে আশাবাদী বলে জানান এই জনপ্রতিনিধি।

(ঢাকাটাইমস/১মে/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :