করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন কলামিস্ট আব্দুর রাশিদ ভূইয়া

কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জের গুজাদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মানবতাবিরোধী আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাক্ষী, সাংবাদিক, লেখক, কলামিস্ট মুহাম্মদ আব্দুর রাশিদ ভূইয়া (৬৭) করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। বুধবার রাত সাড়ে ৩টায় শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
মৃত্যুকালে তিনি দুই ছেলে, আত্মীয়–স্বজন ও অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। বৃহস্পতিবার বাদ জোহর নিজ গ্রাম করিমগঞ্জ উপজেলার গুজাদিয়া ইউনিয়নের রামনগরে নামাজে জানাজা শেষে তাকে দাফন করা হয়।
তার মৃত্যুতে গভীর শোক ও শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন কিশোরগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য সাবেক মন্ত্রী, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মুজিবুল হক চুন্নু, করিমগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য এমরান আলী ভূইয়া, কিশোরগঞ্জ যুদ্ধাপরাধ প্রতিরোধ আন্দোলন কমিটির সভাপতি মো. রেজাউল হাবীব রেজাসহ বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের ব্যক্তিবর্গ।
এছাড়া আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী আবদুর রশীদ ভুইয়ার (৭০) মৃত্যুতে তদন্ত সংস্থা মরহুমের আত্মার শান্তি কামনা এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করে শোক জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে।
করিমগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা মোহাম্মদ আবদুর রশিদ ভুইয়া। তিনি একজন বাম রাজনীতিবীদও। রাজনীতির পাশাপাশি বই পড়া ও লেখা নিয়েই কেটেছে তার জীবনটা। ২০১২ সালে প্রিয়তমা স্ত্রীকে হারিয়ে তিনি অসহায় হয়ে পড়েন। ২০১৩ সালে আন্তর্জাতিক মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইবুনালের তদন্ত সংস্থার কাছে ১৯৭১ সালে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধ কর্মকাণ্ডে জড়িত করিমগঞ্জের কয়েক রাজাকারের বিরুদ্ধে সাক্ষী দেন।
১৯৫৯ সালের ৩১ আগস্ট করিমগঞ্জ উপজেলার গোজাদিয়া ইউনিয়নের বৈরাটিয়াপাড়া গ্রামে সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে তিনি জন্ম গ্রহণ করেন। তার বাবা মরহুম সুরুজ আলী ভুইয়া ও মা মরহুমা ফাতেমা বেগম। প্রাথমিক পড়াশোনা রামনগর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। পরবর্তীতে এসএসসি পাশ করেন। ছাত্রাবস্থায় তিনি বাম রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে যান। রাজনীতির পাশাপাশি প্রবন্ধ ও ফিচার লিখেও প্রশংসিত হয়েছেন। তার অনেক প্রবন্ধ ও ফিচার সাপ্তাহিক বিচিত্রা, সাপ্তাহিক একতা, দৈনিক সংবাদ, দৈনিক জাহান, দৈনিক আজকের সারাদিন, সাপ্তাহিক মেঘনা, সাপ্তাহিক সন্ধানী, অর্থনীতি, প্রজন্ম, চিকিৎসা সাময়িকী, দৃশ্যপট, ধমনিসহ আরও অনেক পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।
তিনি একজন সৎ ও নিষ্ঠাবান রাজনীতিবিদ হিসেবেও খ্যাত। রাজনীতি করার কারণে কয়েকবার কারাবরণ করেন। তিনি ১৯৮২ হতে ১৯৯১ পর্যন্ত করিমগঞ্জ উপজেলার কমিউনিষ্ট পাটির সম্পাদক এবং ১৯৮৩-৯০ পর্যন্ত ক্ষেত মজুর সমিতি করিমগঞ্জ উপজেলা শাখার সভাপতি এবং জেলা ক্ষেত মজুর সমিতির দুই বারের সাধারণ সম্পাদক, দুই বার সহ-সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৪ সালে বিশিষ্ট জননেতা জমিয়ত আলীর জীবনীলেখ্য নির্ভর ‘চেনা চোখে জমিয়ত আলী’-শীর্ষক একটি ছোট্ কাগজ সম্পাদনা করেন। করিমগঞ্জের বিশিষ্ট পুঁথিকার মুন্সি আজিমুদ্দিনের হারিয়ে যাওয়া পুঁথি সাহিত্য নিয়ে ‘মুনশি আজিমুদ্দিন নামা’(২০০৫) নামক একটি গবেষণামূলক বই প্রকাশ করেন।
তিনি প্রবন্ধ লেখার পাশাপাশি সাংবাদিকতা পেশার সঙ্গেও জড়িত ছিলেন। ময়মনসিংহ থেকে প্রকাশিত দৈনিক আজকের বাংলাদেশ পত্রিকার কিশোরগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেছেন। কিশোরগঞ্জ থেকে প্রকাশিত দৈনিক আজকের সারাদিন পত্রিকায় গুরুত্বপূর্ণ পদে কাজ করেছেন। প্রতিদিন তিনি উপ-সম্পাদকীয় বিভাগে নিয়মিত লিখতেন। বিভিন্ন বিষয় নিয়েও মন্তব্য প্রতিবেদন লিখে আলোড়ন সৃষ্টি করেন। তিনি মানুষের দুঃখ দুর্দশা বিশেষ করে যখন লঙ্গরখানা খোলা হয়েছিলো তখন সেসব স্থানে গিয়ে মানুষের জীবনের দুঃখগাঁথা পত্রিকায় তুলে ধরেছেন।
তিনি করিমগঞ্জ পাঠাগারের সহসভাপতি ও করিমগঞ্জ শিল্পকলা অ্যাকাডেমির সহসভাপতিসহ বিভিন্ন সাহিত্য সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি টামনী আকন্দপাড়ার আ. কাদিরের মেয়ে তাহমিনার সঙ্গে বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হন। তার দুই ছেলের মধ্যে বড় ছেলে শাহরিয়ার রশিদ অন্তর কিশোরগঞ্জ কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের প্রশিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ছোট ছেলে ইমতিয়ার রশিদ প্রান্ত অধ্যয়নরত।
(ঢাকাটাইমস/৭জুন/কেএম)

মন্তব্য করুন