প্রিয় দোলন ভাই, আপনার ভালোবাসার প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ

মহামারির করোনাভাইরাসের দাপটে বিপর্যস্ত সারাবিশ্ব। প্রতিনিয়তই বাড়ছে সংক্রমণের হার। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। সারাদেশের মতো আলফাডাঙ্গা, বোয়ালমারী ও মধুখালীতেও (ফরিদপুর-১ সংসদীয় আসন) ছড়িয়ে পড়েছে করোনার সংক্রমণ। একদিকে সংক্রমণের ভয়, অন্যদিকে কঠোর বিধিনিষিধে বিপর্যস্ত জনজীবন। ফরিদপুর-১ আসনের আতঙ্কগ্রস্ত ও অসহায় মানুষকে সাহস জোগানো ও খাদ্য সহায়তা দিয়ে করোনাকালীন সময় তাদের পাশে থাকার প্রাণপণ চেষ্টা করেছেন ও করছেন সমাজ সেবামূলক সংস্থা কাঞ্চন মুন্সী ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান, দৈনিক ঢাকা টাইমস, ঢাকাটাইমস২৪.কম ও সাপ্তাহিক এই সময় সম্পাদক আরিফুর রহমান দোলন ভাই। আমি যার প্রত্যক্ষদর্শী। প্রিয় দোলন ভাইয়ের পক্ষ থেকে অসহায় মানুয়ের বাড়ি বাড়ি গিয়ে পৌঁছে দিয়েছি সেসব খাদ্য সামগ্রী, উপহার।
এতো গেল করোনাকালীন সময়ে দোলন ভাইর অসহায় মানুষের পাশে থেকে সহযোগিতার কথা। এবার একটু আমার নিজের কথা বলি…যদিও সারা বছরই বটবৃক্ষের মতো ছায়া হয়ে আমার পরিবারের পাশে থাকেন দোলন ভাই। সেসব গল্প না হয় আরেকদিন বলব। আজ শুধু করোনাকালীন সময়ে আমার ও আমার জন্মদাতা পিতার অসুস্থতায় তার পাশে থাকার গল্পটিই বলি।
আমার পরিবারে আমরা তিনজন সদস্য । আব্বু, আম্মু ও আমি। আমার পিতা মাওলানা আবু বকর সিদ্দিক। ষাটোর্ধ্ব । কিডনিতে পাথর, ডায়াবেটিসসহ নানা রোগে ভুগছেন। এর মধ্যেই গত ১৪ জুন আব্বুর সারা শরীরে ব্যথা শুরু হয়। এর তিনদিন পর থেকে ভীষণ জ্বর। মুখের রুচি চলে যায়। বন্ধ হয়ে যায় খাওয়া-দাওয়া। জ্বর ও শরীর ব্যথার জন্য ফার্মেসি থেকে ওষুধ এনে খাওয়াই। কিন্তু তাতে কাজ হচ্ছিল না। আব্বুর অবস্থা অনেক খারাপের দিকে যাচ্ছিল। পরে ২৩ জুন সকালে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে ডাক্তার দেখাই। পরের দিন দোলন ভাই আব্বুর অসুস্থতার কথা শুনে তাকে করোনা টেস্ট করানোর পরামর্শ দেন এবং আব্বুকে সুস্থ করে তুলতে আমাকে নানা দিক-নির্দেশনা দেন।
ভাইয়ের পরামর্শে আব্বু ও আম্মুর করোনা টেস্ট করাই। তাতে আব্বুর করোনা পজেটিভ আসে। আম্মুর আসে নেগেটিভ। করোনা পজেটিভের খবরে আব্বু আরও ভেঙে পড়েন। চারদিকে করোনায় মৃত্যুর সংবাদ এবং আব্বুর শরীরের যে অবস্থা তাতে তিনি ধরেই নেন আর হয়তো বেশিদিন এ পৃথিবীর আলো-বাতাস তিনি দেখতে পারবেন না।
যেদিন আব্বুর করোনা পজেটিভ রেজাল্ট আসে, সেই ২৩ জুন রাত থেকে আমারও খুসখুসে কাশি ও ভীষণ জ্বর শুরু হয়। পরিবারের তিনজন সদস্যের মধ্যে দুজনই অসুস্থ। আমি করোনা টেস্ট করাই। কিন্তু ফলাফল নেগেটিভ আসে। এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে আমি অসুস্থ ছিলাম। এখন সুস্থ।
আমাদের নিয়ে আম্মু একটু বেকায়দায়ই পড়েছিলেন। এমনিতেই আম্মুর শ্বাসকষ্টের সমস্যা। তারপরও আল্লাহর ওপর ভরসা করে স্বাস্থ্যবিধি মেনে আমাদের সেবা করেছেন। আমাদের দুজনের অসুস্থতায় আম্মুর অনেক কষ্ট হয়েছে। আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ করি আল্লাহ যেন আমার মমতাময়ী মাকে দীর্ঘজীবী করেন এবং সকলপ্রকার বালা মুসিবত, রোগ বালাই থেকে হেফাজত করেন। আমিন।
আজ ২৩-২৪ দিন হলো আব্বু অসুস্থ। যদিও তিনি আগের থেকে এখন অনেকটা সুস্থ। মুখে রুচি ফিরে এসেছে। ভারী খাবার এখন কিছুটা খেতে পারছেন। এর আগে টানা ১৫ দিন তিনি একটু ফলের রস ও এক-দুই চামচ সাবুদানা ছাড়া কিছুই খেতে পারতেন না। এই রহমত দানের জন্য পরম করুণাময় আল্লাহ তায়ালার নিকট অনেক অনেক শুকরিয়া।
সময়ের স্রোতে এরই মাঝে বেড়েছে ভালোবাসার ঋণ। সেই ভালোবাসার মানুষটির কথা না বললেই নয়। আমার ও আমার প্রাণপ্রিয় জন্মদাতা পিতার অসুস্থতার মধ্যে, শত ব্যস্ততার মাঝেও আমার অভিভাবক, প্রিয় সম্পাদক, প্রিয়নেতা আরিফুর রহমান দোলন ভাই আমার ও আমার পিতার স্বাস্থ্যের খোঁজখবর নিয়েছেন, পরামর্শ দিয়েছেন। প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই দোলন ভাইয়ের যে এসএমএস পেয়েছি, ‘তোমার ও তোমার আব্বুর শরীরের খবর কী?’ প্রতিদিন তিন থেকে চার বার ফোন অথবা এসএমএস-এর মাধ্যমে তিনি খোঁজখবর নিয়েছেন, পরামর্শ দিয়েছেন এবং আমাদের যখন যা প্রয়োজন তখন তা তিনি মিটিয়েছেন।
একটা পরিবারের বড় ছেলে যেভাবে তার পিতামাতা থেকে শুরু করে প্রত্যকটা সদস্যের জন্য যা যা করেন আরিফুর রহমান দোলন ভাই আমার আপন ভাই না হয়েও তিনি আমার ও আমার পরিবারের জন্য তাই তা-ই করেছেন এবং করে চলেছেন।
তিনি প্রায়ই আমাকে একটি কথা বলেন, ‘তোমার ভাই-বোন নেই তো কি হয়েছে? আমি তো আছি; তোমার বড়ভাই। কখনই কোনো বিষয় নিয়ে কোনো চিন্তা করবা না? যখন যা প্রয়োজন আমাকে বলবা? একটি কথা না বললেই নয়। এখন পর্যন্ত আমার কোনো প্রয়োজনের কথা তাকে বলা লাগেনি। যখনই তিনি আমার কোনো কিছু প্রয়োজন মনে করেছেন তখন তাই-ই তিনি পূরণ করেছেন।
কেউ উপকার করলে তার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকা উচিত। এটি রাসুল (স.)-এর শিক্ষা। রাসুল (স.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না, সে আল্লাহর প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না। ’ অথবা ‘যে ব্যক্তি মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞ নয়, সে আল্লাহর প্রতিও অকৃতজ্ঞ।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৮১১)
প্রিয় দোলন ভাইয়ের কাছে আমার ঋণের বোঝা সত্যিই অনেক বেড়ে গিয়েছে। তার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশের ভাষা আমার জানা নেই। তারপরও প্রিয়ভাইয়ের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা। কৃতজ্ঞচিত্তে মনে রাখব। আমার পরিবারের সুখে-দুঃখে তিনি যেমন পাশে আছেন; আমিও ঠিক তেমনই অতীতের মতোই বাকি জীবনও তার সুখে-দুঃখে পাশে থাকতে চাই। আল্লাহ কবুল করুন।
আরিফুর রহমান দোলন ভাই আমাদের পরিবারের সুখে-দুঃখে যেভাবে পাশে আছেন এভাবে বর্তমানে কেউ কারো পাশে থাকে এমনটা চোখে পড়ে খুবই কম। আমি হয়ত আমার এই লেখনিতে আমার পরিবারের প্রতি তার অবদানের কথা ঠিকমতো ফুটিয়ে তুলতে পারিনি। সত্যি বলতে আমার পরিবার ও আমাদের প্রতি তাঁর ভালোবাসা অনেক। এই ভালোবাসা ভুলব কেমন করে? এই ভালোবাসা কি ভোলা যায়?
এছাড়াও আমার অনেক বড়ভাই, বন্ধু, সহকর্মী, ছোট ভাই, আত্মীয়স্বজনসহ অনেকেই যারা আমার ও আমার পিতার অসুস্থ হওয়ার খবর শুনে ফোনে ও ফেসবুকে প্রতিনিয়ত আমার ও আমার পিতার সুস্থতা কামনা করেছেন তাদের প্রতিও আমার অফুরন্ত ভালোবাসা ও কৃতজ্ঞতা। এখনও যারা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ আছেন আল্লাহ তাদের দ্রুত সুস্থতা দান করুন। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন।পরিশেষে, আবারও পরম করুণাময়ের কাছে শুকরিয়া আদায় করছি। সেই সাথে আমিসহ শত শত অসহায় মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়ে তোলা প্রিয় আরিফুর রহমান দোলন ভাইয়ের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি। আল্লাহপাক তাঁকে ও তাঁর পরিবারকে সবসময় সহি সালামতে রাখুন। আমিন।
লেখক: সাংবাদিক।

মন্তব্য করুন