বছরজুড়ে চলবে ৬৪ জেলার বধ্যভূমিতে গণহত্যা পরিবেশ থিয়েটার

শেখ সাইফ, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ০৫ আগস্ট ২০২১, ১৫:১২
অ- অ+

এবছর বাঙালি জাতির গৌরবের বছর। এক সাগর রক্তের বিনিময়ে লাখো শহীদের প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত মহান স্বাধীনতার ৫০ বছর পালন করছে জাতি। গৌরবের এই উদযাপন উপলক্ষে ৬৪ জেলার ৬৫টি বধ্যভূমিতে পরিবেশ থিয়েটার প্রযোজনা মঞ্চায়ণ করবে শিল্পকলা একাডেমি। একাডেমির নাট্যকলা ও চলচ্চিত্র বিভাগের ব্যবস্থাপনায় গণহত্যার পরিবেশ থিয়েটার মঞ্চায়ন শিরোনামে এই কর্মসূচি ২০২২ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত চলবে।

বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি পরিবেশনাধর্মী শিল্পের একমাত্র জাতীয় প্রতিষ্ঠান। একাডেমি সংস্কৃতির সকল মাধ্যমের উন্নয়ন, লালন, বিকাশ, উৎকর্ষসাধন এবং আন্তর্জাতিক সংস্কৃতির সাথে মেলবন্ধন তৈরি করতে নানামূখি কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে চলেছে।

শিল্পকলা একাডমি স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপনে বেশকিছু কাযক্রম বাস্তবায়ন করে চলেছে। এই কর্মসূচির প্রধান উদ্দেশ্য, মহান মুক্তিযুদ্ধে জাতির বীর সন্তানদের যে ত্যাগ তার মহিমাকে নতুন প্রজন্মের সামনে নাট্য-প্রযোজনার মাধ্যমে তুলে ধরা এবং বাঙালি জাতির মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে শিল্পের আলোয় নতুনভাবে পাঠ ও সংরক্ষণসহ মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে উপস্থাপনের মাধ্যমে অসাম্প্রদায়িক ও মানবিক বাংলাদেশ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ ভূমিকা পালন করা।

এই কর্মসূচি বাস্তবায়নে ৬৪ জেলায় বধ্যভূমি নিয়ে একটি গবেষণাকর্ম পরিচালনা করা, ৬৫টি বধ্যভূমি নির্বাচন করা ও নাটক মঞ্চায়ন করা, বাংলাদেশের নাট্যচর্চায় পরিবেশ থিয়েটার আঙ্গিক প্রতিষ্ঠা করা এবং দক্ষ নাট্যকার, নাট্যনির্দেশক, সংগঠক, শিল্পী-কলাকুশলী গড়ে তোলার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি।

শিল্পকলা একাডেমির উদ্যোগে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে দেশজুড়ে প্রতিটি নাট্যজন লিয়াকত আলী লাকীর ভাবনা ও পরিকল্পনায় দেশের বরেণ্য নাট্যকার ও পরিচালকদের অংশগ্রহণে দেশের সকল জেলায় পরিবেশিত হবে বধ্যভূমিতে গণহত্যা পরিবেশ থিয়েটার। এক বছর গবেষণা ও যাচাইবাছাই করে প্রতি জেলায় পরিবেশ থিয়েটার উপযোগী একটি বধ্যভূমি বেছে নেয়া হয়েছে এই কর্মসূচির জন্য।

এই কর্মসূচিকে সামনে রেখে সম্প্রতি মুক্তিযুদ্ধ গবেষক, নাট্যকার ও নির্দেশক এবং জেলা কালচারাল অফিসারদের অংশগ্রহণে বধ্যভূমি-গণহত্যা বিষয়ক একাধিক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের সম্মানিত প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি ও গণহত্যা-মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক লেখক মফিদুল হক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক আবু মো. দেলোয়ার হোসেন এবং মুক্তিযুদ্ধ-বিষয়ক গবেষক মামুন সিদ্দিকী কর্মশালায় উপস্থিতি ছিলেন।

এছাড়া নাট্যকলা বিভাগের পরিচালক আফসানা মিমি, বধ্যভূমি গণহত্যা পরিবেশ থিয়েটার কর্মসূচির সমন্বয়কারী আলী আহমেদ মুকুল এবং বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক নাট্যজন লিয়াকত আলী লাকি কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেন।

৬৪ জেলার বধ্যভূমিতে পরিবেশ থিয়েটার পরিবেশনার প্রস্তুতিমূলক কর্মশালায় কথাগুলো বলেন মুক্তিযুদ্ধ-বিষয়ক গবেষক মামুন সিদ্দিকী বলেন, জাতীয় মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাস চর্চার অনুকূল পরিবেশ ছিল না সিংহভাগ সময়। আমাদের ইতিহাস চর্চায় মুক্তিযুদ্ধে বিজয় গুরুত্ব পেয়েছে সর্বদা কিন্তু মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যা-গণকবর-বধ্যভূমি তেমন উঠে আসেনি। বাংলাদেশে গ্রামে গ্রামে বধ্যভূমি। গণহত্যার ভয়াবহতা এবং গণকবর-বধ্যভূমি সহ মুক্তিযুদ্ধের সামগ্রিক ভাষ্য তুলে আনার চেষ্টা থাকবে পরিবেশ থিয়েটারের মাধ্যমে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক আবু মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, মুক্তিযুদ্ধ গবেষণা কেন্দ্র সারাদেশে প্রায় ৫০০০ বধ্যভূমি চিহ্নিত করেছিল কিন্তু উদ্দ্যোগটি দেরি করে নেয়ায় অনেক বধ্যভূমি এখন বসত বাড়ি, বাণিজ্যিক ভবনে পরিণত হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধে বেশিরভাগ গণহত্যা ছিল পরিকল্পিত। লাশ নদীতে ভাসিয়ে দেয়া কিংবা গান পাউডারে পুড়িয়ে দেয়া হতো। দেশব্যাপী বধ্যভূমিতে গণহত্যা পরিবেশ থিয়েটারের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের পুনঃ জাগরণ ঘটবে বলে আমি প্রত্যাশা করি।

গবেষক লেখক মফিদুল হক বলেন, কাজটা নিঃসন্দেহে কঠিন। বদ্ধভুমিতে হত্যাকাণ্ডের ৫০ বছর পর আজকের মানুষদের সামনে উপস্থাপন করা দুরূহ কাজ। শহীদের পরিবার থাকবে, আবার নতুন প্রজন্মও থাকবে। ৫০ বছর পর এই নৃশংসতাকে আমরা কিভাবে দেখছি? ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সামনে রেখে কাজটি করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শিল্পের মাধ্যমে ইতিহাসকে সজীব করে তুলতে হবে; নাটককে কথা বলতে হবে!

বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক ও নাট্যজন লিয়াকত আলী বলেন, আমাদের জন্য এটা একটা সৌভাগ্য। মুজিব বর্ষের পরপরই স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে আমরা সারাদেশে মানুষের কাছে পৌঁছাতে যাচ্ছি গণহত্যা বধ্যভূমি পরিবেশ থিয়েটার নিয়ে। শিল্পের সব শাখাই মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক কাজ করেছে, স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর যে গণহত্যারও পঞ্চাশ বছর তা এই পরিবেশ থিয়েটারের মাধ্যমে দেশব্যপী তুলে ধরতে চাই।

লিয়াকত আলী আরও বলেন, শিল্প-সাহিত্য ইতিহাসকে সজীব রাখে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে। ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস ও অর্জনের বাইরেও শহীদ মিনার এবং আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি এই দুইটি শিল্প ভাষা আন্দোলনের প্রতীক হিসেবে স্থাপিত হয়েছে যা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসকে সজীব রাখবে। সারাদেশে এই কর্মসূচির মাধ্যমে আমরা গণহত্যা-বধ্যভূমি তথা মুক্তিযুদ্ধের সার্বিক ইতিহাসকে নতুন প্রজন্মের কাছে শৈল্পিকভাবে পৌঁছাতে চাই।

উল্লেখ্য, বৈদ্যনাথ তলা থেকে মুজিবনগর; যুদ্ধপূরাণ; কনসেনট্রেশন ক্যাম্প ডট ৭১ এবং কনসেনট্রেশন ক্যাম্প রংপুর টাউন হল প্রমুখ পরিবেশ থিয়েটার সফল ভাবে আয়োজন করেছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী। এছাড়া সোমপুর কথন, শেকড় এবং মহাস্থান উল্লেখযোগ্য প্রত্ননাটক যা শিল্পকলা একাডেমির নাট্যকলা ও চলচ্চিত্র বিষয়ক বিভাগের নিজস্ব প্রযোজনা।

প্রসঙ্গত, ১৯৯১ সালে শিল্পকলা একাডেমি পরিবেশ থিয়েটার প্রযোজনা মঞ্চায়ন কার্যক্রম আরম্ভ করে। তাতে উদ্বুদ্ধ হয়ে অনেক সংগঠন প্রতিষ্ঠান পরিবেশ থিয়েটার প্রযোজনা নির্মাণে আগ্রহী হয়ে উঠলেও ১৯৯৭ সালের পর এই থিয়েটার আঙ্গিকটি নিয়ে আর খুববেশি প্রযোজনা নির্মিত হয়নি।

এরপর ২০১২ সালে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির বর্তমান মহাপরিচালক নাট্যজন লিয়াকত আলী লাকীর ভাবনা ও পরিকল্পনায় নতুনভাবে পরিবেশ থিয়েটার প্রযোজনা নির্মাণ কার্যক্রম আরম্ভ হয়। তারই ধারাবাহিকতায় মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত গণহত্যা এবং স্থান বা স্থাপনাকেন্দ্রীক ইতিহাসকে উপজীব্য করে পাঁচটি পরিবেশ থিয়েটার প্রযোজনা নির্মাণ করা হয়।

(ঢাকাটাইমস/০৫আগস্ট/এসকেএস/ডিএম)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
ভেষজ আনারস ক্যানসার প্রতিরোধে সিদ্ধহস্ত, শরীরের ওজনও কমায়
গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত আরও ১১০ জন
ড. ফয়জুল হককে বিএনপি থেকে বহিষ্কার
অতিরিক্ত সচিব আরিফুজ্জামানসহ ৩ জনকে ওএসডি
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা