ধর্ষণচেষ্টায় ব্যর্থ পুলিশ সদস্য হয়রানি করছেন ছাত্রীর পরিবারকে!

সিরাজুম সালেকীন, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ০৪ অক্টোবর ২০২১, ১৮:৪০| আপডেট : ০৪ অক্টোবর ২০২১, ২০:০৫
অ- অ+

ফেসবুক সূত্রে পরিচয় ও প্রেমের সম্পর্ক করে এক ছাত্রীর ব্যক্তিগত ছবি নেওয়া এবং পরে তা ফাঁসের ভয় দেখিয়ে তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কের চেষ্টা চালান পুলিশ সদস্য সোহান। তাতে ব্যর্থ হয়ে এখন তিনি ও তার লোকজন ওই ছাত্রীর পরিবারকে মামলাসহ নানাভাবে হয়রানি করছেন। ঝিনাইদহ জেলা পুলিশের কনস্টেবল খালিদ হাসান সোহানের বিরুদ্ধে এমনই অভিযোগ উঠেছে।

ইতিমধ্যে সোহানের বিরুদ্ধে মারধর ও হয়রানির মামলা করেছে ছাত্রীর পরিবার, যার র্চাজশিট দিয়েছে পুলিশ। কিন্তু তার বিরুদ্ধে এখনো বিভাগীয় কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় সোহানের হুমকি আর ভিডিও ফাঁসের ভয়ে ছাত্রীর পরিবার দিশেহারা।

ঝিনাইদহ পুলিশ বলছে, সোহানকে পুলিশ লাইনসে ক্লোজড করা হয়েছে। ফৌজদারি মামলায় তার যে শাস্তিই হোক, বিভাগীয় শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে তাকে।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালে স্কুলশিক্ষার্থী জান্নাতুল মাওয়ার (ছদ্মনাম) সঙ্গে ফেসবুকে পরিচয় পুলিশ সদস্য খালিদ হাসান সোহানের। এরপর প্রেমের সম্পর্ক। সেই সুবাদে ফেসবুকে চ্যাটিং ও ভিডিও কলে কথা হতো তাদের। বিভিন্ন সময় পুলিশ সদস্য সোহান স্কুলছাত্রীকে তার কিছু নিরাবরণ ছবি দিতে বলেন। সোহানের পীড়াপীড়িতে একসময় কিছু ছবি দেয় ওই ছাত্রী। এরপরই পুলিশ সদস্য সোহান তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করতে চাপ দিতে থাকে। না হলে তার (সোহান) কাছে থাকা ছবি ইন্টারনেটে ছেড়ে দেওয়ার হুমকি দেয়।

ভীতসন্ত্রস্ত ওই ছাত্রী তার পরিবারকে সব খুলে বলে। পরিবারের লোকজন অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যের কাছে এসব বিষয় জানতে চাইলে তাদের নানাভাবে হুমকি-ধমকি দেওয়া হয়। পরে ভুক্তভোগী পরিবারটি সোহানের বিরুদ্ধে মামলা করেন খুলনার একটি আদালতে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে পুলিশ কনস্টেবল সোহানের মা ওই ছাত্রীর পরিবারের বিরুদ্ধে মাদক আইনে মামলা করেন এবং তার ছেলের নামে মামলা তুলে নিতে হুমকি দেয়। বর্তমানে মামলাগুলো আদালতে বিচারাধীন।

জানা গেছে, অভিযুক্ত এই পুলিশ সদস্য বর্তমানে ঝিনাইদহ জেলা পুলিশে কর্মরত। জেলা পুলিশ বলছে, সোহানকে সাময়িক বরখাস্ত করে পুলিশ লাইনসে রাখা রয়েছে। আর অফিসিয়াল সব কার্যক্রম থেকে তাকে বিরত রাখা হয়েছে। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর অভিযোগের বিষয়টি তদন্তের শেষ পর্যায়ে।

ভুক্তভোগী ওই ছাত্রীর মা ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘২০১৮ সালে তার স্বামী মারা যান। পরের বছর তার স্কুলপড়ুয়া মেয়ের সঙ্গে পরিচয় হয় পুলিশ সদস্য সোহানের। ফেসবুকে তাদের প্রায় কথাবার্তা হতো। সেখান থেকে প্রেমের সম্পর্ক হয়। মেয়েকে ফুঁসলিয়ে তার কিছু ব্যক্তিগত কিছু ছবি নিয়ে প্রায় অনৈতিক সম্পর্ক করতে চাপ দিতে থাকে সোহান। প্রথমে আমার মেয়ে এ বিষয়ে কাউকে কিছু বলেনি। বেশির ভাগ সময় চুপচাপ থাকত এবং খাওয়া-দাওয়া ছেড়ে দিয়েছিল। একসময় সে অসুস্থ হয়ে পড়লে আমাকে সবকিছু জানায়।’

বিষয়টি নিয়ে তিনি স্থানীয় অনেকের কাছে গেলেও কেউ তাকে সহযোগিতা করেনি জানিয়ে ওই নারী বলেন, ‘উল্টো সবাই সোহানের (পুলিশ কনস্টেবল) পক্ষ নিয়েছে। পরে আমি সোহানকে বোঝাই। এও বলেছি, প্রয়োজনে আমার মেয়ের সঙ্গে তার বিয়ে দিব, তবুও যেন তার কাছে থাকা সব ছবি ডিলিট করে দেয়। কিন্তু সোহান শোনেনি সে কথা।’

উল্টো তার দুই ছেলেকে হত্যার হুমকি দেন সোহান- এমন অভিযোগ করে ওই নারী বলেন, ‘তাদের (ছেলে) একাধিকবার মারধরও করে। খুলনার বিএল কলেজের পেছনে নিয়ে আমার ছোট্ট ছেলেকে মারধরের ঘটনায় সোহানের বিরুদ্ধে দৌলতপুর থানায় একটি মামলা করি। স্থানীয় থানার পুলিশ তদন্ত শেষে চার্জশিট জমা দিয়েছে আদালতে। মারধরের ঘটনায় সোহানের সম্পৃক্ততা পেয়েছে পুলিশ। বর্তমানে মামলাটি আদালতে বিচারাধীন।’

ফেসবুক চ্যাটিংয়ের এই স্ন্যাপশটের কিছু অংশ আদালতে জমা দিয়েছেন মামলার বাদি

ভুক্তভাগী ওই ছাত্রী ঢাকা টাইমসকে জানান, তার ভাইকে মারধরের ঘটনায় সোহানসহ অজ্ঞাত আসামি করে একটি মামলা করা হয়। এই মামলার পর সোহানের মা শামীমা ইয়াসমিন তার (ছাত্রীর) মা ও দুই ভাইদের নামে সন্ত্রাস ও মাদক আইনে মামলা করেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তাদের অভিযোগের সত্যতা পায়নি। বর্তমানে সেই মামলাও আদালতে বিচারাধীন।

ওই ছাত্রী বলেন, ‘এরপর সোহান ও তার বন্ধ্রুা আমাদের বিভিন্নভাবে হয়রানি করতে থাকে। মানসম্মানের ভয়ে আমরা বাড়ির বাইরে যেতে পারি না। পরে গত বছর নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে একটি মামলা করি। মামলাটি তদন্ত শেষে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) আদালতে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে।’

এদিকে ভুক্তভোগী পরিবারের দেওয়া অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত করছে ঝিনাইদহ জেলা পুলিশ। জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাইমিনুল ইসলাম ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘পুলিশের এই সদস্য যে পেশাদারিত্ব ভেঙেছে তার বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নিব। আমদের কার্যক্রম একেবারে শেষ পর্যায়ে। সাক্ষ্য-প্রমাণও শেষের দিকে। অল্প কিছুদিনের মধ্যে তার বিরুদ্ধে একটি ব্যবস্থা নেওয়া।’

পুলিশের এই কর্মকর্তা আরো বলেন, ‘তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে পুলিশ লাইনসে রাখা হয়েছে। আর অফিসিয়াল সব কার্যক্রম থেকে তাকে স্থগিত করা হয়েছে।’

অন্য এক প্রশ্নের জবাবে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাইমিনুল ইসলাম বলেন, ‘ফৌজদারি মামলায় আদালতে যে রায় হবে সে অনুযায়ী তাকে (সোহান) সাজা ভোগ করতে হবে। আমাদের শাস্তিও তাকে পেতে হবে।’

(ঢাকাটাইমস/৪অক্টোবর/মোআ)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
জুনে ডিএমপির শ্রেষ্ঠ বিভাগ: ক্রাইমে উত্তরা, গোয়েন্দা লালবাগ
জনতা ব্যাংকে বিকাশের মাধ্যমে রেমিটেন্স পরিশোধের কার্যক্রম উদ্বোধন
আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় অপরাধীদের কঠোরভাবে দমন করতে হবে: ডিএমপি কমিশনার
খানসামায় পাটক্ষেত থেকে ব্যবসায়ীর লাশ উদ্ধার
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা