যৌতুকের জন্য স্ত্রীকে গরম তেলে পুড়িয়ে হত্যা করেন সজনু

আশুলিয়া থানার জিরানীর টেঙ্গুরী এলাকায় গরম তেলে ঝলসে যাওয়া এক গৃহবধূর মৃত্যুর ঘটনায় তার স্বামী সজনু মিয়াকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ বলছে, পরকীয়ায় বাধা ও যৌতুকের দাবি মেটাতে না পারার কারণে গায়ে গরম তেল ঢেলে গৃহবধূ স্বর্ণা বেগমকে হত্যা করেছেন সজনু মিয়া।
বুধবার দুপুরে সিআইডির সদর দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান সিআইডির এলআইসি শাখার বিশেষ পুলিশ সুপার মুক্তাধর।
সংবাদ সম্মেলনে মুক্তাধর বলেন, যৌতুকের দাবিতে মেটাতে না পারার কারণে চলতি বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর ঢাকার আশুলিয়া থানার জিরানীর টেঙ্গুরী ভাড়া বাসায় স্বর্ণা বেগমকে তার স্বামী সজনু মিয়া গরম তেলে ঢেলে শরীরের অধিকাংশ জায়গা পুড়িয়ে দেন। ওইদিন রাত দুইটার দিকে তাৎক্ষণিকভাবে স্বর্ণার চিকিৎসার কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে ঘাতক মজনু মিয়া পালিয়ে যান। এরপর মেসের সদস্য হাফিজুর ও অন্যান্যরা মিলে স্বর্ণাকে গুরুতর দগ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করে অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে আশুলিয়া থেকে জামালপুরের সরিষাবাড়ীর পিংনা গ্রামে নিয়ে যান। তখন মজনু মিয়ার পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। কিন্তু স্বর্ণাকে সেখানে ভর্তি না করেই ফেলে রেখে অজ্ঞাত জায়গায় আত্মগোপন করেন তারা।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, পরবর্তীতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকেরা তাকে চিকিৎসার জন্য কে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ণ ও পাস্টিক সার্জারি ইন্সটিটিউটের রেফার করেন। এরপর ভুক্তভোগী স্বর্ণার মা শিরিনা বেগম মজনু মিয়ার নামে ঢাকার আশুলিয়া থানায় একটি মামলা করেন। আশুলিয়া থানার মামলা নম্বর- ০১, তারিখ- ০১/১০/২০২১ ইং ধারা- নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ সংশোধনী/২০০৩ এর ১১(খ)।
মুক্তাধর বলেন, এঘটনায় সিআইভি ছায়া তদন্ত শুরু করে। সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মুক্তা ধরের সার্বিক দিক নির্দেশনায় এলআইসির একটি চৌকস দল গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাতে সজনু মিয়াকে গ্রেপ্তার করে।
সংবাদ সম্মেলনে সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার বলেন, ২০০৭ সালে পারিবারিকভাবে মজনু মিয়া এবং স্বর্ণার তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের পর তারা মজনু মিয়ার গ্রামের বাড়িতে বসবাস করত। মজনু মিয়া স্থানীয় বাজারে রেডিমেড গার্মেন্টসের দোকানদারি করতো। তাদের ওমর ফারুখ সিফাত নামের ১১ বছরের একটি ছেলে ও খাদিজা নামের দুই বছরের একটি মেয়ে সন্তান রয়েছে।
মুক্তাধর জানান, স্বামীর বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে বাধা দেওয়ায় এবং যৌতুকের দাবিতে প্রায়শই স্বর্ণাকে নির্যাতন করা হতো। এমনকি সজনু মিয়া সংসারের ভরণ পোষণও সঠিকভাবে করত না। এরআগেও যৌতুকের দাবিতে মারপিট করে গুরুতর জখম করায় মৃত স্বর্ণার দুলাভাই মো. ময়নুল ইসলাম বাদী হয়ে আসামি মজনু মিয়ার বিরুদ্ধে সরিষাবাড়ী থানায় একটি মামলা করেন। ওই মামলায় মজনু মিয়া দুই মাস ১৯ দিন জেল হাজতে থাকেন। পরে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের মধ্যস্ততায় বাদী তার মামলাটি প্রত্যাহার করে নেন। কিন্তু কিছুদিন পরে আবারও স্বর্ণার উপরে নির্যাতন শুরু হয়। মজনু মিয়ার নির্যাতনে অতিষ্ট হয়ে স্বর্ণা ছয়মাস আগে তার সন্তান নিয়ে বাবা-মার বাড়িতে সিরাজগঞ্জে চলে আসেন। কিন্তু অভাব অনাটনের কারণে তার ছেলে-মেয়ের মায়ের কাছে রেখে ঢাকার আশুলিয়ায় এসে ডরিন গার্মেন্টেসে পোশাক শ্রমিকের কাজ নেন। কিন্তু সজনু কৌশলে তার স্ত্রীর ঠিকানা জোগাড় করে ঢাকায় এসে অশান্তি শুরু করেন। যৌতুকের টাকা দিতে অস্বীকার করা হলে তাকে গরম তেলে পুড়িয়ে হত্যা করেন সজনু মিয়া।
ঢাকাটাইমস/১৩ অক্টোবর/এএ

মন্তব্য করুন