নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে সাধুদের পদচারণায় লালনের আঁখড়াবাড়ি মুখরিত

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ১৭ অক্টোবর ২০২১, ২২:৪৬
অ- অ+

পহেলা কার্তিক (রবিবার) বাউল সাধক লালন শাহর ১৩১তম তিরোধান দিবস। করোনা মহামারির কারণে সরকারিভাবে এ বছরও বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহর তিরোধান দিবস পালন না করার সিদ্ধান্ত থাকলেও নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করেই দিবসটি উদযাপন করছেন বাউল ভক্ত সাধু ও অনুসারীরা। প্রতি বছরের মত এবারও হাজারো বাউল ভক্ত ভিড় জমিয়েছেন কুষ্টিয়ার কুমারখালী উজেলার ছেঁউড়িয়াস্থ লালনের আখড়া বাড়িতে। ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে তারা লালন একাডেমি চত্বর ও সামনের মাঠে অবস্থান নিয়েছেন। ইতোমধ্যে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসা কয়েক হাজার লালন ভক্ত বাউল ও সাধুরা ভিড় করেছেন সাঁইজির ধামে। একতারা,দোতরা হাতে নিয়ে তারা গেয়ে চলেছেন লালনের গান।

জেলা প্রশাসক ও লালন একাডেমির আহ্বায়ক সাইদুল ইসলাম গত ১২ অক্টোবার প্রেস ব্রিফিং’র মাধ্যমে ঘোষণা দিয়েছিলেন, করোনা মহামারির সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে এবারও তিরোধান দিবস উদযাপন করা হবে না। একই সাথে দিবসটি উপলক্ষে সকল প্রকার গণজমায়েত এড়িয়ে চলারও আহবান জানিয়েছিলেন তিনি।

কিন্তু সব বিধি-নিষেধ উপেক্ষা করে কোন দাওয়াতপত্র ছাড়াই প্রতি বছরের মত এবারও কয়েক হাজার লালন বাউল ভক্ত আর সাধুরা এসে ভিড় করেছেন লালনের আখড়া বাড়িতে। আখড়াবাড়ির বাইরে লালন একাডেমির মাঠে নিজস্ব রেওয়াজে ভক্তি-শ্রদ্ধা দিতে দেখা গেছে লালন অনুসারীদের।

নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা ফকির পবন শাহ বলেন, সাঁইজির ধামে আসতে তাদের কোন দাওয়াত লাগে না। আসেন মনের টানে। এখন সাঁইজিকে ভক্তি জানিয়ে চলে যাব। অভিযোগ করেন মেলা না হওয়ায় এবার ভক্ত অনুসারীদের এক প্রকার না খেয়েই থাকতে হচ্ছে। এদিকে সাধুসঙ্গ ও বাউল মেলা না হওয়ায় হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন অনেক বাউল, ফকির এবং লালন ভক্ত।

তারপরও আখড়াবাড়ির ভেতরে ও বাইরে চলছে জাতপাতহীন-মানবতার লালন দর্শনের প্রচার। বরাবরের মতো দর্শন প্রচার হচ্ছে তারই অমর বাণী আর গানের মাধ্যমে। কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়া এখন লালনের গানের সুরে প্রকম্পিত।

প্রায় দুই শত বছর আগে কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়ায় বাউল-ফকিরদের দল গঠন করেছিলেন ফকির লালন সাঁই। অহিংস, জাতপাতহীন ও মানবতাবাদী গান বেঁধে প্রচার করতেন তারা। দিনে দিনে তার দল বড় হতে থাকে। বাড়তে থাকে অনুসারী ও ভক্তের সংখ্যা। আজ বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়েছে লালনের গান আর তার অমর বাণী।

১২৯৭ বঙ্গাব্দের পয়লা কার্তিক দেহত্যাগ করেন ফকির লালন শাহ। এই ১৩১ বছর ধরে আখড়া বাড়িতে চলা রেওয়াজ হলো পহেলা কার্তিক লালনের তিরোধান দিবসে তার মাজার ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করে বাউল-ফকিরদের জন্য অধিবাস, বাল্যসেবা এবং পূর্ণসেবার (খাবার) আয়োজন।

তিন দিন ধরে চলে লালনের জীবন ও দর্শন নিয়ে আলোচনা সভা, মেলাসহ সরকারি অনুষ্ঠানমালা। এই অনুষ্ঠানকে ঘিরে দেশ বিদেশের লাখ লাখ মানুষ এতে অংশ নিতেন।

করোনার বাস্তবতায় দুই বছর বন্ধ এসব আয়োজন। ফকির-বাউলরা নিজেদের মতো করে সাঁইজিকে স্মরণ করতে পারছেন, এতেই তারা খুশি।

তাদের ভাষ্য মতে, সাঁইজির কৃপায় সব আঁধার কেটে যাবে। আবার সব স্বাভাবিক হবে।

(ঢাকাটাইমস/১৭অক্টোবর/এলএ)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
পল্লীবন্ধু এরশাদ চিরকাল মানুষের হৃদয়ে কণক প্রদীপ হয়ে জ্বলবেন
চাঁদা না দেওয়ায় পল্লবীতে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে সন্ত্রাসী হামলা, গুলিবর্ষণ: গ্রেপ্তার ৩
ছন্দে ফিরলেন লিটন, সমতায় ফিরল টাইগাররা
১২ দিনে রেমিট্যান্স এলো ১০৭ কোটি মার্কিন ডলার
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা