সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বাড়ছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে, আটক হচ্ছে, মিলছে অস্ত্র

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১১ নভেম্বর ২০২১, ১১:২০ | প্রকাশিত : ১১ নভেম্বর ২০২১, ১১:০১

সময় যত গড়াচ্ছে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের মধ্যে অপরাধপ্রবণতাও তত বাড়ছে। এসব ক্যাম্পে সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্রের কর্মকাণ্ড দিন দিন বেড়েই চলেছে। সামান্য ঘটনা থেকে ভয়াবহ সংঘর্ষে জড়াচ্ছেন রোহিঙ্গারা। আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজি, পূর্ব-শত্রুতার জের, মাদক, অস্ত্র ও মানবপাচারের জন্য অভয়ারণ্য হয়ে উঠেছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো। ক্যাম্প এলাকায় গড়ে উঠছে অস্ত্র তৈরি ও মেরামতের কারখানা, যা বাংলাদেশের জন্য যথেষ্ঠ হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারি ও অভিযানেও ঠেকানো যাচ্ছে না অরাজকতা। রোহিঙ্গাদের এমন কর্মকাণ্ডে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় আছেন ওই এলাকার স্থায়ী বাসিন্দারা। রোহিঙ্গাদের সহিংস আচরণের বিষয়টি ভাবিয়ে তুলেছে প্রশাসনকেও।

গণহত্যা ও নির্যাতনের মুখে মিয়ানমার থেকে কক্সবাজারে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৪টি আশ্রয়শিবিরে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের সংখ্যা সাড়ে ১১ লাখ। রাখাইন থেকে ১৯৯১ সালে আসা রোহিঙ্গাদের জন্য কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালংয়ে এবং টেকনাফের হ্নীলায় দুটি করে মোট চারটি শিবির ছিল। এরপর ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রোহিঙ্গা ঢলের পর টেকনাফে আরও ৬টি এবং উখিয়ায় ২৪টি আশ্রয়শিবির হয়।

কক্সবাজারে আশ্রয় নেওয়া এসব রোহিঙ্গা এখন বাংলাদেশের জন্য বড় বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। দিন যত গড়াচ্ছে তা আরও স্পষ্ট হচ্ছে। কিছুদিন আগে একজন বিদেশি দূতের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্পষ্ট করে বলেছেন, রোহিঙ্গাদের মানবিক কারণে আশ্রয় দিলেও তারা এখন আমাদের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রত্যাবাসন ছাড়া এই সমস্যা থেকে উত্তরণ সম্ভব নয়।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্যমতে, ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের অপরাধ দিনে দিনে বাড়ছে। গত চার বছরে কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ১২ ধরনের অপরাধে সহস্রাধিক মামলা হয়েছে। এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে প্রায় তিন হাজারের মতো রোহিঙ্গা। অপরাধের মধ্যে রয়েছে- হত্যা, ধর্ষণ, অপহরণ, ডাকাতি, অস্ত্র ও মাদক পাচার, মানবপাচার, পুলিশের ওপর হামলা ইত্যাদি।

অপরাধীদের ধরতে কক্সবাজারের সীমান্ত ক্যাম্পসহ রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকায় বিভিন্ন সময়ে অভিযান পরিচালনা করে অনেক আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার করা হয়েছে গোলাবারুদও। অভিযানে আটক হয়ে অনেক রোহিঙ্গা ডাকাত ও সন্ত্রাসী, যাদের বেশিরভাগই ক্যাম্পের বাসিন্দা।

সম্প্রতি উখিয়ার রাজাপালং পূর্ব ফলিয়াপাড়া দুর্গম পাহাড়ে র‌্যাবের অভিযানে দেশি-বিদেশি অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার হয়েছে। এই ঘটনায় তিনজনকে আটক করে এলিট ফোর্স র‌্যাব।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকদের শরণার্থী ক্যাম্প ও আশপাশে সহিংসতার ঘটনা ঘটছে। তাছাড়া চাঁদাবাজি, বিভিন্ন মাদক ব্যবসা ও লুটপাটের ঘটনাও ঘটছে। উখিয়ার কুতুপালং পাহাড়ে মাটি কেটে একটি অস্ত্র তৈরির বা অস্ত্র মেরামতের কারখানা থেকে দশটি দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। এসব অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে, চারটি এসবিবিএল, একটি শর্টগান, ৫টি ওয়ানশুটার গান, ১৩ রাউন্ড কার্তুজ, একটি কিরিচ ও চাকুসহ বিপুল অস্ত্র তৈরির সরঞ্জাম।

এছাড়া গত বুধবার কক্সবাজার লিংক রোড এলাকায় সাঁড়াশি অভিযান চলাকালে ক্যাম্প থেকে পালানোর সময় পাঁচ রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। তাদের কাছ থেকে ১০ হাজার পিস ইয়াবা ও দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। গ্রেপ্তাররা হলেন- হাবিব উল্লাহ, নবী হোসেন, মো. হারেস, মোরশেদ আলম ও মো. নাছের।

গত ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে উখিয়ার লাম্বাশিয়া শিবিরের ডি ব্লকের ‘আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস (এআরএসপিএইচ) সংগঠনের কার্যালয়ে বন্দুকধারীদের গুলিতে নিহত হন রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ (৪৮)। তিনি ওই সংগঠনের চেয়ারম্যান ছিলেন।

এর তিন সপ্তাহ পেরোতে না পেরোতেই ২২ অক্টোবর উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অবস্থিত ‘দারুল উলুম নাদওয়াতুল ওলামা আল-ইসলামিয়াহ' নামের একটি মাদ্রাসায় হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। এই ঘটনায় ছয়জন নিহত হন। তাদের সবাই ক্যাম্পের রোহিঙ্গা সদস্য।

এই ঘটনার পেছনে কারা সেটা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ধারণা করছে, একটি চক্র রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বজায় রাখতেই এই হত্যার ঘটনা ঘটিয়েছে।

মুহিবুল্লাহ হত্যার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে এখন পর্যন্ত শতাধিকের বেশি সন্ত্রাসী ধরা পড়েছে। উদ্ধার করা হয়েছে বিপুল অস্ত্র।

রোহিঙ্গা নেতারা বলছেন, বিদেশ থেকে ক্যাম্পের মাদ্রাসা-মসজিদের নামে বিভিন্ন মাধ্যমে টাকা আসে। এর ভাগাভাগি নিয়েও দুই সংগঠনের মধ্যে বিরোধ আছে। এছাড়া শিবিরে ক্যাম্পে ইয়াবা ও সোনার ব্যবসায় ভাগ ছাড়াও ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের অন্তত ১৪ হাজার দোকানপাট আছে; সেখান থেকে চাঁদা তোলে নিয়ে বিরোধ বাড়ছে। আর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান দেখলেই সীমান্ত দিয়ে নাফ নদী পেরিয়ে মিয়ানমারের নো ম্যান্স ল্যান্ডে আশ্রয় নিচ্ছে সন্ত্রাসীরা।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পকেন্দ্রিক আইস ব্যবসা

আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের অনেকে জড়াচ্ছেন আইস ব্যবসায়। তারা বিভিন্ন উপায়ে দেশে আইসের চালান আনছে। এই চক্রে প্রায় ছয়জন প্রধান হোতা রয়েছে। পাশাপাশি কক্সবাজারের স্থানীয় তিনজন তাদের সঙ্গে কাজ করছে। এর মধ্যে খোকন নামে একজন গ্রেপ্তার হয়েছে। আইসের সবচেয়ে বড় পাঁচ কেজির চালান ধরা পড়ে গত ১৬ অক্টোবর যাত্রাবাড়ীতে। এ সময় হোছেন ওরফে খোকন ও সহযোগী মোহাম্মদ রফিককে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব।

একাধিক গোয়েন্দা সূত্র ঢাকা টাইমসকে জানায়, নাফ নদী ও টেকনাফের সমুদ্রসীমানার দক্ষিণ-পূর্ব সীমান্ত দিয়ে মাছ ধরার ট্রলারে আসছে আইস। এদেশে থাকা রোহিঙ্গা মাদক কারবারিরা প্রথমে মিয়ানমারের কারবারিদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে। এক্ষেত্রে দুই পক্ষই মিয়ানমারের সিম ব্যবহার করছে। দেশটির মোবাইল নেটওয়ার্ক কক্সবাজার শহরের কলাতলী বিচ পর্যন্ত কাজ করে বলে জানান গোয়েন্দারা। এতে দেশে আসা মাদকের চালান আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষে ধরা কঠিন হয়ে যাচ্ছে।

র‌্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সম্প্রতি সময়ে হামলা ও অবৈধ কার্যক্রম বৃদ্ধি পেয়েছে। এর প্রেক্ষিতে আমাদেরও নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।'

খন্দকার মঈন আরও বলেন, ‘ক্যাম্প এলাকায় আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে। অবৈধ অস্ত্র কারা ব্যবহার করছে, কোথা থেকে আসছে এসব তথ্য পেয়েছি। র‌্যাব গোয়েন্দা নজরদারির পাশাপাশি সেখানে আরও অভিযান করবে।’

ঢাকাটাইমস/১১নভেম্বর/এসএস/এমআর

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

জাতীয় এর সর্বশেষ

বৈষম্য নিরসনে নাগরিক সমাজকে ভূমিকা রাখার আহ্বান রাষ্ট্রপতির

মাদক মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির নির্দেশ প্রধান বিচারপতির

তিন জেলায় বজ্রপাতে ৭ জনের মৃত্যু

মোটরযানে হুটার-হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহারে বিআরটিএর হুঁশিয়ারি

সুষম অর্থনৈতিক উন্নয়ন ব্যতীত অভ্যন্তরীণ মাইগ্রেশন ঠেকানো সম্ভব নয়: স্থানীয় সরকারমন্ত্রী

নির্বাচন সংক্রান্ত সহায়তা দিবে ৯৯৯

দাবি আদায় না হলে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা ৩য় শ্রেণি সরকারি কর্মচারীদের

সাংবাদিকরা বাংলাদেশ ব্যাংকে ঢুকবে কেন, প্রশ্ন ওবায়দুল কাদেরের

কুয়েতে বাংলাদেশের নতুন রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল সৈয়দ তারেক হোসেন

সৌদিতে চলতি বছরে প্রথম বাংলাদেশি হজযাত্রীর মৃত্যু

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :