মুরাদের পরিণতিও কি হবে লতিফ সিদ্দিকীর মতো?

হাবিবুল্লাহ ফাহাদ, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ০৭ ডিসেম্বর ২০২১, ১৮:১৭| আপডেট : ০৭ ডিসেম্বর ২০২১, ১৮:২৭
অ- অ+

লতিফ সিদ্দিকীর মতো ভাগ্যই কি বরণ করতে যাচ্ছেন ডা. মুরাদ হাসান? আর কি আওয়ামী লীগের রাজনীতি করার সুযোগ পাবেন তিনি? দলীয় মনোনয়নও কি মিলবে আর? নারীদের নিয়ে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্যের জেরে প্রতিমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগে বাধ্য হওয়া মুরাদকে নিয়ে চলছে এমন জল্পনা-কল্পনা।

পবিত্র হজ নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য এবং প্রধানমন্ত্রীর পুত্র সম্পর্কে কটূক্তি করিয়েছিলেন লতিফ সিদ্দিকী। তার প্রায় দুই সপ্তাহ পর ২০১৪ সালের ১২ অক্টোবর মন্ত্রিসভা থেকে তাকে সরিয়ে দেওয়া হয়। এর বছর সাতেকের মাথায় কুরুচিকর মন্তব্যের জেরে মন্ত্রিসভা থেকে সরে যেতে বাধ্য হলেন বিতর্কিত মুরাদ হাসান।

মন্ত্রিত্বের পর সংসদ সদস্য ও দলীয় পদও হারিয়েছিলেন তৎকালীন প্রভাবশালী মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকী। গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। ছিলেন কারাগারেও। জামিনে ছাড়া পেলেও দৃশ্যপটে আর দেখা যায়নি তাকে। দলীয় কর্মসূচি কিংবা কোনো সভা-সমাবেশেও নেই তিনি। নিভৃতেই কাটছে জীবন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, আওয়ামী লীগের রাজনীতি থেকে ছিটকে পড়ে অতীতে কেউ আর মূলধারায় ফিরতে পারেনি। লতিফ সিদ্দিকী, গোলাম মাওলা রনি, আরিফ খান জয় নিকট অতীতের উদাহরণ। মুরাদ হাসানও তাদের কাতারেই শামিল হতে যাচ্ছেন, ধরেই নেওয়া যায়।

প্রতিমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগের পর দলীয় পদও হারিয়েছেন জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পরিবার কল্যাণ সম্পাদক মুরাদ হাসান। সংসদ সদস্য পদটি নিয়েও তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা। লতিফ সিদ্দিকীকে মন্ত্রিত্ব এবং দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করার পর তিনি সংসদ নেতার অভিপ্রায়ে সংসদ সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করেন। মুরাদ হাসানকেও সেই পথে হাঁটতে হবে বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

জাতীয় সংসদের সরকারদলীয় প্রধান হুইপ নূর-ই-এলাহী চৌধুরী লিটন গণমাধ্যমকে একই ইঙ্গিত দিয়েছেন। জানতে চাইলে জাতীয় সংসদের প্রধান হুইপ বলেন, ‘অতীতের দৃষ্টান্তগুলো ফলো করুন। লতিফ সিদ্দিকীর সময় কী হয়েছিল সেটা দেখুন।’

এর আগে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, মুরাদ হাসানকে এরই মধ্যে মন্ত্রিপরিষদ থেকে পদত্যাগ করতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। দল থেকে বহিষ্কারের বিষয়ে দলের আগামী কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হবে।

এর আগে ২০১৪ সালের ১২ অক্টোবর মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়েন আবদুল লতিফ সিদ্দিকী। পরে ২৪ অক্টোবর আওয়ামী লীগের সব পদ থেকে বহিষ্কার করা হয় তাকে। কিন্তু দলীয় পদ হারানোর পরেও তার সাংসদ পদ বহাল ছিল। ২০১৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদ থেকে পদত্যাগ করেন আবদুল লতিফ সিদ্দিকী।

সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘কোন নির্বাচনে কোন রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরূপে মনোনীত হইয়া কোন ব্যক্তি সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হইলে তিনি যদি-(ক) উক্ত দল হইতে পদত্যাগ করেন, অথবা (খ) সংসদে উক্ত দলের বিপক্ষে ভোটদান করেন, তাহা হইলে সংসদে তাঁহার আসন শূন্য হইবে। তবে তিনি সেই কারণে পরবর্তী কোন নির্বাচনে সংসদ-সদস্য হইবার অযোগ্য হইবেন না।’

সদস্যদের আসন শূন্য হওয়ার ৬৭ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে: (১) কোন সংসদ-সদস্যের আসন শূন্য হইবে, যদি (ক) তাঁহার নির্বাচনের পর সংসদের প্রথম বৈঠকের তারিখ হইতে নব্বই দিনের মধ্যে তিনি তৃতীয় তফসিলে নির্ধারিত শপথ গ্রহণ বা ঘোষণা করিতে ও শপথপত্রে বা ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষরদান করিতে অসমর্থ হন তবে শর্ত থাকে যে, অনুরূপ মেয়াদ অতিবাহিত হইবার পূর্বে স্পীকার যথার্থ কারণে তাহা বর্ধিত করিতে পারিবেন; (খ) সংসদের অনুমতি না লইয়া তিনি একাদিক্রমে নব্বই বৈঠক-দিবস অনুপস্থিত থাকেন; (গ) সংসদ ভাঙ্গিয়া যায়; (ঘ) তিনি এই সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদের (২) দফার অধীন অযোগ্য হইয়া যান; অথবা (ঙ) এই সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদে বর্ণিত পরিস্থিতির উদ্ভব হয়। (২) কোন সংসদ-সদস্য স্পীকারের নিকট স্বাক্ষরযুক্ত পত্রযোগে স্বীয় পদ ত্যাগ করিতে পারিবেন, এবং স্পীকার কিংবা স্পীকারের পদ শূন্য থাকিলে বা অন্য কোন কারণে স্পীকার স্বীয় দায়িত্ব পালনে অসমর্থ হইলে ডেপুটি স্পীকার- যখন উক্ত পত্র প্রাপ্ত হন, তখন হইতে উক্ত সদস্যের আসন শূন্য হইবে।’

সম্প্রতি একজন চিত্রনায়িকার সঙ্গে মুরাদ হাসানের ফোনালাপে কুরুচিপূর্ণ ও অশ্লীল আলাপের বিষয়টি ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এ নিয়ে শুরু হয় সমালোচনা। একজন প্রতিমন্ত্রীর মুখে এ ধরনের ভাষায় বিব্রত হয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। পরে বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নজরে এলে তিনি সড়ক যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের মাধ্যমে ডা. মুরাদকে পদত্যাগের জন্য নির্দেশ দেন।

মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পাওয়ার পর থেকেই বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনায় ছিলেন ডা. মুরাদ হাসান। প্রথমে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী করা হয় তাকে। মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন সূত্রে জানা যায়, তার কিছু পদক্ষেপ এবং কথাবার্তায় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীও বিব্রত হন। পরে প্রধানমন্ত্রী তাকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে ২০১৯ সালের মে মাসে তথ্য মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব দেন।

এখানে এসেও বিতর্কিত বক্তব্য-বিবৃতি দিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দেন ডা. মুরাদ। সর্বশেষ রাষ্ট্রধর্ম, দেশের রাজনীতি, বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার নাতনিসহ নানা বিষয়ে মন্তব্য করে সমালোচনার জন্ম দেন তিনি। দলীয় বিভিন্ন সভায় অংশ নিয়ে উত্তেজিত বক্তব্য দিয়েও বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলেন দলের শীর্ষ নেতাদের। বিব্রত হয় তার নির্বাচনী আসন জামালপুর-৪ আসনের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও।

এর বাইরে মঞ্চে উঠে গান গেয়ে দর্শক মাতানো, টিভি অনুষ্ঠানের উপস্থাপিকাকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করার মতো ঘটনাও ঘটান ডা. মুরাদ। প্রতিমন্ত্রীর মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে মঞ্চে গান গাওয়া, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে হালকাচালের মন্তব্য ও হাস্যরস করার ঘটনায় বিব্রত হচ্ছিলেন দল ও মন্ত্রণালয়ের কর্তাব্যক্তিরাও। এসব নিয়ে প্রকাশ্যে কেউ কিছু বলতে না পারলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন মহলে সমালোচনা থেমে ছিল না। সবশেষে পদত্যাগের মধ্য দিয়ে নিজের কর্মফলের তিলক পরলেন ডা. মুরাদ। কিন্তু তার কর্মে দল-সরকার, রাজনীতিসহ সব স্তরের মানুষের মধ্যে যে ক্ষোভ আর সমালোচনার সাগর তৈরি হলো, তার পানি আর কত দূর গড়ায় তা দেখার অপেক্ষায় সংশ্লিষ্টরা।

(ঢাকাটাইমস/৭ডিসেম্বর/এইচএফ/মোআ)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
পল্লীবন্ধু এরশাদ চিরকাল মানুষের হৃদয়ে কণক প্রদীপ হয়ে জ্বলবেন
চাঁদা না দেওয়ায় পল্লবীতে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে সন্ত্রাসী হামলা, গুলিবর্ষণ: গ্রেপ্তার ৩
ছন্দে ফিরলেন লিটন, সমতায় ফিরল টাইগাররা
১২ দিনে রেমিট্যান্স এলো ১০৭ কোটি মার্কিন ডলার
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা