গরমে যানজটযোগ, নাভিশ্বাস নগরবাসীর

শেখ সাইফ, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ২০ মে ২০২২, ১০:৪৭
অ- অ+

মাথার ওপর যেন তপ্ত দুপুরের আগুনের হল্কা। যেমন ভ্যাঁপসা গরম তেমনি কাঠফাটা রোদ। সঙ্গে যানজটযোগ। রাজধানীবাসীর জীবন যেন ঝালাপালা অবস্থা। বাতাসেও যেন আগুনের হল্কা বইছে। বাইরে বের হলে চোখ-মুখ যেন পুড়ে যাচ্ছে। গা দিয়ে দরদর করে ঘাম বেয়ে পড়ছে। এমন অবস্থায় গণপরিবহনে ঠাসাঠাসি করে জ্যামে দাঁড়িয়ে থাকা যে কী যন্ত্রণার তা হাড়েহাড়ে টের পাচ্ছে নগরবাসী।

সরজমিনে ঘুরে দেখা যায়, রাজধানীর খামারবাড়ি থেকে কারওয়ানবাজার- যতদূর চোখ যায় সড়কে যেন ট্রেনের মতো একটার পেছনে একটা গাড়ি ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। চাকা ঘোরার কোনো নামগন্ধ নেই। অগত্যা তপ্ত দুপুরে অনেকেই গাড়ি থেকে নেমে হাঁটা শুরু করেছেন।

মিরপুর থেকে বিহঙ্গ পরিবহনে আসা যাত্রী ইমনের সঙ্গে কথা হয় ঢাকা টাইমসের সঙ্গে। তিনি জানান, পল্টন যাবেন। কারওয়ান বাজার পর্যন্ত আসতেই তার দুই ঘণ্টা পার হয়ে গেছে। ফার্মগেট থেকে কারওয়ানবাজার। এখানেই ৪৫ মিনিট পার করেছেন। গাড়ির চাকা ঘোরার কোনো নামগন্ধ নেই। সঙ্গে কড়া রোদ আর ভ্যাপসা গরম তো আছেই।

বাংলামোটরে ট্রাফিক কন্ট্রোলের দায়িত্বে থাকা কাজী বিপ্লব বলেন, ‘ঈদের পর এখন আবার জ্যাম শুরু হয়েছে। অফিস ও স্কুল টাইমে জ্যাম খুব বেশি হচ্ছে। দুপুরের দিকে তুলনামূলক জ্যাম কম। অনেকে তাই পায়ে হেঁটেই গন্তব্যের দিকে চলেছেন। তেষ্টা মেটাতে অনেকে কিনছেন বোতলজাত পানি, শসা- এসব।’

স্বাস্থ্যবিদদের মতে, রোদ-গরমের এমন অবস্থায় স্বাস্থ্যগত মারাত্মক ঝুঁকি রয়েছে। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্কদের। হিটস্ট্রোক, ডিহাইড্রেশন, ঠাণ্ডা-কাশি, সর্দি, পেটের সমস্যাসহ, ঘামাচি-চুলকানি, অ্যালার্জি, খোসপাঁচড়ার প্রভাবও বেড়ে যায় এসময়।

তপ্ত দুপুরে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় পথচারীদের ছাতা মাথায় দিয়ে চলাচল করতে দেখা যায়। বোতলজাত পানি বিক্রির পাশাপাশি সড়কের পাশে আখ-লেবুর শরবত বিক্রিও হচ্ছে অনেক। পাশাপাশি গরম থেকে স্বস্তি পেতে শসা, তরমুজ, আনারসও দেদারছে খাচ্ছেন পথচারীরা।

দুপুরে কথা হয় রাজধানীর মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবকের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘প্রতিদিনই বাচ্চাকে স্কুলে নিয়ে যাওয়া-আসা করি। কিন্তু দুয়েকদিন ধরে এতো রোদ গরম। বাচ্চার শরীর না খারাপ হয়ে যাবে- এই চিন্তায় আছি।’

মিরপুর ১০ থেকে গুলিস্তানে যাবেন নাজমা বেগম। গণপরিপহনের যাত্রী হয়ে খামারবাড়ির জ্যামে আটকে আছেন। কোলে বাচ্চা। গরমে বাসের ভেতর চিৎকার দিয়ে কাঁদছে। বাসের ফ্যান নষ্ট থাকায় নিজেও বকাবকি শুরু করেছেন। বলেন, ‘এই গরমে বাসের ফ্যানগুলা চালু থাকলে বাচ্চাটার কষ্ট কম হইতো। গা দিয়া ঘাম ছুইটা যাইতাছে’।

রবিউল ইসলাম রবি নামে এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা হয় ঢাকা টাইমসের। তিনি জানান, রোদ-গরমে ঘাম গায়ে বসে ঠাণ্ডা লেগেছে। গরমে শরীর অনেক দুর্বল লাগছে বলেও জানান তিনি।

সড়কের পাশে শসা বিক্রি করা একজন বলেন, ‘যে গরম পড়ছে তাতে মানুষ তেষ্টা মেটাতে শসা খাচ্ছে। বাসে উঠলে অনেকেই শসা কিনছেন।

খামারবাড়ি মোড়ে লেবুর শরবত বিক্রেতা বলেন, ‘কিছুদিন ধরে অনেক গরম পড়ছে। এজন্য লেবুর শরবত খাচ্ছে অনেক।’

গরমে সুস্থ থাকতে যা বলছেন চিকিৎসক

গরমে সুস্থ থাকতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ডা. আবু সাঈদ বলেন, ‘গরমে এখন সবারই ত্রাহি অবস্থা। এ সময় সুস্থ থাকতে হলে শরীরের প্রতি বিশেষ যত্ন নিতে হবে। গরমে শরীর অল্পতে ক্লান্ত হয়ে পড়ে। কোনো কাজ করতে গেলে আমরা হাঁপিয়ে উঠি। মন-মেজাজও খিটখিটে হয়ে ওঠে। এ সময় প্রচুর পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি খেতে হবে। ডাবের পানি কিংবা ফলের জুসও খাওয়া যেতে পারে। স্যালাইন খেলেও ভালো। এ সময় রোদ এড়িয়ে চলা দরকার। হাঁটার সময় ছায়াঘেরা স্থান দিয়ে হাঁটতে চেষ্টা করুন। পাতলা সুতির কাপড় পরুন। রোদে বের হলে মাথায় ক্যাপ পরুন। মেয়েরা রোদ প্রতিরোধের জন্য মাথায় শাড়ির আঁচল বা ওড়না দিতে পারেন। চোখে ভালো ব্র্যান্ডের সানগ্লাস ব্যবহার করুন। সানগ্লাস কেনার সময় ফ্যাশনের কথাই শুধু বিবেচনা করবেন না, তা দিয়ে যেন চোখসহ মুখের অনেকখানিই ঢাকে, সেদিকেও লক্ষ রাখুন। রোদে যাতে ত্বক পুড়ে না যায় সে জন্য সানস্ক্রিন ব্যবহার করা যেতে পারে।’

ডা. আবু সাঈদ জানান, ৩০-এর বেশি এসপিএফযুক্ত (সান প্রোটেকটিং ফ্যাক্টর) সানস্ক্রিন মুখে ব্যবহার করা ভালো। গরমে ঘামাচি একটি সাধারণ সমস্যা। গরমের সময় বিভিন্ন কারণে ঘর্মগ্রন্থি বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

প্রচুর পরিমাণ ঘাম তৈরি হয় বলে ঘর্মগ্রন্থি ফুটো করে অনেক পরিমাণ ঘাম ত্বকের নিচে জমা হয়। এতে জ্বালাপোড়াও হয়। এভাবে ঘামাচি বাড়তে থাকে। তেল বা নিম্নমানের লোশন ব্যবহারেও ঘামাচি বাড়ে। ঘামাচির হাত থেকে বাঁচতে বিশেষ ধরনের ঘামাচি পাউডার ব্যবহার করা যেতে পারে। জ্বালাপোড়া বা চুলকানি হলে হাউড্রোকর্টিসন (১ শতাংশ) ব্যবহার করার পরামর্শ দিচ্ছেন তিনি।

এই চিকিৎসক আরও জানান, গরমে পেটের বিভিন্ন রোগ হয়। এর মধ্যে ডায়েরিয়া, জন্ডিস, টাইফয়েড অন্যতম। এ থেকে বাঁচতে পানি অবশ্যই ফুটিয়ে পান করতে হবে। পানি ও খাবার থেকে রোগ ছড়ায়।

রাস্তার ধারের খাবার ও ফাস্টফুড এড়িয়ে চলাই শ্রেয়। বাইরে খেলে থালা-গ্লাস পরিষ্কার আছে কি না এবং খাবারটা টাটকা আছে কি না সেদিকে লক্ষ রাখুন। রাস্তার পাশের গাজর, শসা, লাচ্ছি, আখের রস ইত্যাদি খাওয়া উচিত নয়।- পরামর্শ ডা. আবু সাঈদের।

যে পানি দিয়ে এসব ধোয়া হয় বা যেসব পাত্রে এসব পরিবেশন করা হয় তাতে জীবাণু থাকার আশংকা থাকে। এ গরমে শিশুদেরও যত্ন নিতে হবে। শিশুদের যথাসম্ভব ঠাণ্ডা স্থানে রাখুন। সুতি ও ঢিলেঢালা জামা পরান। বেশির ভাগ শিশুর প্রচুর ঘাম হয়, তাই তাকে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি খেতে দিন।

পানি খেতে না চাইলে ডাব বা বিভিন্ন ফলের জুস বানিয়ে দিন। শিশুদের নিয়মিত গোসল করাতে ভুলবেন না। একটু সতর্ক হলে গরমের এই খরতাপের সময়টাও ভালোভাবে এবং নিঃরোগ শরীরে আমরা কাটাতে পারি।

(ঢাকাটাইমস/২০মে/এসকেএস/এফএ)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
রাজনীতিতে অভিভাবক দল হিসেবে আমরা বারবার ধৈর্য ধরেছি: অধ্যক্ষ সেলিম ভুইয়া
এনবিআরের আরও ৬ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বরখাস্ত
প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতে শিক্ষা উপদেষ্টার আশ্বাস
তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তানের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে আরও একজন গ্রেপ্তার
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা