ঢাবিতে দুই ধরনের ফির প্রস্তাব বৈষম্য তৈরি করবে, বলছেন শিক্ষাবিদরা

মোয়াজ্জেম হোসেন, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ১৮ জুন ২০২২, ১২:৩৬| আপডেট : ১৮ জুন ২০২২, ১৭:৪৯
অ- অ+

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিনেট অধিবেশনে ধনী পরিবারের শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা টিউশন ফি নির্ধারণের যে প্রস্তাব এসেছে তা গ্রহণযোগ্য নয় বলে মনে করছেন শিক্ষাবিদরা।

তারা বলছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ধরনের প্রস্তাব ‘সমাজে বৈষম্য’ তৈরি করবে। বেতন-ফির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের বিভক্ত করে দেওয়া হবে। আর সেটি কোনোভাবেই কাম্য নয়।

বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিনেটের বার্ষিক অধিবেশনে ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট পেশের সময় এ প্রস্তাব দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ।

প্রস্তাবের পক্ষে ঢাবি কোষাধ্যক্ষ মমতাজের যুক্তি ছিল, ‘বিত্তবান অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের জন্য উচ্চশিক্ষার যুক্তিসঙ্গত ব্যয় বহন করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব আয় বাড়বে। আর এই বর্ধিত আয় থেকে গরিব শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় আর্থিক সহযোগিতা দেওয়া সম্ভব হবে।’

দেশের বর্তমান প্রেক্ষিত বিবেচনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বেতন-ফি ‘কম’। কিন্তু তাই বলে অধ্যাপক মমতাজের প্রস্তাব অনুযায়ী দুই ধরনের বেতন-ফি কাম্য নয়। এমনই মত দিচ্ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট—আইইআরের অধ্যাপক এম তারিক আহসান।

সিনেটে প্রস্তাবের বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকাটাইমসকে এই শিক্ষাবিদ বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈশ্বিক মডেলগুলো তুলনা করলে দেখা যাবে বিশ্বের অনেক দেশের তুলনায় আমাদের দেশে অনেক কম খরচে শিক্ষার্থীরা পড়াশুনা করছে। এই বিষয়টা বর্তমান প্রেক্ষিতে একটু পুনর্মূল্যায়ন করা দরকার। কিন্তু এর মানে তো এই নয় দুই ধরনের বেতন ফি দিয়ে একটা বৈষম্য তৈরী করা।’

বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৭ হাজার শিক্ষার্থীর পরিচালনা ব্যয়ের প্রায় পুরোটাই সরকার থেকে আসে। সব শিক্ষার্থীর বেতন একই হারে নেওয়া হয়ে থাকে। এভাবে ভর্তুকিমূলক উচ্চ শিক্ষার সুযোগ সবার জন্য উন্মুক্ত থাকা উচিৎ নয় বলে সিনেটে প্রস্তাবের পক্ষে যুক্তি দেখিয়েছেন অধ্যাপক মমতাজ।

তিনি বলেন, ‘দেশে প্রায় ১৫ শতাংশ লোক আয়কর প্রদান করেন। পরোক্ষ করই সরকারের রাজস্বের প্রধান উৎস। এই পরোক্ষ কর ধনী বা দরিদ্র নির্বিশেষে সবাই দিয়ে থাকেন। দরিদ্রদের প্রদেয় পরোক্ষ করের টাকায় ধনী পরিবারের সন্তানদের প্রায় বিনামূল্যে উচ্চশিক্ষার সুযোগ প্রদান অযৌক্তিক।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকাটাইমসকে অধ্যাপক তারিক আহসান বলেন, ‘আমরা শিক্ষার্থীদের হলের ফি বা একাডেমিক খরচ যা নিচ্ছি তা টাকার মানের তুলনায় এবং প্রশাসনিক খরচের তুলনায় কমই। এগুলো একটু পুনর্মূল্যায়ন করা দরকার।’

‘কিন্তু এটাও লক্ষ্য রাখতে হবে কোনো শিক্ষার্থীর আর্থিক অবস্থা খারাপ থাকলে সেক্ষেত্রে সে যেন স্কলারশিপ সুবিধা, শিক্ষা ঋণ সুবিধা এগুলোও পায়। এগুলো নিশ্চিত না করে যদি আমরা বেতন ফি বাড়ানোর চিন্তা করি সেক্ষেত্রেও কিন্তু বৈষম্য তৈরি হবে। ফির মধ্যে আলাদা ধরণের ক্লাসিফিকেশন তৈরি করা ঠিক হবে না।’

এই শিক্ষাবিদের পরামর্শ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বিভিন্ন ধরনের ফান্ড তৈরি করার ক্ষমতা রাখে। এসব ফান্ড থেকে আর্থিকভাবে দূর্বল শিক্ষার্থীদের সহায়তা দেওয়া যায়। এই জায়গায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কাজ করার যথেষ্ট সুযোগ আছে।

‘যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নিজস্ব ফান্ডে এখন সবকিছু করতে বলা হচ্ছে। তাই আমি মনে করি, বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও অনেক যুগোপযোগী পন্থা আছে যেগুলো দিয়ে আমরা এ সমস্যাগুলো সমাধান করতে পারি এবং সুযোগ সুবিধা বাড়াতে পারি’—বলেন অধ্যাপক তারিক আহসান।

যদি কোনো শিক্ষার্থীর অভিভাবক বিশ্ববিদ্যালয়কে ডোনেট করার ইচ্ছা করেন সেই সুযোগটাও তৈরির পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ‘কিন্তু যদি শিক্ষার্থীদের মধ্যে ধনী গরিব নির্বাচন করতে যায় সেখানে কিন্তু বড় ধরনের বৈষম্য তৈরি হবে। আর এর প্রভাব সমাজে পড়বে।’

শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ই নয় সব বিশ্ববিদ্যালয়েরই আয় বাড়ানোর আরও উপায় আছে বলে মনে করেন অধ্যাপক রফিকউল্লাহ খান। শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম এই উপাচার্য ঢাবির বাংলা বিভাগের অধ্যাপক।

সিনেটে প্রস্তাবের বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকাটাইমসেক রফিকউল্লাহ খান বলেন, ‘আমি প্রথমত বলবো অর্থের সঙ্গে শিক্ষার কোনো সম্পর্ক থাকা উচিত নয়। আর একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধনী-গরিব বিবেচনা করে দুই ধরণের টিউশন ফি কোনোভাবেই চলতে পারে না।’

উদাহরণ দেখিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশেই অনেক প্রতিষ্ঠান আছে যেখানে অনেক বেশি টিউশন ফি দিয়ে অনেকে পড়ালেখা করছে। সেইক্ষেত্রে কিন্তু কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু একই প্রতিষ্ঠানে যখন দুই ধরণের টিউশন ফি হবে তখন সেখানে বৈষম্য সৃষ্টি হবে। অনেক উপায় আছে বিশ্ববিদ্যালয়ের আয় বাড়ানোর। সেদিকেই নজর দেওয়া যেতে পারে।’

(ঢাকাটাইমস/১৮জুন/ডিএম)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
সরকারি অনুদান পাচ্ছে ৩২ চলচ্চিত্র, তালিকা প্রকাশ
ঢাকায় সৌদি আরবের নতুন রাষ্ট্রদূত
মগবাজারে হোটেলে তিনজনের মৃত্যুর ঘটনায় মামলা, কেয়ারটেকার গ্রেপ্তার
যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ৫৬ বন্দির সাজা মওকুফ
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা