বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর চিন্তা

দেশের বাজারে ভোক্তা পর্যায়ে বাড়ানো হয়েছে জ্বালানি তেলের দাম। বিদ্যুতের দামও বাড়তে পারে বলে আভাস দিয়েছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিভাগ। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) কাছে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়ে রেখেছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি)।
বিইআরসির তথ্য বলছে, মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব বিশ্লেষণ প্রতিবেদন পর্যালোচনার জন্য তাদের হাতে দেড় মাস সময় থাকলেও কমিশন চাইলে যেকোনো সময় দাম বাড়িয়ে দিতে পারে।
জানা গেছে, গত মার্চ মাসে বিদ্যুতের একক ক্রেতা হিসেবে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) বিদ্যুতের পাইকারি দাম ৬৫ দশমিক ৫৭ শতাংশ বাড়াতে বিইআরসির কাছে প্রস্তাব জমা দেয়।
প্রস্তাবের ওপর গত ১৮ মে গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়। নিয়ম অনুযায়ী শুনানির পরবর্তী তিন মাসের মধ্যে দাম বাড়ানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সে হিসাবে চলতি মাসের মধ্যে ঘোষণা আসতে পারে।
গণশুনানিতে বিদ্যুতের দাম পাইকারি পর্যায়ে গড়ে প্রায় ৫৮ শতাংশ বাড়ানোর সুপারিশ করে বিইআরসি গঠিত কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি। তারা একই সঙ্গে বলেছে, ভোক্তা পর্যায়ে দাম না বাড়ালে পাইকারি মূল্যহার কার্যকর করা সম্ভব হবে না। গণশুনানিতে কারিগরি কমিটির ওই সুপারিশ তীব্র বিরোধিতার মুখে পড়ে।
এদিকে বিইআরসি সূত্রে জানা গেছে, সরকারের বিভিন্ন সংস্থা পাইকারি দর জমা দিলেও খুচরা মূল্যহার এখনো জমা দেয়নি।
মে মাসের গণশুনানিতে বিদ্যুতের দাম ইউনিটপ্রতি পাইকারি দাম ৩ টাকা ৩৯ পয়সা বাড়িয়ে ৮ টাকা ৫৬ পয়সা করার প্রস্তাব করে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড। এত দিন সরকার ৩ টাকা ৩৯ পয়সা ভর্তুকি দিয়ে আসছিল। বিপিডিবির এই প্রস্তাব ছিল গ্যাসের তখনকার দর বিবেচনায়।
বিদ্যুতের মূল্যহার নির্ধারণের জন্য গণশুনানির পর গত জুন মাসে বাড়ে গ্যাসের দাম। দেশে ৫৬ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় গ্যাসে। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানির দামও ইতিমধ্যে বেড়েছে। তাই বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি অবধারিত বলে জানান একজন কর্মকর্তা।
বিইআরসির বিদ্যুৎ বিভাগের পরিচালক রেজাউল করিম ঢাকাটাইমসকে বলেন, বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর বিষয়ে অনুষ্ঠিত গণশুনানির প্রস্তাব ও সুপারিশ বিশ্লেষণ-পর্যালোচনা করা হচ্ছে। এখনো অ্যানালাইসিস প্রতিবেদনের জন্য প্রায় দেড় মাস সময় আছে।’
দেড় মাসের মধ্যে মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব বিশ্লেষণের প্রতিবেদন পাওয়া যাবে জানিয়ে রেজাউল করিম বলেন, ‘তারপর দাম বাড়ানোর একটা সিদ্ধান্তে যাব। কিছু না কিছু দাম বাড়বেই, এতে কোনো সন্দেহ নেই। কারণ বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত গ্যাস ও অন্যান্য জ্বালানির দাম বেড়েছে ইতিমধ্যে।’
কবে নাগাদ বিদ্যুতের দাম বাড়তে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে বিইআরসির পরিচালক ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমাদের অ্যানালাইসিস প্রতিবেদন অনুযায়ী দেড় মাস আমাদের সময় আছে। তবে এর আগেও দাম বেড়ে যেতে পারে। পেট্রোলিয়ামজাত জ্বালানির দাম এক রাতের মধ্যে বাড়তে দেখা গেছে। কমিশন চাইলে যেকোনো সময় বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে দিতে পারে।
বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত তাদের কাছে আসেনি বলে জানান বিপিডিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা শামীম হাসান। ঢাকাটাইমসকে তিনি বলেন, ‘বিইআরসিতে দাম বাড়ানোর প্রস্তাব কয়েক মাস আগেই দেওয়া হয়েছে। তারা সিদ্ধান্ত দেবেন, কতটুকু দাম বাড়ালে জনগণের সহনীয় পর্যায়ে থাকবে।’
বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাবের কারণ হিসেবে শামীম বলেন, ‘বিদ্যুতে যে ভর্তুকি দিতে হচ্ছে সেটা মিনিমাইজ করা দরকার। আমরা লোকসানে চলছি। সরকারের কাছ থেকে আমরা আর কত ভর্তুকি চাইতে পারি। তাই আমরা চাইছি দামটা যেন সমন্বয় করা হয়।’
প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে যে জ্বালানি খরচ হয়, তার মূল্য বর্তমান বিদ্যুতের মূল্যের চেয়ে অনেক বেশি বলে জানান বিপিডিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা। বলেন, ‘দেশে জ্বালানি তেল ব্যবহার করে ২৫ শতাংশ এবং গ্যাস ব্যবহার করে প্রায় ৫৬ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়। জুন মাসে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির পর উৎপাদন খরচ আরও বেড়েছে।’
তবে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে বিদ্যুতের দামে প্রভাব পড়বে না বলে জানান বিদ্যুৎ বিভাগের জনসংযোগ কর্মকর্তা আসলাম উদ্দিন। ঢাকাটাইমসকে তিনি বলেন, ‘ডিজেল দিয়ে মাত্র এক হাজার ২৮০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষমতা আমাদের। বিপদে না পরলে আমরা ডিজেল দিয়ে খুব একটা বিদ্যুৎ উৎপাদন করি না। বিদ্যুতের দাম আগে থেকেই বাড়ার একটা প্রক্রিয়ায় আছে।’
সম্প্রতি বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, ‘বিশ্ববাজারে দাম বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে ডিজেল, পেট্রোল, অকটেন, গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে যৌক্তিক পর্যায়ে নিয়ে আসার সময় এসেছে।’
প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্য অনুযায়ী শুক্রবার রাতে হঠাৎ জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর ঘোষণা আসে। এদিন রাত ১২টার পর থেকে ভোক্তা পর্যায়ে খুচরা মূল্য লিটারপ্রতি ডিজেল ও কেরোসিন ৩৪ টাকা বেড়ে ১১৪ টাকা, অকটেন ৪৬ টাকা বেড়ে ১৩৫ ও পেট্রোল ৪৪টাকা বেড়ে ১৩০ টাকা হয়।
এর আগে শুক্রবার বিকালে বিদ্যুৎ-জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির ইঙ্গিতসংবলিত প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্য নিয়ে সাংবাদকিরা তার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন যে, কিছুদিন আগে গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে। জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যে দামটা বাড়িয়েছি সেটা গত বছরের ডিসেম্বরের পরিস্থিতি বিবেচনায়। সে কারণে আমি মনে করি গ্যাসে আমাদের আরেকটা অ্যাডজাস্টমেন্ট হওয়া উচিত।’
উন্নত বিশ্বের সব দেশেই এভাবে সমন্বয় করতে হচ্ছে উল্লেখ করে নসরুল হামিদ বলেন, ‘আমরাই কেবল বসে আছি।… তেলের মার্কেটে এখন পুরোপুরি লস দেওয়া হচ্ছে। পাশের দেশে তেলের দাম বাড়ছে, সঙ্গে সঙ্গে অ্যাডজাস্ট করতেছে। পৃথিবীর অনেক দেশেই এমন হচ্ছে।’
তার আগে গত ৫ জুন গ্যাসের দাম এক দফায় ২২ দশমিক ৭৮ শতাংশ বাড়ানো হয়। বিদ্যুতের পাইকারি দাম বাড়ানো হয়েছিল সর্বশেষ ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে। তখন খুচরায়ও দাম বেড়েছিল।
সর্বশেষ ২০২১ সালের ৪ নভেম্বর ডিজেল ও কেরোসিনের দাম বাড়ানো হয়। সেই সময় এই দুই জ্বালানির দাম লিটারপ্রতি ৬৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮০ টাকা করা হয়।
(ঢাকাটাইমস/০৭আগস্ট/মোআ)
সংবাদটি শেয়ার করুন
বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
বিশেষ প্রতিবেদন এর সর্বশেষ
হঠাৎ মাঠে নিষিদ্ধ হিযবুত তাহরীর, সেঁটেছে পোস্টার বিলাচ্ছে লিফলেট, উদ্দেশ্য কী?

এবার চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাওয়ার অনুমতি পাবেন খালেদা জিয়া, তবে...

বিএনপি নির্বাচনে না এলে ‘আসন’ বাড়বে মহাজোট শরিকদের

অন্যের স্বত্ব নিয়ে দুর্নীতি: কপিরাইট অফিসের দুই কর্মচারী এখন অঢেল বিত্ত ভৈববের মালিক

দলে ফিরতে চান হাজারের বেশি ‘বহিষ্কৃত’, বিএনপি দপ্তরে চিঠির স্তূপ

তামিম ইকবালের সঙ্গে অন্যায় হলো কী-না!

মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞার ভুয়া তালিকা ছড়িয়ে কারা সুবিধা নিতে চায়?

পিকে হালদারকে দেশে ফেরানোর চেষ্টা কি আদৌ আছে? কেন ধীরগতি?

সাকিবের আবদার মেনেই শেষমেশ তামিমকে বিশ্বকাপ দলে না রাখার সিদ্ধান্ত?
