ডায়াবেটিস ও ক্যানসারের ঝুঁকি কমায় ব্ল্যাক রাইস

ফিচার ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১৩ নভেম্বর ২০২২, ০৯:৪২ | প্রকাশিত : ১৩ নভেম্বর ২০২২, ০৯:৪০

মানুষের শরীরের জটিল রোগগুলোর মধ্যে ডায়াবেটিস ও ক্যানসার অন্যতম। সঠিক সময়ে ডায়াবেটিস ও ক্যানসার নির্ণয় করে চিকিৎসা না নিলে মৃত্যু ঘটতে পারে। অস্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা, বাইরের খাবার খাওয়ার প্রবণতা, কায়িক শ্রম কম করা, তেল-মশলাদার, মিষ্টি বেশি খাওয়া, হঠাৎ ওজন বেড়ে যাওয়া, ধূমপান, ফাস্টফুড গ্রহণসহ নানা কারণে ডায়াবেটিস ও ক্যানসার হতে পারে। সারা বিশ্বে ডায়াবেটিস ও ক্যানসারের আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। তাই সাবধান থাকা প্রয়োজন।

ক্যানসারের ক্ষেত্রে ৯০ শতাংশ ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশগত কারণে হয়ে থাকে। বাকি ১০ শতাংশ বংশানুক্রমে হয়। এক্ষেত্রে জিনের মাধ্যমে এক প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্মে ক্যানসার হতে পারে।

অন্যদিকে ডায়াবেটিস রোগীদের ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে প্যানক্রিয়াটিক ক্যানসার, হেপাটোবিলিয়ারি ক্যানসারের ঝুঁকি বেড়ে যায়।

ডায়াবেটিস হলে খাবারদাবারেও অনেক বিধিনিষেধ চলে আসে। ডায়াবিটিস হলে কার্বোহাইড্রেট খাবার কম খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা। সেজন্য অনেকেই ভাত এড়িয়ে চলেন। চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, ডায়াবেটিস হলেও ভাত খাওয়া যেতে পারে। তবে সাদা ভাত নয়। রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাদা ভাতের পরিবর্তে ভরসা রাখতে পারেন ‘ব্ল্যাক রাইস’-এ। অনেকেই হয়তো জানেন না, এই চালের ভাত ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য একটি স্বাস্থ্যকর বিকল্প। ব্ল্যাক রাইসের পুষ্টিগুণ অনেক। এটি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য একেবারে আদর্শ।

চিকিৎসা-সংক্রান্ত গুণাগুণের জন্য ব্ল্যাক রাইসকে ‘ওয়ার্ল্ড সুপার ফুড’ বলা হয়। ১৯৯০ সালে ইংল্যান্ডে প্রথম পরিচিতি লাভ শুরু করে ব্ল্যাক রাইস। বর্তমানে দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশে যেমন, চিন, থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা, ইন্দোনেশিয়া ও ভারতে এই চালের চাষ উত্তরোত্তর বেড়ে চলেছে। এই চালের বহিরাংশে অ্যান্থোসায়ানিন বেশি মাত্রায় উপস্থিত থাকায় চালের রঙ কালো হয়।

কৃষিবিজ্ঞানীরা চার রকমের কালো চালের খোঁজ পেয়েছেন। এগুলো হল ব্ল্যাক জাপনিকা চাল, ব্ল্যাক গ্লুটিনউস চাল, ইতালিয়ান কালো চাল ও থাই ব্ল্যাক জেসমিন চাল। হাফ কাপ ব্ল্যাক রাইসের পুষ্টিগুণ বিচার করলে দেখা যায় এতে শক্তি আছে ৩৫৬ কিলো ক্যালোরি, প্রোটিন ৮.৮৯ গ্রাম, ফ্যাট ৩.৩৩ গ্রাম, শর্করা ৭৫.৫৬ গ্রাম, ফাইবার ২.২ গ্রাম, আয়রন ২.৪ মিলিগ্রাম।

ব্ল্যাক রাইস রোগ মুক্তির জন্য প্রাচীনকাল থেকেই সারা বিশ্বে ব্যবহৃত হচ্ছে। পুষ্টি বিজ্ঞানীদের মতে হৃদরোগ, ক্যানসার, লিভার, কিডনি, পাকস্থলী ও বার্ধক্যজনিত রোগ থেকে মুক্তি দিতে ব্ল্যাক রাইস বিস্ময়কর ভূমিকা পালন করে। ব্ল্যাক রাইস নিয়মিত খেলে ডায়াবেটিস রোগীদেরও ইনসুলিন নেয়ার প্রয়োজন নেওয়ার দরকার নেই। এমনকি শরীরকে যৌবন দীপ্ত রাখতে ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এই চালের ভূমিকা অসামান্য। এককথায় এই চাল আপনাকে সুস্থ-সতেজ নতুন জীবন দান করবে। প্রচলিত ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, দুর্বল রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা, দূষণ ও বিষাক্ত খাদ্যচক্র থেকে প্রাকৃতিক উপায়ে রোগ মুক্তি দিতে ব্ল্যাক রাইস আপনার প্রতি স্বয়ং স্রষ্টার আশীর্বাদ ।

ব্ল্যাক রাইস-এ আছে প্রচুর পরিমাণে ‘অ্যান্টি অক্সিডেন্ট’। যা ক্যানসার প্রতিরোধে সাহায্য করে। সঙ্গে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স। এই চাল খেলে রক্তে শর্করার পরিমাণ অনেক কম হয় বলে একে ‘অ্যান্টি ডায়াবেটিস রাইস’ও বলা হয়। লোহা ও জিঙ্ক প্রচুর পরিমাণে থাকার জন্য প্রসূতিদের ক্ষেত্রে পথ্য হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে। জেনে নিন ঔষধি পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ ‘ব্ল্যাক রাইস’-এর স্বাস্থ্য উপকারিতা-

ব্ল্যাক রাইসে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট প্রচুর থাকায় শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। ত্বক পরিষ্কার করে ও শরীর থেকে দূষিত পদার্থ বের করে দেয়। ব্ল্যাক রাইস শরীরের প্রদাহ কমায় ও ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করে। এতে থাকা ফাইবার হার্টকে সুস্থ রাখে।

গবেষণায় জানা গেছে, ব্ল্যাক রাইস নিয়মিত খেলে সংবহন তন্ত্রে এথেরসক্লেরো টিক প্লাক তৈরিতে বাধা দেয়। ফলে শিরা-ধমনির ভেতরে ফ্যাট জমে না ও রক্ত চলাচল স্বাভাবিক থাকে। এমনকী, এই চাল ক্যানসারও প্রতিরোধ করে। কালো চাল হজমেও সাহায্য করে। এই চালে প্রচুর ভিটামিন বি থাকায় মানসিক চাপ কমায় ও স্নায়ুতন্ত্রকে সুস্থ রাখে।

ব্ল্যাক রাইসে ফাইবার এবং প্রোটিনের পরিমাণ অনেক বেশি। ফলে রক্ত শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাইলে ব্ল্যাক রাইস হতে পারে অন্যতম ভরসা।

ডায়াবেটিস হলে ওজন বে়ড়ে যাওয়ার একটা আশঙ্কা থাকে। ডায়াবেটিসে ভুগছেন এমন অনেকেরই ওজন স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি। রক্তে শর্করার মাত্রার পাশাপাশি ওজনও নিয়ন্ত্রণে রাখতে রোজের পাতে সাদা ভাতের পরিবর্তে রাখতেই পারেন ব্ল্যাক রাইস।

গ্লুটেন আছে এমন খাবার ডায়াবেটিস রোগীদের এড়িয়ে চলার কথা বলে থাকেন চিকিৎসকরা। কারণ গ্লুটেনযুক্ত খাবার ডায়াবেটিস রোগীদের শরীরে নানা রকম বাড়তি অসুস্থতার জন্ম দেয়। ব্ল্যাক রাইসে গ্লুটেন নেই। ডায়াবেটিস ধরা পড়লে অনায়াসে খেতে পারেন এই চালের তৈরি ভাত।

টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতেও ব্ল্যাক রাইস কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। ফাইবার এবং ম্যাগনেশিয়াম-সমৃদ্ধ ব্ল্যাক রাইস ডায়াবেটিসের সঙ্গে লড়তে হাতিয়ার হতে পারে। ফলে টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতে পারে ব্ল্যাক রাইস।

ব্ল্যাক রাইস খেতে সুস্বাদু । আয়রন বেশী বলে রক্ত স্বল্পতায় কাজে দেয়। ফাইবারে ভরপুর বলে হজম শক্তি বাড়িয়ে তোলে ও সহজে কোষ্ঠ পরিষ্কার হয়। শর্করা কম, তাই ডায়াবেটিসে পথ্য। ওজনে ও রক্ত চাপে ভারসাম্য রাখে। শক্তিসালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পুষ্টিগুনে ভরপুর এই চালে আছে- ১৮টি এমিনো এসিড , জিংক , কপার , ক্যারোটিন ও অন্যান্য ভিটামিন ও খনিজ উপাদান।

এন্থোসায়ানিন থাকায় ব্ল্যাক রাইসের রং কালো আর এন্থোসায়ানিন ক্যানসার প্রতিরোধ করে। তার সঙ্গে বার্ধক্য, মানসিক চাপ, ডায়াবেটিস, এমনকি ভাইরাস-ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ প্রতিহত করতেও এন্থোসায়ানিনের জুড়ি মেলা ভার। যদি নিজেকে নিজে সুস্থ-সতেজ-প্রাণবন্ত রাখতে চান এবং আরো বেশি দিন আনন্দে বাঁচতে চান তবে ঔষধি পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ ‘ব্ল্যাক রাইস’খেতে পারেন।

(ঢাকাটাইমস/১৩ নভেম্বর/আরজেড)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :