মেয়ের অ্যাওয়ার্ড দেখে জাগে পড়ালেখার ইচ্ছা, ৫২ বছরে এসএসসি পাস

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২৮ নভেম্বর ২০২২, ২০:০৮

প্রত্যন্ত গ্রামে বাড়ির কৃষিকাজ আর সংগ্রামী জীবন সামলে পড়াশোনা করা হয়ে ওঠেনি আব্দুল মতিনের। কিন্তু পড়াশোনার প্রতি তার ছিল অদম্য ভালোবাসা। মেয়ের ডিনস অ্যাওয়ার্ড গ্রহণ করতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছিলেন। অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন মেয়ের অর্জনে আর শিক্ষার পরিবেশে। তাই পণ করেন, সব বাধা ঠেলে একটু একটু করে এগোনোর। বয়স তার কাছে বাধা হয়নি। প্রচণ্ড ইচ্ছাশক্তি সব বাধা গুড়িয়ে দিয়ে তাকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে গেছে।

অবশেষে ইচ্ছা পূরণ করেই ছাড়লেন। এবছর সাফল্যের সঙ্গে এসএসসি পাস করেছেন। সার্টিফিকেটের জন্ম সাল অনুযায়ী তার বয়স এখন ৫২ বছর। পেয়েছেন জিপিএ ৪.৬১। পরীক্ষার নম্বরপত্র বলছে অল্পের জন্যই এ প্লাস হাতছাড়া হয়েছে তার। কারিগরি শিক্ষা বোর্ড থেকে এসএসসি পাস করলেন তিনি। এ গল্প সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার খড়খড়িয়া গ্রামের আব্দুল মতিনের। স্থানীয়ভাবে মহাসিন ডাকনামে পরিচিত তিনি।

সদ্য এসএসসি পাস করা আব্দুল মতিনের মেয়ে অলিভা আক্তার মায়া রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদ থেকে ২০২০ সালে ডিনস অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন। প্রথম স্থান অর্জন করেছেন এমএ শ্রেণিতে। বিশ্ববিদ্যালয়ে সেরা ফল নিয়ে পাস করা এবং প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার ফল প্রত্যাশী মেয়ে এবার বাবার এসএসসি পাসের খবরে যারপরনাই উচ্ছ্বসিত।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এই মেধাবী স্নাতক বলেন, "আমি নিজে ভালো ফল অর্জন করেও এতোটা উচ্ছ্বসিত হইনি; যেমনটা আনন্দিত হয়েছি আমার বাবার এসএসসি পাস করবার খবব জেনে।'

আব্দুল মতিনের এই অর্জনে উচ্ছ্বসিত খড়খড়িয়া গ্রাম তথা তাড়াশ সিরাজগঞ্জের মানুষ। কেননা, তিনি যা করেছেন তার সবার কাছেই অনুপ্রেরণার আদর্শ। শিক্ষা যে জীবনব্যাপী প্রক্রিয়া ও তড়স্যার তা তিনি প্রমাণ করেছেন তার অধ্যবসায় দিয়ে।

তাড়াশের কুসুম্বী গ্রামে নাজাততুল্লা আয়েশা মেমোরিয়াল টেকনিক্যাল স্কুলের শিক্ষার্থী আব্দুল মতিন এখন এলাকায় অনুপ্রেরণার আদর্শ। তার এই অর্জনে আনন্দিত এলাকার মানুষ।

এই প্রতিবেদককে টেলিফোনে আব্দুল মতিন বলেন, "সময়মত আমি আমার পূর্ণ স্বপ্ন পূরণ করতে পারিনি সত্য। তবে, শিক্ষার আলোর কাছে যে সব আলোই ম্লাণ তা আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি। আর এই বিশ্বাস থেকেই বয়সের চিন্তা বাদ দিয়ে, সংসারের চাপ সামলে মন থেকে পড়বার চেষ্টা করেছি। আগামীতে এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে চাই।"

আব্দুল মতিনের এই অর্জন উদযাপন করছেন তার গ্রামের মানুষ। তার স্নাতকোত্তর ভাতিজা সুরুজ্জামান ফেইসবুখে লিখেছেন, শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন স্তরে নিজে পাস করেও এতাটা খুশি হইনি যেমন খুশি আজ হয়েছি চাচার এসএসসি পাসের খবরে।"

এদিকে খড়খড়িয়ো গ্রামের ফেইসবুক পেইজ "স্বপ্ন খড়খড়িয়াতেই আব্দুল মতিনের এসএসসি পাসের খবর শোয়ার করে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছে গ্রামের সচেতন সমাজ।

এ ব্যাপারে বিশিষ্ট সাংবাদিক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক এবং ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোকলোর স্টাডিজ বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মিঠুন মোস্তাফিজ বলেন, আব্দুল মতিন আমার ফুফাত ভাই এবং বোন জামাই। আমি দেখেছি কত কষ্ট করে, জীবনের সঙ্গে সংগ্রাম করে এগোতে চেষ্টা করছেন তিনি। আজ তিনি কেবল এসএসসি পাস করেননি; বরং আমি তার এই অর্জনকে দেখছি ইচ্ছাশক্তির বিজয় হিসেবে। কেননা তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন, ইচ্ছাশক্তি থাকলে পড়াশোনার ক্ষেত্রে বয়স কোনো বাধা নয়। আমি আব্দুল মতিনের এই অর্জনে সত্যিই খুব খুশি হয়েছি। তার বয়সী মানুষগুলোর জন্য একজন মডেল হতে পারেন আব্দুল মতিন। তার বিশ্ববিদ্যালয় পাস করা মেয়েও আজ দারুণ ভীষণ এবং দারুণ উচ্ছ্বসিত। যখন কোনো সন্তান পিতার জন্য আনন্দিত হয়, উচ্ছ্বসিত হয় তখন সেটা সেই পিতার দারুণ গর্বের একটি অর্জন নিঃসন্দেহে।''

তিনি তার এক ফেইসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘এবার এইচএসসিও সহজেই পাস করার কথা। সেটা হয়ে গেলে স্নাতক হওয়াও কঠিন কিছু হবে না। এই অদম্য পড়ুয়ারাই হয়ে থাক এগিয়ে যাওয়া বাংলাদেশের অনুপ্রেরণা।’

(ঢাকাটাইমস/২৮নভেম্বর/ইএস)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :