মাধ্যমিকে রেকর্ড সংখ্যক জিপিএ-ফাইভ

এম এস নাঈম, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২৮ নভেম্বর ২০২২, ২২:৩৮

সংক্ষিপ্ত সিলেবাস ও প্রশ্নপত্রে একাধিক অপশন থাকায় এবারের এসএসসি পরীক্ষায় রেকর্ডসংখ্যক জিপিএ-ফাইভ পেয়েছেন শিক্ষার্থীরা। এবার পাসের হার কমলেও গত বছরের তুলনায় জিপিএ-৫ বেড়েছে ৮৬ হাজারেরও বেশি। এছাড়া পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য শিক্ষার্থীরা আড়াই বছর সময় পাওয়ায় ফলাফল ভালো করেছেন বলে মনে করছেন শিক্ষামন্ত্রী।

নয়টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড, মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড এবং কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে মোট জিপিএ-৫ পেয়েছে ২ লাখ ৬৯ হাজার ৬০২ জন। যা উত্তীর্ণের মোট সংখ্যার ১৫ দশমিক ৪৬ শতাংশ। এর মধ্যে সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে জিপিএ-৫ পেয়েছে ২ লাখ ৩৩ হাজার ৭৬৩। অপরদিকে, মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩৫ হাজার ৮৩৯ জন। চলতি বছরের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় সারাদেশে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে ৮৬ হাজার ২৬২ জন। গত বছর ১ লাখ ৮৩ হাজার ৩৪০ জন পরীক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন।

প্রতিবারের মতো এবারও জিপিএ-৫ এ সবার ওপরে রয়েছে ঢাকা বোর্ডের শিক্ষার্থীরা। এ শিক্ষা বোর্ডের ৬৪ হাজার ৯৮৪ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে।

রেকর্ডসংখ্যক পাস করেছে যশোর শিক্ষা বোর্ডে। প্রাপ্ত ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, গড়ে এবার এগিয়ে রয়েছে মেয়েরা। রাজধানীর বড় স্কুলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভালো করেছে ভিকারুননিসা নুন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ। আশ্চর্যের বিষয় হলো, ৫০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে একজনও পাস করতে পারেনি। আবার শতভাগ পাস করেছে দেশের ২ হাজার ৯৭৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী। গত বছর ১৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোনো শিক্ষার্থী পাস করতে পারেনি। গত বছরের চেয়ে শূন্য পাস করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বেড়েছে ৩২টি।

এসএসসি ২০২২ সালে ভিকারুননিসা নুন স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে পরীক্ষার্থী ছিল ২৩২২ জন। পরীক্ষায় অনুপস্থিত ছিল ১৬ জন। পরীক্ষায় অংশ নেয় ২৩০৬ জন। পাস করেছে ২৩০১ জন। ফেল করেছে ৫ জন। জিপিএ-৫ পেয়েছে ২০২৫ জন। পাসের হার ৯৯ দশমিক ৭৮। এদের মধ্যে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ২০৪৫ জন। মানবিক থেকে ৫৫ জন এবং ব্যবসায় শিক্ষা থেকে ২০৬ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে।

মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে ২ হাজার ৬৭১ জন শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়। পরীক্ষায় পাস করে ২ হাজার ৬৬১ জন। ফেল করেছে ১০ জন। জিপিএ-৫ পেয়েছে ২ হাজার ১৮২ জন। প্রতিষ্ঠানটির পাসের হার ৯৯.৬৩ শতাংশ এবং জিপিএ-৫ এর হার ৮৩ শতাংশ।

জিপিএ-ফাইভে শীর্ষে ঢাকা বোর্ড হলেও পাসের হারে শীর্ষে যশোর শিক্ষা বোর্ড। এই বোর্ডে ৯৫ দশমিক ১৭ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে। আর সবচেয়ে কম পাস করেছে সিলেট বোর্ডে, ৭৮ দশমিক ৮২ শতাংশ। ২০২১ সালে ময়মনসিংহ বোর্ডে সবচেয়ে বেশি, ৯৭ দশমিক ৫২ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছিল। আর সবচেয়ে কম পাসের হার ছিল বরিশাল বোর্ডে, ৯০ দশমিক ১৯ শতাংশ।

এ বছর সবচেয়ে বেশি পাসের হার বিজ্ঞান বিভাগে এবং সর্বনিম্ন পাসের হার মানবিক বিভাগে। বিজ্ঞান বিভাগে পাসের হার ৯৭ দশমিক ৯ শতাংশ এবং মানবিক বিভাগে পাসের হার ৮০ দশমিক ৮২ শতাংশ। এছাড়া বাণিজ্য বিভাগে ৯১ দশমিক ৮৪ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছেন।

গতকাল সকালে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি গণভবনে এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন। পরে দুপুর ১টায় তিনি রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইন্সটিটিউটে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকের কাছে ফলাফলের বিষয়টি অবহিত করেন।

তিনি বলেন, সব বিষয়ে পরীক্ষা হওয়ার ফলে গতবারের চেয়ে শতভাগ ফেল করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেড়েছে। তবে কেন পাস করতে পারেনি সেটা আমরা খতিয়ে দেখব। আমরা শুধু শাস্তি নয়, সবাইকে নিয়েই এগিয়ে যেতে চাই। সেই কারণে সমস্যা সমাধানের চেষ্টাই আমাদের মূল লক্ষ্য। তবে, এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে যদি এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠান থাকে সেটাও আমরা দেখব।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য প্রায় আড়াই বছর সময় পেয়েছে। ভালো প্রস্তুতির কারণে জিপিএ-৫ এর সংখ্যা বেড়েছে। পাশাপাশি সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে, এটিও ভালো ফলাফলের একটি বড় কারণ।

প্রকাশিত ফলাফলে দেখা গেছে, এবার এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় গড় পাসের হার ৮৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ। গত বছর এই পরীক্ষায় পাসের হার ৯৩ দশমিক ৫৮ শতাংশ ছিল। সেই হিসাবে গত বছরের তুলনায় এবার পাসের হার কমেছে ৬ দশমিক ১৪ শতাংশ।

এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় সারাদেশে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ২ লাখ ৬৯ হাজার ৬০২ জন শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে ছেলে শিক্ষার্থী ১ লাখ ২১ হাজার ১৫৬ জন ও নারী শিক্ষার্থী ১ লাখ ৪৮ হাজার ৪৪৬ জন। যা উত্তীর্ণের মোট সংখ্যার ১৫ দশমিক ৪৬ শতাংশ। এর মধ্যে সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে জিপিএ-৫ পেয়েছে ২ লাখ ৩৩ হাজার ৭৬৩।

চলতি বছর নয়টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের গড় পাসের হার ৮৮ দশমিক ১০। আর মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডে গড় পাসের হার ৮২ দশমিক ২২ শতাংশ। আর কারিগরি শিক্ষাবোর্ডে পাসের হার ৮৪. ৭ শতাংশ।

ঢাকা বোর্ডে পাসের হার ৯০ দশমিক ০৩ শতাংশ, ময়মনসিংহে ৮৬ দশমিক ৭ শতাংশ, রাজশাহীতে ৮৫ দশমিক ৮৭ শতাংশ, কুমিল্লায় ৯১ দশমিক ২৮ শতাংশ, বরিশালে ৮৯ দশমিক ৬১ শতাংশ, সিলেটে ৭৮ দশমিক ৮২ শতাংশ, চট্টগ্রামে ৮৭ দশমিক ৫৩ শতাংশ, যশোরে ৯৫ দশমিক ০৩ শতাংশ ও দিনাজপুরে ৮১ দশমিক ১৪ শতাংশ।

মাদ্রাসা বোর্ডে পাসের হার ৮২ দশমিক ২২ শতাংশ। প্রকাশিত ফলাফলে দেখা গেছে, এ বছর মাদ্রাসা বোর্ডে থেকে ২ লাখ ৬০ হাজার ১৩২ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়। তাদের মধ্যে ২ লাখ ১৩ হাজার ৮৮৩ জন পরীক্ষায় পাস করেছেন। আর জিপিএ-৫ পেয়েছেন ১৫ হাজার ৪৫৭ জন। তাদের মধ্যে ছেলে শিক্ষার্থী ৭ হাজার ১৮৪ জন ও মেয়ে শিক্ষার্থী ৮ হাজার ২৭৩ জন।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ৮টি বিদেশি কেন্দ্রে এ বছর এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল ৩৬৩ জন শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে পাস করেছে ৩৪৮ জন। বিভিন্ন দেশে বসবাসরত প্রবাসীদের ছেলেমেয়েরা এসব কেন্দ্রে পরীক্ষা দিয়েছিল। ফলাফলে দেখা যায়, প্রবাসী শিক্ষার্থীদের পাসের হার ৯৫ দশমিক ৮৭ শতাংশ।

চলতি বছরের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় পাসের হারে এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড। ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ৮৮ দশমিক ১০ শতাংশ, মাদ্রাসা বোর্ডে পাসের হার ৮২ দশমিক ২২ শতাংশ এবং কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ৮৯ দশমিক ৫৫ শতাংশ। ফলাফল পাসের হারে এগিয়ে রয়েছে কারিগরি শিক্ষা বোর্ড।

ঢাকা বোর্ডে ছেলেদের পাসের হার ৮৯ দশমিক ৫৭ শতাংশ, মেয়েদের ৯০ দশমিক ৪৫ শতাংশ৷ চট্টগ্রাম বোর্ডে ছেলেদের পাসের হার ৮৭ দশমিক ৩৩ শতাংশ, মেয়েদের ৮৭ দশমিক ৬৯ শতাংশ৷ রাজশাহী বোর্ডে ছেলেদের পাসের হার ৮৫ দশমিক ৬২ শতাংশ, মেয়েদের ৮৬ দশমিক ১৭ শতাংশ। কুমিল্লা বোর্ডে ছেলেদের পাসের হার ৯১ দশমিক ৫৬ শতাংশ, মেয়েদের ৯১ দশমিক ০৬ শতাংশ। যশোর বোর্ডে ছেলেদের পাসের হার ৯৪ দশমিক ৪৩ শতাংশ, মেয়েদের ৯৫ দশমিক ৯২ শতাংশ। সিলেট বোর্ডে ছেলেদের পাসের হার ৭৮ দশমিক ৭১ শতাংশ, মেয়েদের ৭৮ দশমিক ৯০ শতাংশ। বরিশাল বোর্ডে ছেলেদের পাসের হার ৮৭ দশমিক ৯৬ শতাংশ, মেয়েদের ৯১ দশমিক ১৬ শতাংশ। দিনাজপুর বোর্ডে ছেলেদের পাসের হার ৮০ দশমিক ৭৭ শতাংশ, মেয়েদের ৮১ দশমিক ৫৫ শতাংশ। ময়মনসিংহ বোর্ডে ছেলেদের পাসের হার ৮৯ দশমিক ০৯ শতাংশ, মেয়েদের ৮৮ দশমিক ৯৫ শতাংশ।

এছাড়া মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডে ছাত্রদের পাসের হার ৮২ দশমিক ১২ এবং ছাত্রীদের ৮২ দশমিক ৩২ শতাংশ। কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে ছাত্রদের পাসের হার ৮৮ দশমিক ৮৪ শতাংশ এবং ছাত্রীদের ৯১ দশমিক ৮০ শতাংশ।

প্রতিবছর সাধারণত ফেব্রুয়ারিতে এসএসসি পরীক্ষা শুরু হয়। করোনাভাইরাসের কারণে পিছিয়ে যাওয়া এ পরীক্ষা ১৯ জুন শুরু হওয়ার কথা থাকলেও সিলেটসহ কয়েকটি জেলায় বন্যার কারণে ১৭ জুন পরীক্ষা স্থগিত করে সরকার। এর প্রায় তিন মাস পর পুনর্বিন্যস্ত পাঠ্যসূচি অনুযায়ী ১৫ সেপ্টেম্বর এসএসসি পরীক্ষা শুরু হয়।

নয়টি সাধারণ বোর্ড, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ড মিলিয়ে ২০ লাখ ২১ হাজার ৮৬৮ জন শিক্ষার্থী এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় অংশ নেয়। ৩ হাজার ৭৯০টি কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশ নেয় ২৯ হাজার ৫৯১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরীক্ষার্থীরা। পরীক্ষার্থীদের মধ্যে শুধু সাধারণ শিক্ষা বোর্ডগুলোর অধীনে এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিল প্রায় ১৬ লাখ।

ঢাকাটাইমস/২৮নভেম্বর/আরকেএইচ/ইএস

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :