শীতে যেভাবে শাক-সবজি খেলে বেশি উপকার

ফিচার ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ০৪ জানুয়ারি ২০২৩, ১০:০৭| আপডেট : ০৪ জানুয়ারি ২০২৩, ১০:১১
অ- অ+

শীতকালীন সতেজ শাক-সবজিতে বাজার এখন ভরপুর। পুষ্টিগুণে শীতের শাক-সবজির জুড়ি নেই। আমাদের শরীরে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন কিংবা ফ্যাট এর পাশাপাশি মিনারেলস এবং ভিটামিনের ভূমিকা অন্যতম। শরীরের প্রয়োজনীয় যাবতীয় ভিটামিন ও মিনারেলস রয়েছে শীতকালীন সতেজ শাক-সবজিতে।

শীতের সবজির মধ্যে অন্যতম হলো ফুলকপি, বাঁধাকপি, শিম, গাজর, পালং শাক, ব্রকলি ইত্যাদি। শীতকালে পাওয়া যায় এমন সবজির মধ্যে কিছু আছে ক্যানসার প্রতিরোধক, আবার কিছু আছে উচ্চরক্তচাপ কমিয়ে জটিল রোগ থেকে মুক্ত রাখে। তাই সুস্থ ও সবল থাকার জন্য এসব শাকসবজি নিয়মিত প্রচুর পরিমাণে গ্রহণ করা উচিত।

পুষ্টিবিদের মতে যদি রান্না করে সবজি খাওয়া যায় তাহলে পুষ্টিগুণ হারিয়ে যায়। তাই কিছু কিছু সবজি কাঁচা খেলে পরিপূর্ণ পুষ্টিগুণ পাওয়া সম্ভব। তাই বেশি পুষ্টি বা ভিটামিন পেতে হলে কী ভাবে খেতে হবে জেনে নিন বিশেষজ্ঞদের থেকে।

শাকসবজি হল পুষ্টির একটি বড় উৎস যা আমাদের সারাদিন পূর্ণ রাখতে সাহায্য করে। যে কোনও অসুস্থতা থেকে দূরে থাকতে সাহায্য করে। আমাদের প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় যে খাবারগুলো থাকে তার মধ্যে শাক-সবজিতেই বেশি উপকার পাওয়া যায়। যা আমরা রান্না বা কাঁচা দুই ভাবেই খেয়ে থাকি। আপনি কী ভাবে পুষ্টি পাবেন তার পুরোটাই নির্ভর করে আপনার ডায়েটের উপর। তাই বেশি উপকার পেতে কেমন করে সবজি রান্না করবেন? কাঁচা নাকি রান্না করে জেনে নিন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ

বিশেষজ্ঞদের মতে, উচ্চতাপ বা চড়া আঁচে খাবার তৈরি করলে পুষ্টিগুণ কমে যায়। তবে শাক, টমেটো হাইফেমে সিদ্ধ করে পানি ঝরিয়ে ফেললে পুষ্টি রঙ ও বুনন ঠিক থাকে। নরম সবজি যেমন-ব্রোকলি, ফুলকপি, গাজর ও শতমূলী সিদ্ধ করার চেয়ে ভাপে রান্না করা ভালো। স্বাদের সঙ্গে বজায় থাকে পুষ্টিও।

ঝেজিয়াং ইউনিভার্সিটিতে পরিচালিত একটি সমীক্ষা অনুসারে, গবেষকরা দেখেছেন যে মাইক্রোওয়েভ এবং ফুটানো ব্রকলি সবজি থেকে ক্লোরোফিল, দ্রবণীয় প্রোটিন, শর্করা এবং ভিটামিন সি-এর মাত্রা হ্রাস করেছে। হাই ফেমে রান্না করলে সবজি পুষ্টিগুণ হারিয়ে যায় আবার রোস্ট করা, বারবিকিউ করা বা গ্রিল করলে শাকসবজির গুণ কমে না। আজকাল এয়ার ফ্রায়ারে ডিপ ফ্রাই করা হয় যা ভালো বলে মনে করা হয়।

কাঁচা সবজির চেয়ে রান্না করা শাকসবজির পুষ্টির পরিমাণ ও গুণমান আলাদা। পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম এবং আয়রনের মতো খনিজ অনেক কাঁচা সবজিতে পাওয়া যায়। রান্না করার সময় সেই পুষ্টি, বিশেষ করে ভিটামিন, রান্নার প্রক্রিয়ার সময় হারিয়ে যায়। কাঁচা ফল এবং শাকসবজিতে ভিটামিন সি এবং বি ভিটামিনের মতো আরও পুষ্টি থাকে। এই কারণেই পুষ্টিযুক্ত কাঁচা শাকসবজি রান্নার পর পুষ্টিগুণ হারিয়ে যায়।

কাঁচা শাকসবজি খাওয়ার সবচেয়ে বড় সুবিধা হল ভিটামিনের পরিমাণ বেশি। যেহেতু সেগুলো তাপের সংস্পর্শে আসে না, তাই পুষ্টিগুণও ভেঙ্গে যেতে পারে না। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে ব্রকলি যা হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য সেরা। কেউ সালাদ বা স্যুপের মধ্যে দিয়ে খান। আপনি এটি হালকা গরম পানিতে ভালোভাবে পরিষ্কার করে খেতে পারেন এবং এটি কাঁচা খেতে পারেন।

কাঁচা শাকসবজি খাওয়ার উপকারিতা থাকলেও তা সবার জন্য নাও হতে পারে। কিছু মানুষ, বিশেষ করে যাদের গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সমস্যা রয়েছে। তাঁরা বাঁধাকপি, ব্রকলি, ফুলকপি এবং ব্রাসেল স্প্রাউটের মতো শাকসবজি কাঁচা খেতে পারেন না। গ্যাস বা ফোলার সমস্যায় ভুগতে পারেন। তবে, কিছু খাবার কাঁচা খাওয়ার চেয়ে রান্না করা ভালো। যেমন গাজর এর মধ্যে বেশি জৈব উপলভ্য বিটা-ক্যারোটিন রয়েছে, যা ভিটামিনে এ-এর উৎস।

পুষ্টিবিদরা জানাচ্ছেন, সবজি দু’ভাবেই খাওয়া যেতে পারে। তবে নির্ভর করছে কোন সবজি কীভাবে খাচ্ছেন তার উপর। কাঁচা সবজিতে পানির পরিমাণ অনেক বেশি থাকে। এ ছাড়া ভিটামিন, খনিজ, ফাইবারের পরিমাণও বেশি থাকে। কাঁচা খেলে সেই উপাদান শরীরে সরাসরি প্রবেশ করে।

অন্যদিকে রান্না করা খাবার হজম করা সহজ। এর বিপাকক্রিয়া অনেক দ্রুত হয়। এনজাইমের উৎসেচকগুলি অনেক বেশি সক্রিয় থাকে। এ ছাড়াও পালং শাক, পুঁই শাকের মতো শাকসবজিতে খনিজ, ভিটামিন, অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টের পরিমাণ অনেক বেশি থাকে। শাকপাতা কাঁচা খাওয়া যায় না। সেক্ষেত্রে অল্প আঁচে এবং অল্প তেলে রান্না করলে সব উপাদানই শরীরে যেতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কাঁচা সবজিতে অনেক ব্যাকটেরিয়া, জীবাণু থাকে। কাঁচা খেলে সে সব শরীরে গিয়ে সংক্রমণ ঘটাবে। নানা শারীরিক সমস্যা দেখা দেবে। সেক্ষেত্রে রান্না করে খাওয়াই ভালো। বিশেষ করে প্রাণিজাত কোনও খাবার রান্না না করে খাওয়া ঠিক নয়।

পুষ্টিবিদদের মতে, রান্না করা এবং না করা— দু’রকম খাবারই খাওয়া যায়। তবে কিছু খাবার রয়েছে যেগুলি রান্না না করে খাওয়া একদমই ঠিক নয়। আবার কিছু খাবার কাঁচা খেলে বেশি উপকার মেলে। রান্না করলে সব পুষ্টিগুণ নষ্ট হয়ে যায়। প্রয়োজনে সে বিষয়ে পুষ্টিবিদের পরামর্শও নিতে পারেন।

ময়লা, পোকামাকড় ও কীটনাশক বা রাসায়নিকের হাত থেকে বাঁচতে প্রচুর পরিমাণে পানি দিয়ে ভালো করে ধুতে হবে সবজি। একটু লবণপানিতে ১৫ থেকে ৩০ মিনিট ভিজিয়ে রাখলে আরও ভালো; বিশেষ করে যদি কাঁচা খেতে চান।

খুব বেশি সিদ্ধ করলে ভিটামিন ‘সি’ নষ্ট হয়ে যায়। তাই হালকা বা ভাপে সিদ্ধ করে খাওয়াই ভালো।

ভিটামিন ‘এ’ তেল বা ফ্যাটে দ্রবণীয়। তাই এসব সবজি রান্না করার সময় খানিকটা তেল ব্যবহার করতে হবে। বিশেষত যদি শিশুদের খাওয়াতে চান।

মুখ বন্ধ প্লাস্টিকের ব্যাগে ৫-৭ দিন পর্যন্ত রেফ্রিজারেটরে রেখে খেতে পারেন। শীতকালীন সবজি তাজা অবস্থায় খাওয়াই সবচেয়ে উপকারী।

ঢাকাটাইমস/০৪ জানুয়ারি/আরজেড)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
কড়া বার্তা দিতেই ভাঙা হয়েছে ৩টি রিকশা, ক্ষতিপূরণসহ পুনর্বাসনের উদ্যোগ ডিএনসিসির
জাতীয় নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় আ.লীগ নিষিদ্ধ জরুরি ছিল: প্রেস সচিব
ভিটামিনের ঘাটতি পূরণে খাবারে ভিন্নতা আনতে হবে
ফরিদপুরে চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার আসামি আকাশ গ্রেপ্তার
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা