শীতে ভয়াবহ শ্বাসতন্ত্র সংক্রমণ, দেড় মাসে ৬৯ জনের মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ০৯ জানুয়ারি ২০২৩, ১০:৪৩| আপডেট : ০৯ জানুয়ারি ২০২৩, ১২:৩৯
অ- অ+

শীতের প্রকোপ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে শ্বাসতন্ত্র সংক্রমনজনিত রোগীর সংখ্যা। এ কারণে গত দেড় মাসে দেশে ৬৯ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশনস সেন্টার ও কন্ট্রোলরুম থেকে তথ্য পাওয়া গেছে।

চিকিৎসকরা বলছেন, হাসপাতালে আসা রোগীদের বড় অংশই শিশু ও বৃদ্ধ। ঠান্ডার কারণে নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কাইটিস, অ্যাজমা ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্তসহ শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণে আক্রান্ত রোগীই বেশি। এ ছাড়া ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশনস সেন্টার ও কন্ট্রোলরুমের তথ্য বলছে, ঠান্ডার কারণে দেশে গত ১৪ নভেম্বর থেকে গত শনিবার পর্যন্ত সারাদেশে শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন ৪৭ হাজার ৩৩ জন। এই সময়ে মৃত্যু হয়েছে ৬৯ জনের।

আর ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী ভর্তি হন ৩ লাখ ২২ হাজার ৬১১ জন। মৃত্যু হয়েছে ১৩ জনের।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশনস সেন্টার ও কন্ট্রোলরুম থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত শুক্রবার সকাল থেকে গত শনিবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশে শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৭৭৪ জন। আর এ সময়ে মৃত্যু হয়েছে পাঁচজনের। ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে এক হাজার ৮৯৪ জন। তবে কারো মৃত্যু হয়নি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোহাম্মদ আতিকুর রহমান বলেন, শীতে বাতাসের আর্দ্রতা কমে যায়। এর সঙ্গে ধুলাবালি বাড়ে। এতে সর্দি-কাশি, অ্যাজমা, কোল্ড অ্যালার্জি, ফুসফুসের সমস্যা, শ্বাসকষ্টের বাধাজনিত রোগ, চর্ম রোগ, চোখের প্রদাহসহ ঠান্ডাজনিত রোগ এবং ডায়রিয়ার প্রকোপ বাড়ে। এ সময়ে বিশেষ করে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হন শিশু ও বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তিরা। শিশুরা বেশি ভোগে, কারণ শিশুদের প্রতিরোধ ক্ষমতা কম। দেখা যায়, ঠান্ডা থেকে কফ হয়েছে, কিন্তু কফ বের করার ক্ষমতা থাকে না। একইভাবে বয়স্কদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকা এবং এই সময়ে বাতাসে ধুলাবালি বেশি থাকায় অনেকের অ্যালার্জি বা শ্বাসকষ্টের মতো সমস্যা দেখা দেয়। আর সেটি সঠিক সময়ে শনাক্ত না হলে অনেক সময় নিউমোনিয়াতেও তা রূপ নেয়।

জেলাভিত্তিক তথ্য বিশ্লেষণ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, গেল ১৪ নভেম্বর থেকে শনিবার পর্যন্ত শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে সবচেয়ে বেশি রোগী ভর্তি হয়েছে নরসিংদী জেলায়। এর সংখ্যা ৫ হাজার ৩৪৪ জন। লক্ষ্মীপুরে ৩,৫৮১ জন, কক্সবাজারে ২,৯১৭ জন, ময়মনসিংহে ২,৮৩৪ জন, চট্টগ্রামে ২,৫৩১ জন ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ২,২৬৬ জন। এর মধ্যে ৩২ জনের মৃত্যু হয় কক্সবাজার জেলায়। এ ছাড়া ময়মনসিংহে ১৮, খাগড়াছড়িতে ১৫ ও চুয়াডাঙ্গায় দুজনের মৃত্যু হয়েছে। ভোলা ও রাঙামাটিতে মারা গেছেন দুজন।

এদিকে এ সময়ের মধ্যে ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে বেশি রোগী ভর্তি হয়েছে টাঙ্গাইলে ৫৭ হাজার ৭৭২ জন। এ ছাড়া নরসিংদীতে ৩২ হাজার ৪৯৩ জন, গাজীপুরে ২৭ হাজার ৬২ জন, ফরিদপুরে ২৫ হাজার ৪৭ জন ও ঢাকায় ২০ হাজার ৮৪৪ জন ভর্তি হয়। ডায়রিয়ায় মৃত ১৩ জনের মধ্যে ১০ জনই নোয়াখালীর। এ ছাড়া দুজন চাঁদপুরের ও একজন লক্ষ্মীপুরের।

ঢাকা শিশু হাসপাতালের অধ্যাপক কামরুজ্জামান কামরুল বলেন, ‘এ সময় নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কাইটিস, শ্বাসকষ্টের রোগী বেশি পাচ্ছি। মনে রাখতে হবে, বুকে কফ জমে যাওয়া, শিশুর শ্বাসকষ্ট হওয়া, জ্বর বেশি আসা, জ্বরের মধ্যে খিঁচুনি হওয়া, জ্বরের পর কিছু না খাওয়া- এগুলো ঠান্ডাজনিত রোগের বিপদচিহ্ন।’

তার পরামর্শ হচ্ছে, এ সময়ে শিশুদের নিয়ে বাইরে ঘোরাফেরা না করলে সবচেয়ে ভালো হয়। ঘরে থাকলেও যেন কোনোভাবে ঠান্ডা না লাগে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। গরম অনুভূত হয় এমন কাপড় পরিধান ও ধুলাবালি থেকে দূরে থাকতে হবে। সব সময় গরম খাবার খাওয়াতে হবে। ছয় মাসের কম বয়সী শিশুদের ঘন ঘন বুকের দুধ খাওয়াতে হবে।

(ঢাকাটাইমস/০৯জানুয়ারি)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
কড়া বার্তা দিতেই ভাঙা হয়েছে ৩টি রিকশা, ক্ষতিপূরণসহ পুনর্বাসনের উদ্যোগ ডিএনসিসির
জাতীয় নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় আ.লীগ নিষিদ্ধ জরুরি ছিল: প্রেস সচিব
ভিটামিনের ঘাটতি পূরণে খাবারে ভিন্নতা আনতে হবে
ফরিদপুরে চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার আসামি আকাশ গ্রেপ্তার
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা