গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় আক্রমণের পরিকল্পনা ছিল হুজির, রোহিঙ্গাদের যুক্ত করার চেষ্টা: সিটিটিসি

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২৮ জানুয়ারি ২০২৩, ১৮:২৯ | প্রকাশিত : ২৮ জানুয়ারি ২০২৩, ১৮:২৩

দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদের (হুজি) হামলার পরিকল্পনা ছিল বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান। তিনি জানান, এই সংগঠনটি রোহিঙ্গাদেরকে জঙ্গি কার্যক্রমে যুক্ত হতে অনুপ্রাণিত করার চেষ্টা করছিল।

শনিবার ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান আসাদুজ্জামান। এর আগে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হুজির ছয়জন সদস্যকে গ্রেপ্তার করে ডিএমপির সিটিটিসির সিটি-সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিভিশনের ডিজিটাল ফরেনসিকের একটি দল। শুক্রবার দিবাগত রাতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন- মো. ফখরুল ইসলাম, মো. সাইফুল ইসলাম, মো. সুরুজ্জামান, হাফেজ মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন, মো. দীন ইসলাম ও মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন। এ সময়ে তাদের কাছ থেকে নয়টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে আসাদুজ্জামান বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জঙ্গিবিরোধী অভিযানে হরকাতুল জিহাদ নেতৃত্বশূণ্য হয়ে যায়। সম্প্রতি এই সংগঠনটি জঙ্গি কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে নতুন সদস্য সংগ্রহ, অর্থ সংগ্রহ এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল। এসবের নেতৃত্ব দেন গ্রেপ্তারকৃত ফখরুল ইসলাম। তিনি পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে এসেছেন।’

‘ফখরুল ইসলাম স্বশরীরে ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক যোগাযাগ মাধ্যম ব্যবহার করে সাংগঠনিক কার্যক্রম অব্যাহত রাখেন। তিনি সামাজিক যোগাযাগ মাধ্যমে অত্যাধুনিক এনক্রিপটেড অ্যাপস ব্যবহার করে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে বিদেশে অবস্থানরত প্রবাসীদের এবং বাংলাদেশের অন্যান্য হুজি সদস্যদের সঙ্গে উগ্রবাদী ও আক্রমণাত্মক বিষয়ে আলোচনা করে ম্যাসেজ দিতেন। আর যেকোন সময় বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোতে বড় ধরনের জঙ্গি হামলা পরিচালনার বিষয়ে নিজেদের মধ্যে পরিকল্পনা করেন।’ জানান সিটিটিসির এই প্রধান কর্মকর্তা।

আসাদুজ্জামান বলেন, বিদেশ থেকে জঙ্গি বিষয়ে ট্রেনিংপ্রাপ্ত বাংলাদেশে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদের (হুজির) সক্রিয় সদস্য মো. ফখরুল ইসলাম ১৯৮৮ সালে গাজীপুরের টঙ্গী থানার তামিরুল মিল্লাত মাদ্রাসায় দারোয়ানের চাকরি করতেন। পরবর্তীতে ১৯৮৮ সালে কাজের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানের করাচি শহরে যান। তিনি পাকিস্তানে থাকাকালে বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত মুফতি জাকির হোসেনের সঙ্গে পরিচিত হন। মুফতি জাকির হোসেন পাকিস্তানের করাচি শহরে ইসলামীয়া মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল এবং আল কায়েদার সামরিক কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন।

মুফতি জাকির আল কায়েদা সংগঠনের জিহাদী প্রশিক্ষণের কমান্ডার। মুফতি জাকির মো. ফখরুল ইসলামকে জিহাদের দাওয়াত দিলে তিনি দাওয়াত গ্রহণ করেন। ফখরুল ইসলাম জিহাদী প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণের জন্য মুফতি জাকিরের সঙ্গে একাধিকবার পাকিস্তান থেকে আফগানিস্তানের কান্দাহার শহরে দীর্ঘকালীন প্রশিক্ষণে যান। ফখরুল ওই প্রশিক্ষণে বিভিন্ন অস্ত্র প্রশিক্ষণের পাশাপাশি অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র- একে ৪৭, এলএমজি ও রকেট লাঞ্চার পরিচালনা শিখেন।

প্রশিক্ষণের সময় কান্দাহারের সমশেদ পাহাড়ে নিয়মিত ফায়ারিং অনুশীলন করতেন ফখরুল। অনুশীলনের সময় ফখরুল ইসলাম একে-৪৭সহ সশস্ত্র অবস্থায় প্রশিক্ষণ এলাকায় চার ঘণ্টা করে নিরাপত্তামূলক পাহারার দায়িত্ব পালন করতেন। ওই সময়ে তিনি আল কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেন ও মোল্লা ওমরের সঙ্গে একাধিকবার সাক্ষাৎ করেন। তিনি আফগানিস্তানে বিভিন্ন মেয়াদে জিহাদি প্রশিক্ষণ নেওয়ার পরে আবারও পাকিস্তানের করাচিতে ফিরে আসেন। করাচি থেকে ১৯৯৫ সালে ইরানের রাজধানী তেহরান যান এবং প্রায় তিন বছর সেখানে থাকার পর করাচিতে ফিরে এসে তিনি পরবর্তীতে ইসলামাবাদ থেকে ভারতের ভিসা নিয়ে ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশে চলে আসেন।

সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপি সিটিটিসির প্রধান বলেন, সিটিটিসির জঙ্গি কার্যক্রমবিরোধী অপারেশন চলমান থাকায় এবং নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদের মুফতি হান্নানসহ একাধিক নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি গ্রেপ্তার হওয়ায় হরকাতুল জিহাদ সংগঠনটি নেতৃত্ব শূণ্য হয়ে যায়। এরই ধারাবাহিকতায় দেশে এসে ফখরুল ইসলাম জঙ্গি কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে নতুন সদস্য সংগ্রহ ও বাংলাদেশে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদের (হুজি) সদস্য সংগ্রহ, অর্থ সংগ্রহ করা এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন।

ফখরুল সাংঠনিক কার্যক্রম স্বশরীরে ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক যোগাযাগ মাধ্যম ব্যবহার করে অব্যাহত রাখেন। তিনি অত্যাধুনিক সামাজিক যোগাযাগ মাধ্যম এনক্রিপটেড অ্যাপস ব্যবহারের মাধ্যমে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে বিদেশে অবস্থানরত প্রবাসীদের এবং বাংলাদেশের অন্যান্য হুজি সদস্যদের সঙ্গে উগ্রবাদী ও আক্রমণাত্মক বিষয়ে আলোচনা করে ম্যাসেজ আদান প্রদান দিতেন এবং যেকোন সময় বাংলাদেশের গুরুপূর্ণ স্থাপনাগুলোতে বড় ধরনের জঙ্গি হামলা পরিচালনার বিষয়ে নিজেদের মধ্যে পরিকল্পনা করেন।

বাংলাদেশের হুজি সদস্যদের বান্দরবান পাহাড়ি এলাকায় প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা করে। ফখরুল ও তার ছেলে আটককৃত আসামি মো. সাইফুল ইসলাম অন্যান্য হুজি সদস্যদের নিয়ে একাধিকবার কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের তাদের সংগঠনে জনবল তৈরির উদ্দেশ্যে এবং জিহাদি কার্যক্রমের অংশ হিসেবে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রাণিত করার জন্য তাদেরকে বিভিন্ন মোটা অংকের টাকা অনুদান দেন।

আসাদুজ্জামান বলেন, গ্রেপ্তার আরেক আসামি হাফেজ মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সিকিউরড এনক্রিপটেড অ্যাপস টেলিগ্রাম ব্যবহার করে টেলিগ্রাম গ্রুপ “মোরা সত্যের সৈনিক”- এর অ্যাডমিন “অস্থায়ী মুসাফির” হিসেবে ছদ্মনাম ধারণ করে গ্রুপটি পরিচালনা করেন। মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন বিপ অ্যাপসে নিজেকে ম্যানুয়াল হিসেবে ছদ্মনাম ধারণ করেন। হাফেজ মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন টেলিগ্রাম অ্যাপসের মাধ্যমে বিদেশে অবস্থানরত প্রবাসীদের এবং বাংলাদেশের অন্যান্য হুজি সদস্যদের সঙ্গে উগ্রবাদী ও আক্রমণাত্মক বিষয়ে আলোচনা করে ম্যাসেজ দেন। আর নিষিদ্ধ ঘোষিত হুজির একটি এনক্রিপটেড অ্যাপের প্রাইভেট চ্যানেল “একটু প্রস্তুতির” কনটেন্ট হিসেবে “একটি বোমা তৈরি করো তোমার মায়ের রান্নার ঘরে” শীর্ষক ১০ পাতার ডকুমেন্ট এবং একই চ্যানেল থেকে টাইম বোমা বানানো বাংলা বিবরণীসহ ভিডিও শেয়ার করেন।

মামুন ওই এনক্রিপটেড অ্যাপসের চ্যানেল থেকে প্রাপ্ত কনটেন্ট তার সংগঠনের পরিচিত দুয়েকজনকে হাতে কলমে বোমা বানানোর প্রশিক্ষণ লাভের উদ্দেশ্যে এবং বোমা বানানোর নির্দেশনা দিয়ে শেয়ার করেছেন।

গ্রেপ্তারকৃতদের বরাত দিয়ে সংবাদ সম্মেলনে সিটিটিসির প্রধান বলেন, তারা টেলিগ্রাম গ্রুপের মাধ্যমে সক্রিয় থেকে উগ্রবাদী কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। গ্রেপ্তারকৃত ও তাদের অন্যান্য সহযোগীরা পরস্পরের যোগসাজসে উগ্রবাদী ও আক্রমণাত্মক ভিডিও ও তথ্য শেয়ার এবং নিজেদের মধ্যে গোপন তথ্য দেন। তারা ওই গ্রুপে উগ্রবাদী ও আক্রমণাত্মক প্রশিক্ষণের বিষয়ে আলোচনার পাশাপাশি সচিত্র প্রশিক্ষণ ডকুমেন্টস (পিডিএফ, ভিডিও, অডিও) আদান প্রদান করতো। পলাতক অন্যান্য আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত আছে।

গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে একটি মামলা করা হয়েছে। সিটিটিসি ইউনিটের সিটি-সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিভিশনের ডিজিটাল ফরেনসিক টিম অভিযানটি পরিচালনা করে।

(ঢাকাটাইমস/২৮জানুয়ারি/এএ/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

অপরাধ ও দুর্নীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

অপরাধ ও দুর্নীতি এর সর্বশেষ

এফডিসিতে সাংবাদিকদের উপর হামলা: ১১ সদস্যের তদন্ত কমিটি

স্ত্রীসহ নিজেকে নির্দোষ দাবি করে ডিবিতে যা বলেছেন কারিগরি বোর্ডের চেয়ারম্যান

শেরপুরের ধর্ষণ ও পর্নোগ্রাফি মামলার আসামি ঢাকায় গ্রেপ্তার

খেলনার প্যাকেটে আমেরিকা থেকে এসেছে কোটি টাকার গাঁজার চকলেট-কেক

সাবেক আইজিপি বেনজীরের বিরুদ্ধে অভিযোগ অনুসন্ধানে দুদক

উপবৃত্তির টাকা দেওয়ার নামে প্রতারণা, গ্রেপ্তার ৮

সনদ জালিয়াতি: কারিগরি বোর্ডের ওএসডি চেয়ারম্যানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকেছে ডিবি

বুথ ভেঙে নিরাপত্তাকর্মীকে হত্যা, বেরিয়ে এল রহস্য

জাল সার্টিফিকেট: প্রয়োজনে কারিগরি বোর্ডের চেয়ারম্যানকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে ডিবি

সনদ বাণিজ্য: কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যানের স্ত্রী গ্রেপ্তার

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :