ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে মটরশুঁটি

ফিচার ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ৩০ জানুয়ারি ২০২৩, ১৫:০৬ | প্রকাশিত : ৩০ জানুয়ারি ২০২৩, ১৪:০০

মটরশুঁটি একবর্ষজীবী উদ্ভিদ। আমাদের দেশে শীতকালে মটরশুঁটির চাষ করা হয়। এটি লতানো গাছ। এই গাছ দুই থেকে আড়াই ফুট পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। মটরশুঁটির পাতা মিষ্টি ঘ্রাণ যুক্ত। ফুল অনেক সুন্দর দেখতে। মটরশুঁটির ক্ষেত যখন ফুলে ফুলে ভরে যায়, তখন তা দৃষ্টিনন্দন হয়ে ওঠে।

মটরশুঁটির বৈজ্ঞানিক নাম পিসাম সাটিভাম। মটরশুঁটিকে ইংরেজিতে পিয়া বলে। এটি এক প্রকারের ফল। প্রতিটি ফলে বেশ কয়েকটি সবুজ বা হলুদ বর্ণের গোলাকার বীজ থাকে। গড়ে প্রতিটি বীজের ওজন ০.১ থেকে ০.৩৬ গ্রাম।

খাবারের স্বাদ বাড়াতে মটরশুঁটির তুলনা হয় না। যেকোনো সবজি, তরকারি, সালাদ, মাছ ভুনা, পোলাও, নুডলসসহ বিভিন্ন ধরনের রান্নায় এর ব্যবহার হয়। এতে আছে কার্বোহাইড্রেট, ফ্যাট, প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, আয়রন, ভিটামিন ‘সি’, ফলিক এসিড, বিটাক্যারোটিন, ভিটামিন ‘এ’, ফসফরাস, জিংক, ভিটামিন ‘বি’ কমপ্লেক্স ও ভিটামিন ‘কে’। মটরশুঁটি আমিষের ভালো উৎস। প্রোটিনে ভরপুর মটরশুঁটি খাওয়া যায় মাছ, মাংসের পরিবর্তেও। নিরামিষভোজী না হলেও পুষ্টিবিদরা এখন সকলকেই বেশি করে উদ্ভিজ্জ প্রোটিন খেতে পরামর্শ দেন। শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে।

মটরশুঁটিশুঁটিতে থাকা ফাইবার অন্ত্রের স্বাস্থ্য রক্ষায় যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই সব্জিতে থাকা ভাল ব্যাক্টেরিয়া, অন্ত্রের খারাপ ব্যাক্টেরিয়ার সঙ্গে মোকাবিলা করে অন্ত্রকে সুস্থ থাকে। শুধু তা-ই নয়, মটরশুঁটি কোলন ক্যানসারের আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও কমিয়ে আনতে পারে।

মটরশুঁটির গ্লাইসেমিক ইনডেস্ক তুলনামূলক ভাবে কম। ডায়াবেটিস রোগীদের সব সময়ে এই ধরনের খাবার খেতে পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। তাই আশা করা যায়, এই সব্জি খেলে রক্তে শর্করা ভারসাম্য বজায় থাকবে।

ভিটামিন বি৬, সি এবং ফলিক অ্যাসিডে ভরপুর কড়াইশুঁটি শরীরে যে কোনও প্রকারের প্রদাহ নাশ করতে সক্ষম। এ ছাড়াও ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা ধরে রাখতে মটরশুঁটির জুড়ি মেলা ভার।

হৃদ্‌যন্ত্রে জন্য খারাপ দু’টি যৌগ ‘ট্রাইগ্লিসারাইড’ এবং ‘ভিএলডিএল’-কে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে ‘নিয়াসিন’। এই ‘নিয়াসিন’-এর প্রাকৃতিক উৎস হল মটরশুঁটি। তাই নিয়মিত মটরশুঁটি খেলে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রিত থাকতে পারে।

মটরশুঁটি আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুব উপকারী। নিয়মিত মটরশুঁটি খেলে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। এ ছাড়া এটি ওজন নিয়ন্ত্রণ, পাকস্থলীর ক্যানসার ও কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে এবং হৃৎপিণ্ড সতেজ ও হাড় মজবুত রাখতে সাহায্য করে।

মটরশুঁটি সবজি হলেও আমিষের জোগান দিতে সক্ষম। যারা মাছ বা মাংস থেকে আমিষ বেশি পেতে চান না, তারা এটি খেতে পারেন। এটি একটি উৎকৃষ্ট উদ্ভিজ্জ আমিষ।

এছাড়া এতে আছে নানা ধরনের ভিটামিনের সমাহার। যেমন-ভিটামিন এ, বি ওয়ান, বি সিক্স এবং ভিটামিন সি। সবচেয়ে বড় কথা, মটরশুঁটিতে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন কে। এটি রক্ত তরল রাখতে সাহায্য করে। হাড়ের ক্ষয় রোধ করে।

মটরশুঁটিতে আঁশের পরিমাণ অনেক, তাই হজমে সহায়ক। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। আবার এতে কোলেস্টেরল বা চর্বি নেই বললেই চলে। সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, মটরশুঁটিতে যে চর্বি আছে, তা ভালো চর্বি বা ওমেগা থ্রি ফ্যাট। আলফা লিনোলিনিক অ্যাসিড নামের এ চর্বি হৃদযন্ত্রের জন্য ভালো। এক কাপ মটরশুঁটিতে প্রায় ১৩০ গ্রাম আলফা লিনোলিনিক অ্যাসিড পাওয়া যাবে।

মটরশুঁটিতে থাকে জিংক, আয়রন ও ক্যালসিয়ামের মতো গুরুত্বপূর্ণ উপাদান এবং উচ্চ পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। যার ফলে নিয়মিত মটরশুঁটি খেলে নানা ধরনের অসুখ-বিসুখ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

ক্যানসারের ঝুঁকি কমায় মটরশুঁটি। মটরশুঁটির দানাতে পলিফেনন থাকে, যা ক্যানসার প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে। তাছাড়া মটরশুঁটিতে রয়েছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি, যা সব ধরনের ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়।

বয়সের ছাপ কমাতে বেশ কার্যকর মটরশুঁটি। মটরশুঁটিতে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, ফেনোলিক এসিড, পলিফেনন, ক্যারোটিন ও ক্যাটিসিন নামক উপাদান থাকে। তাই প্রতিদিন মটরশুঁটি খেলে সহজে বয়সের ছাপ পড়ে না।

মটরশুঁটিতে থাকে ফাইবার, যা হজমে সাহায্য করে। তাই যাদের কোষ্ঠকাঠিন্য আছে তাদের জন্য মটরশুঁটি খুবই উপযোগী খাবার।

মটরশুঁটিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন এ থাকে। নিয়মিত মটরশুঁটি খেলে দৃষ্টিশক্তি বাড়ে।

নিয়মিত মটরশুঁটি খেলে চুল পড়া অনেকটা কমে যায়। মটরশুঁটিতে ভিটামিন বি১২, ফলিক ও ভিটামিন বি৬ থাকে। এই উপাদানগুলো রক্তে লৌহ কণিকা তৈরিতে সাহায্য করে। লৌহ কণিকা শরীরের সমস্ত কোষে অক্সিজেন ও পুষ্টি বহন করে। ফলে চুল প্রয়োজনীয় পুষ্টি ও অক্সিজেন পায়।

গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ৩ পিস মাটন এর থেকেও বেশি কার্যকরী মটরশুঁটি। মটরশুঁটির মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন এবং পুষ্টি জাতীয় উপাদান। ক্যালরির পরিমাণ খুবই কম এবং চর্বি নেই বললেই চলে যার ফলে মটরশুঁটি খেলে ওজন নিয়ন্ত্রণ থাকে। বিশেষ করে যারা প্রাণীজ প্রোটিন খেতে পারেন না, তাদের জন্য মটরশুঁটি বিশেষভাবে উপকারী। এ ছাড়াও সুস্থ থাকতে প্রতিদিন যেটুকু প্রোটিন খাওয়া প্রয়োজন, তার জন্য ইদানীং চিকিৎসক থেকে পুষ্টিবিদ, সকলেই উদ্ভিজ্জ প্রোটিনের উপরই আস্থা রাখতে বলছেন।

ঢাকাটাইমস/৩০ জানুয়ারি/আরজেড)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :