টাকা দিয়ে থানা থেকে ছাড়া পেলেন অস্ত্রসহ আটক যুবক!

গাজীপুরের টঙ্গীতে টাকার বিনিময়ে থানাহাজত থেকে ছাড়া পেয়েছেন অস্ত্রসহ আটক এক আসামি। এসময় কাগজে আসামির কাছ থেকে স্বাক্ষর নেন টঙ্গী পূর্ব থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সাব্বির রহমান। অভিযুক্ত আসামির নাম আমিনুল হক নয়ন (২৯)। এ ঘটনায় ধারালো দুটি অস্ত্র (রামদা) উদ্ধার হলেও সেই অস্ত্র দুটিও লাপাত্তা।
ঘটনাটি ঘটে শুক্রবার রাত ১২টায় টঙ্গীর ভরান এলাকায়। সম্প্রতি তা প্রকাশ পায়। আটকের সময় নয়নকে পুলিশের সামনেই বেধড়ক পিটিয়ে মারাত্মক জখম করার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের সাথে থাকা সোর্স পলাশের বিরুদ্ধে। এমনকি নয়নের হাত থেকে একটি দামি হাতঘড়িও খুলে নেয় সোর্স। থানা হেফাজত থেকে নয়নকে ছেড়ে দেয়ার পরও ঘড়িটি ফেরত দেয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেন নয়ন।
মধ্যস্থতা সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার রাত ১১টায় মাছিমপুর এলাকায় মোবাইল চুরিকে কেন্দ্র করে দুটি কিশোর গ্যাং গ্রুপ সংঘর্ষে জড়ায়। এসময় এলোপাতাড়ি হামলায় স্থানীয় যুবক বাবলু গুরুতর আহত হন। ঘটনার সংবাদ পেয়ে টঙ্গী পূর্ব থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক এসআই সাব্বির রহমান অভিযানে নামেন। রাত ১২টায় ভরান এলাকায় ধারালো অস্ত্রসহ কিশোর গ্যাং সদস্যরা অবস্থান করছেন এমন খবরে সেখানে অভিযান চালায় পুলিশ। এসময় পুলিশের ধাওয়া খেয়ে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা দৌড়ে পালিয়ে যায়। তবে পালানোর সময় আমিনুল হক নয়ন রাস্তায় পড়ে যায়। এসময় পুলিশের সাথে থাকা সোর্স পলাশ লাঠি দিয়ে নয়নকে এলোপাতাড়ি পেটাতে থাকে। একপর্যায়ে লাঠির আঘাতে নয়নের কপাল ফেটে যায়। পরে ঘটনাস্থলে পড়ে থাকা দুইটি রামদাসহ রক্তাক্ত অবস্থায় নয়নকে টঙ্গীর শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
হাসপাতালের জরুরি বিভাগের রেজিস্ট্রার খাতা ঘেটে দেখা যায়, নয়নের আহত হবার কারণ হিসেবে পাবলিক এসোল্ট (গণপিটুনি) উল্লেখ করা হয়েছে। তাতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, রাত ১২টা ৪৫ মিনিটে এএসআই নাজমুল আটক নয়নকে হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসেন।
এদিকে চিকিৎসা শেষে থানাহাজতে আটকে রাখার ১৫ ঘণ্টা পর শনিবার বিকালে আসামি নয়নকে ছেড়ে দেয় পুলিশ। এসময় মারামারির ঘটনায় আহত বাবলুকে চিকিৎসা খরচ বাবদ ৫০ হাজার টাকা ও মামলা না দেয়ার শর্তে এসআই সাব্বির রহমানকে আরও এক লাখ টাকা দেয় নয়নের পরিবার। স্থানীয় এক ছাত্রলীগ নেতা ও ভুক্তভোগী বাবলুর পরিবারের মধ্যস্থতায় থানার দ্বিতীয় তলায় এসআই সাব্বির রহমানের কক্ষে আপস-মীমাংসা করা হয়।
মারামারির ঘটনায় আহত যুবক বাবলু জানান, শুক্রবার রাতে দুই পক্ষের মারামারি থামাতে গেলে আমার ওপর ভরান এলাকার মহিনের নেতৃত্বে হামলা চালায় একদল কিশোর। পরদিন শনিবার স্থানীয় নেতাদের অনুরোধে থানায় বিষয়টি আপস করা হয়। তবে টাকার বিনিময়ে আপসের বিষয়টি এড়িয়ে যান বাবলু।
থানা হেফাজত থেকে ছাড়া পাওয়ার পর আনামুল হক নয়ন বলেন, মারামারির ঘটনায় আমি জড়িত নই। ঘটনার দিন রাতে আমি ভরান এলাকার মহিনের নিকট পূর্বের পাওনা টাকা ফেরত নিতে যাই। এসময় পুলিশ ধাওয়া দিলে আমি ভয়ে দৌড় দেই। একপর্যায়ে রাস্তায় পড়ে গেলে কিছু বুঝে ওঠার আগেই পুলিশের সোর্স পলাশ লাঠি দিয়ে এলোপাতাড়ি আমাকে পেটাতে থাকে। লাঠির আঘাতে আমার কপাল ফেটে গেলে হাসপাতালে নিয়ে কপালে তিনটি সেলাই দেওয়া হয়। এছাড়াও লাঠির আঘাতে আমার পায়ে মারাত্মক আঘতপ্রাপ্ত হয়।
নয়ন আরও বলেন, হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা শেষে থানায় নিয়ে সোর্স পলাশ আমার হাতে থাকা ৪০ হাজার টাকা মূল্যের ঘড়িটি খুলে নেয়। পরে আমার পরিবার বাদী বাবলুর সঙ্গে আপস-মীমাংসা করলে আমাকে ছেড়ে দেয়া হয়। আপসের জন্য বাদীকে চিকিৎসা বাবদ ৫০ হাজার টাকা দেয় আমার বড় ভাই সাব্বির। তবে পুলিশকে কত টাকা দেয়া হয়েছে সেটি আমার জানা নেই।
থানায় মারামারির ঘটনাটি দুই পক্ষকে নিয়ে মীমাংসা করেন স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতা দ্বীন মোহাম্মদ নিরব। তিনি বলেন, বাদী ও বিবাদীর মধ্যে আপসের মাধ্যমে বিষয়টি সমাধান হয়েছে। বাদীকে চিকিৎসা খরচ দেয়া হয়েছে। দেড় লাখ টাকার বিনিময়ে আপস করা হয়েছে।
এসব বিষয়ে জানতে এসআই সাব্বির রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, পুলিশের ধাওয়া খেয়ে নয়ন রাস্তায় পড়ে যায়। এসময় ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হওয়া দুটি ধারালো অস্ত্রসহ তাকে থানায় আনা হয়। পরে বাদী এবং বিবাদী পক্ষ বিষয়টি নিজেদের মধ্যে আপস-মীমাংসা করে লিখিত আপসনামা জমা দেয়। এ কারণে নয়নকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
ধারালো অস্ত্রসহ আটকের পর ছেড়ে দেয়ার সুযোগ আছে কিনা জানতে চাইলে সাব্বির রহমান বলেন, বাদী যদি মামলা না করে- তাহলে পুলিশের কি করার আছে।
অস্ত্রসহ আটকের পর মামলা না হওয়ার প্রসঙ্গে এসআই সাব্বির রহমান বলেন, এটা ধর্তব্য অপরাধ। তবে এটা তো পাবলিক রিলেটেড জিনিস। অনেক সময় পাবলিক না থাকলে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা দেয়। আর বাদী যদি নিজ জিম্মায় নিয়ে যেতে চায় বা অভিযোগ উঠিয়ে নেয়, সেক্ষেত্রে আমরা কি করতে পারি?
এ বিষয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ বা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন তিনি।
টঙ্গী পূর্ব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আশরাফুল ইসলাম বলেন, বাদীর জিম্মায় আটক নয়নকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। আমাকে সেটাই জানানো হয়েছে। তবে ছেড়ে দেয়ার ক্ষেত্রে আর্থিক লেনদেনের বিষয়টি আমার জানা নেই৷
(ঢাকাটাইমস/০২ফেব্রুয়ারি/এলএ)

মন্তব্য করুন