হকার পতিতা ও মাদকাসক্তদের দখলে ফুটওভার ব্রিজ, ভয়ে উঠছে না পথচারী

পুলক রাজ, ঢাকা টাইমস
| আপডেট : ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১২:১০ | প্রকাশিত : ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৮:৫৫

রাজধানীর রাস্তায় মানুষের নিরাপদ চলাচল নিশ্চিত করতে বিভিন্ন স্থানে ঢাকা সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে নির্মাণ করা হয় ফুটওভার ব্রিজ। উদ্দেশ্য ছিল সাধারণ মানুষ নিরাপদে রাস্তা পারাপার হবে। তবে অধিকাংশ ব্যস্ত সড়কে ফুটওভার ব্রিজ থাকলেও অনেকেই তা ব্যবহার করে না। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দ্রুতগামী গাড়ির সামনে থেকে রাস্তা পার হয়ে থাকেন পথচারীরা। মূলত হকার, ভ্রাম্যমাণ পতিতা ও মাদকাসক্তদের ভয়ে এসব ব্রিজ ব্যবহার করছে না মানুষ।

ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহারে রাজধানীবাসীকে আগ্রহী করতে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নানা উদ্যোগের কথা বললেও বাস্তবে তার প্রমাণ মেলেনি । ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন অধীনে রয়েছে ৪৯টি ফুটওভার ব্রিজ। এর মধ্যে ৪৬টি স্টিলের। তিনটি কংক্রিটের। আর আন্ডারপাস রয়েছে ১৪টি। এছাড়া সড়ক ও জনপথ বিভাগের রয়েছে তিনটি ওভার ব্রিজ। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অধীনে রয়েছে ৩৫টি ফুটওভার ব্রিজ। এর মধ্যে আন্ডারপাস রয়েছে একটি।

পথচারীদের অভিযোগ, দিনে এসব ফুটওভার ব্রিজ হকারদের দখলে চলে যায়। রাতে ভ্রাম্যমাণ পতিতাদের দখলে থাকে। মাদকাসক্তদের ভয়ে এসব ব্রিজ ব্যবহারও করছে না মানুষ।

সাধারণ মানুষের ভাষ্য, ফুটওভার ব্রিজের ওপর ছিনতাইকারী, ভিক্ষুক, হকার ও নেশাখোরদের উচ্ছেদ করতে হবে। তা না হলে অব্যবহৃত থেকে কোটি টাকার ফুটওভার ব্রিজ নষ্ট হয়ে যাবে। ঢাকার বিভিন্ন সড়ক দুর্ঘটনাপ্রবণ। এর প্রায় প্রতিটিতেই রয়েছে ফুটওভার ব্রিজ এবং ব্রিজ ও ক্রসিং এলাকাগুলোতে দুর্ঘটনার হার সর্বাধিক। ঢাকা শহরে প্রতি বছর ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার না করায় দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে মানুষ।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে দেশে ছয় হাজার ৭৪৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৯ হাজার ৯৫১ জন নিহত এবং ১২ হাজার ৩৫৬ জন আহত হয়েছে, যা গত আট বছরের পরিসংখ্যানের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর মধ্যে পাঁচ দশমিক ৬৭ শতাংশ ঘটেছে রাজধানীতে।

দুর্ঘটনাগুলোর প্রধান কারণগুলোর মধ্যে বেপরোয়া গাড়ি চালানো, ঝুঁকিপূর্ণ ওভারটেকিং, জরাজীর্ণ রাস্তা, অযোগ্য যানবাহন, অদক্ষ চালক, গাড়ি চালানোর সময় মোবাইল ফোন বা হেডফোন ব্যবহার এবং সড়ক ব্যবহারকারীদের মধ্যে সচেতনতার অভাবকে উল্লেখ করেছে যাত্রীকল্যাণ সমিতি। রাজধানীর মগবাজার এলাকার বাসিন্দা রুহি আক্তার ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘রাতে এসব ব্রিজ অপকর্মের কাজে ব্যবহার হচ্ছে। ফুটওভার ব্রিজগুলো হকার, মাদকসেবী ও ভবঘুরেদের আখড়া হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ায় তা পথচারীদের পথ পারাপারে ততটা কাজে আসছে না। আামি মনে করি, যতদ্রুত সম্ভব ফুটওভার ব্রিজ নিয়ে আরও ভালো পরিকল্পনা করা উচিত।’

পথচারী তামিম আহমেদ ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘রাজধানীর সবচেয়ে ব্যস্ত হিসেবে পরিচিত ফার্মগেটের ওভারব্রিজটির বেশিরভাগ জায়গাই হকারদের দখলে। আর রাজধানীর সব কয়টি ফুটওভার ব্রিজ একদম কম মানুষে ব্যবহার করে। রাজধানীর ফুট ওভারব্রিজের মাত্র ২০ শতাংশ পথচারী পারাপারে ব্যবহার হচ্ছে কি না সেটাই সন্দেহ।’

সেন্টার ফর ল অ্যান্ড পলিসি এফেয়ার্সের সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘পর্বত সমান উঁচু এই ফুটওভার ব্রিজ কীভাবে পথচারী সহায়ক কার্যক্রম হয় তা বোধগম্য নয়। ফুটওভার ব্রিজ মানুষ কেন ব্যবহার করে না তা কী কখনো ভেবে দেখেছেন কেউ? ফুটওভার ব্রিজ প্রায় দুই/তিনতলা ভবনের সমান উঁচু, যা অতিক্রম করা খুবই কষ্টসাধ্য কাজ। মানুষ একটা নির্দিষ্ট দূরত্ব হাঁটার পর এই উচ্চতা পাড়ি দিতে শারীরিকভাবে সমর্থ নয়। এছাড়া অসুস্থ, বৃদ্ধ, প্রতিবন্ধী, হৃদরোগী, গর্ভবতী মহিলা, শিশু, মালামালসহ পথচারীর জন্য এই উচ্চতা পাড়ি দেওয়া স্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ এবং অসম্ভব একটি ব্যাপার। আর ঢাকা শহরের ফুটওভার ব্রিজ পাড়ি দিতে অনেকদূর পথ অতিরিক্ত হাঁটতে হয়।’

বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার শিহাব উদ্দিন খান ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘অপরিকল্পিত ও ব্যবহার অনুপযোগিতা ফুটওভার ব্রিজের একটি বড় সমস্যা। রাজধানীসহ উপশহরগুলোর অনেক ফুটওভার ব্রিজ ঝুঁকিপূর্ণ এবং প্রায়ই অনেকে আহত হন। ফুটওভার ব্রিজে শারীরিকভাবে অক্ষম, বয়স্ক মানুষের ব্যবহার কষ্টসাধ্য। এ ক্ষেত্রে কীভাবে ফুটওভার ব্রিজ নিরাপদ ও সবার ব্যবহার উপযোগী করা যায় সেদিকে নজর দেওয়া জরুরি। ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার নিশ্চিত করতে জনসচেতনতা বাড়াতে হবে এবং ব্রিজের নিচে এবং ওপরে হকার, ভাসমান মানুষের অবৈধ দখল কমিয়ে পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করতে হবে।’

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম রেজা ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘মানুষ যদি ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার করতো তাহলে এসব ব্রিজ অবহেলিত থাকতো না। আমরা তো মানুষের বাসার সামনে ফুটওভার ব্রিজ করিনি। যে এলাকায় দরকার সেই এলাকায় ব্রিজটা তৈরি করা হয়।’

সেলিম রেজা বলেন, ‘মানুষ যদি একটু কষ্ট করে হলেও ফুটওভার ব্রিজ সঠিক নিয়মে ব্যবহার করতো তাহলে আরও সড়ক দূর্ঘটনা কমে আসতো এবং ফুটওভার ব্রিজ দিয়ে মানুষ চলাচল করলে পতিতা, ভিক্ষুক, ছিনতাইকারীরা এসব ফুটওভার ব্রিজে আসার সাহসও পেতো না।’

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘রাজধানীতে বাংলাদেশের সব জায়গার মানুষ চলাচল করে থাকে। ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার করার জন্য আমরা প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছি। ফুটওভার ব্রিজগুলোর শতভাগ ব্যবহার নিশ্চিত করতে পথচারীদের আরও বেশি সচেতনতা জরুরি বলে আমি মনে করি। ’

(ঢাকাটাইমস/০৮ফেব্রুয়ারি/পিআর/কেএম/এফএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

জাতীয় এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :