অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখর বাইক্কা বিল
মৌলভীবাজারের বাইক্কা বিল। এখন অতিথি পাখির অভয়াশ্রম এই বিল এখন পাখির কল কাকলিতে মুখর। চলতি শীতের শুরু থেকেই দর্শনার্থী ও পাখিপ্রেমীদের ভিড় বাড়তে থাকে। এখন তা সীমা পেরিয়ে চলছে। কয়েক বছরের মধ্যে এবার সবচেয়ে বেশি পর্যটক, দর্শনার্থী ও পাখিপ্রেমীর ভিড় এখন বাইক্কা বিলে। মৌলভীবাজারসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিদিন বাইক্কা বিলে পাখির অভয়ারণ্য দেখতে পর্যটক, দর্শনার্থী ও পাখিপ্রেমীরা ছুটে আসছেন।
বাইক্কা বিলের অপার সৌন্দর্য, জলজসম্পদ আর অতিথি পাখির কিচির-মিচিরে মুখরিত অপরূপ দৃশ্য দেখতে দর্শনার্থীদের পদভারে মুখর স্থানটি। এ বছর বাইক্কা বিলে শীতের অতিথি পাখির আনাগোনা কমে গেলেও অতিথি পাখির সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে আশা করা হচ্ছে। শীত শেষে মার্চে যখন গ্রীষ্মের শুরু তখন এসব পাখি আবার ফিরে যাবে আপন নীড়ে।
সুদূর সাইবেরিয়া, হিমালয় অঞ্চলসহ বিভিন্ন দেশ থেকে শীতের শুরুতে প্রতি বছর ঝাঁকে ঝাঁকে আসে নানা প্রজাতির পাখি। ওইসব অঞ্চলে যখন শীত তীব্র হয়ে ওঠে, ঠিক সে সময় এসব পাখি একটু উষ্ণতা ও খাদ্যের অন্বেষণে নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে বেড়িয়ে পড়ে দলবেঁধে এবং এসব পাখি তখন অস্তিত্বের প্রয়োজনে এ দেশের আতিথ্য নিতে ছুটে আসে বিভিন্ন হাওর, বিল ও জলাশয়ে। ২০০৩ সালে চাপড়া, মাগুড়া ও যাদুরিয়া বিলের ১০০ একর জলাভূমিতে বাইক্কা বিল নামে একটি স্থায়ী মাছের অভয়াশ্রম ঘোষণা করা হয়। বাইক্কা বিলে গত বছর ৪১ প্রজাতির শীতের পাখির দেখা মিলেছে।
ছোট নথ জিরিয়া, রাজহাঁস, ওটা, ধুপনি বক, ইগল, ভুবন চিল, মেলে হলদে বক, দেশি কানি বক, গো-বক, ছোট বক, মাঝেলা বগ, লালচে বক, বেগুনি কালেম, বড় বগা, দেশি মেটে হাঁস, সরালি, বালিহাঁস, পানমুরগি, শালিক, ঘুঘু, দোয়েল, চড়ুই, বুলবুলি, দাগি ঘাসপাখি, টুনটুনি, ফিঙেসহ আরো অনেক প্রজাতির পাখি।
বাইক্কা বিল অভয়াশ্রমটির জীববৈচিত্র্য ফিরে পাওয়া ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য শুরু থেকে সরকার বড়গাংগিনা সম্পদ ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করে। এরপর থেকে ধীরে ধীরে বিলটি মাছের পাশাপাশি পাখির নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে গড়ে উঠে। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত অতিথি পাখি আর দেশীয় নানা জাতের ছোট বড় মাছ ও পাখির নিরাপদ আবাসস্থল এটি।
সারাবছর ওখানে পাখি ও মাছের মিলন মেলা থাকলেও শীতকালে তা পায় ভিন্ন আমেজ। পাখিদের জলকেলি আর নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখতে এখানে রয়েছে একটি পর্যবেক্ষণ টাওয়ার। শুক্র ও শনিবার এই দুদিন পর্যটক বেশি আসেন। শীত প্রধান বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে উড়তে উড়তে ঘুরতে ঘুরতে আসা হরেক রকমের অতিথি পাখির তীর্থ ক্ষেত্র যেন এই বাইক্কা বিল। বিল পরিদর্শনের সুবিধার্থে এখানে পর্যটকদের জন্য রয়েছে তিন তলাবিশিষ্ট একটি টাওয়ার।
পর্যটকরা জানান, বাইক্কা বিলে বিভিন্ন প্রজাতির অতিথি পাখি দেখে আমি মুগ্ধ। বিলের ধারের সবুজ বাগান প্রকৃতি আনন্দ দেয়। কিছুটা বড় আকারের কয়েকটি পাখির দেখা পেলাম। পাখির কিচির মিচির শব্দ, ঝাঁক বেঁধে উড়ে বেড়ানো ও বিলের পানিতে ঝাঁপাঝাঁপি দৃশ্য নজর কেরেছে। বাইক্কা ঘুরে মনোরন দৃশ্য দেখে তারা মধ্যে প্রশান্তি ফিরে পেয়েছেন। পাখি দেখতে পর্যটকদের জন্য এখানে তৈরি করা হয়েছে ওয়াচ টাওয়ার। গত বছর যে পরিমাণ পাখি ছিল, এ বছর পাখি কম মিলেছে।
বাইক্কা বিল বড়গাংগিনা সম্পদ ব্যবস্থাপনা কমিটি জানায়, ২৭ ডিসেম্বর থেকে ৯ দিন পর্যটকদের জন্য এ দর্শনীয় স্থানটি বন্ধ করা হয়। ৪ জানুয়ারির পর পর্যটকদের জন্য বাইক্কা বিল উন্মুক্ত করা হয়।
সিএনআরএস-এর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বলেন, ডিসেম্বরের শুরু থেকেই বাইক্কা বিলে অতিথি পাখি আসতে শুরু করেছে। যা জানুয়ারি পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। শীত শেষে মার্চে যখন গ্রীষ্মের শুরু তখন এসব পাখি আবার ফিরে যাবে আপন নীড়ে। পুরো শীতটাই এখানে কাটিয়ে এক সময় নিজ নিজ গন্তব্যে পাড়ি জমাবে পাখিরা। এরা দল বেঁধে আসে আবার দল বেঁধেই চলে যায়। (ঢাকাটাইমস/০৯ফেব্রুয়ারি/এলএ/এআর)