লালন-পালনের ছলে শিশু অপহরণ করে বিক্রি, গ্রেপ্তার ২

লালন-পালন করার কথা বলে ১৭ মাসের এক শিশুকে গাজীপুর থেকে অপহরণ করে বিক্রি করে দেয়ার পর চাঁদপুর থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। এসময় অপহরণকারী ও শিশুটির ক্রেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

শুক্রবার সকালে তাদের রিমান্ড আবেদনসহ আদালতে পাঠানো হলে দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন বিচারক।

উদ্ধারকৃত শিশুর নাম রুহান মোস্তফা (১৭ মাস)। সে রংপুর মহানগরীর হারাগাছ থানার চালকুঠি এলাকার আজিজুল ইসলামের ছেলে। শিশুটির বাবা-মা গাজীপুর মহানগরীর সদর থানার উত্তর বিলাশপুর এলাকায় ভাড়া থেকে স্থানীয় তৈরী পোশাক কারখানায় চাকরি করেন।

গ্রেপ্তার অপহরণকারী শরিফুল আলম লিটন (৪৫)। তিনি কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুর থানার কোদালিয়া এলাকার শফিউল আলম ওরফে হকা মেলেটারির ছেলে। তিনি অপহৃত শিশুটির বাবা-মায়ের ভাড়া বাড়িতে পাশাপাশি কক্ষে ভাড়া থাকেন।

গ্রেপ্তার ক্রেতার নাম জাহাঙ্গীর আলম (২৯)। তিনি চাঁদপুর জেলার মতলব থানার চর মাছুয়া এলাকার আক্কাছ আলী মোল্লার ছেলে। তিনি গাজীপুর মহানগরীর সদর থানার উত্তর বিলাসপুর এলাকায় দুলাল মিয়ার বাড়ির ভাড়াটিয়া।

জিএমপির উপ-কমিশনার (উত্তর) আবু তোরাব মো. শামসুর রহমান জানান, শিশুটির বাবা-মা গত ১০ জানুয়ারি গ্রামের বাড়ি থেকে গাজীপুর এসে শিশুপুত্রসহ ভাড়া বাসায় ওঠেন। পরে তারা স্থানীয় একটি কারখানায় চাকরি নেন। আসামি শরিফুল আলম লিটন তাদের ভাড়া বাসার পাশের কক্ষের ভাড়াটিয়া। পাশাপাশি কক্ষে থাকার কারণে তাদের মধ্যে কথাবার্তা হয়। এ সুযোগে আসামি কৌশলে তাদের সাথে সু-সম্পর্ক গড়ে তোলে। আজিজুল ইসলাম ও তার স্ত্রী দুজনেই গার্মেন্টসে চাকরি করার সুবাদে আসামি শরিফুল আলম লিটন শিশু রুহান মোস্তফা (১৭ মাস)-কে লালন-পালন করার ইচ্ছা পোষণ করে। আজিজুল ইসলাম সরল মনে বিশ্বাস করে তার শিশু সন্তানকে লালন-পালন করার দায়িত্ব দেয়। এ জন্য আজিমুল আসামিকে মাসিক ৩ হাজার টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।

তিনি আরো জানান, গত ১১ জানুয়ারি আজিজুল ইসলাম ও তার স্ত্রী শিশু সন্তানকে আসামির নিকট রেখে কর্মস্থলে চলে যায়। এই সুযোগে আসামি শরিফুল আলম লিটন শিশুটিকে অপরহরণ করে নিয়ে পালিয়ে যায়। পরে শিশুটিকে জাহাঙ্গীর আলমের নিকট ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেয়। পরে জাহাঙ্গীর আলম শিশুটিকে নিয়ে চাঁদপুরের গ্রামের বাড়ি চলে যায়। অপরদিকে অপহরণকারী শরিফুল আলম লিটন দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘোরাফেরা করে সর্বশেষ রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দঘাট থানার পতিতাপল্লী এলাকায় আত্মগোপন করে।

পুলিশ কর্মকর্তা আরো জানান, এ ঘটনায় শিশুটির বাবা গত বুধবার রাতে (২২ ফেব্রুয়ারি) থানায় অভিযোগ করেন। পরে তথ্য প্রযুক্তির সাহায্যে আসামির অবস্থান শনাক্ত করে ২৩ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দঘাট থানার পতিতাপল্লী এলাকায় জিএমপির সদর থানা ও গোয়ালন্দঘাট থানার পুলিশ যৌথ অভিযান চালিয়ে শরিফুল আলম লিটনকে গ্রেপ্তার করে। লিটনের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী জাহাঙ্গীর আলমের গ্রামের বাড়িতে ওই রাতেই অভিযান চালিয়ে শিশু রুহান মোস্তফাকে জাহাঙ্গীর আলমের হেফাজত হতে উদ্ধার করা হয়।

জিএমপির সহাকারী পুলিশ কমিশনার (প্রসিকিউশন) আহসানুল হক জানান, গ্রেপ্তারের পর আসামিদের ৭ দিনের রিমান্ড আবেদনসহ শুক্রবার সকালে আদালতে পাঠানো হয়। পরে আদালত রিমান্ড আবেদনের শুনানি শেষে দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জর করেছেন। উদ্ধার শিশুটিকে আদালতের মাধ্যমে বাবা-মায়ের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/২৪ফেব্রুয়ারি/এলএ)