দিনাজপুর সদরে মাদ্রাসা অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ

দিনাজপুর সদর উপজেলার ৭নং উথরাইল ইউনিয়ের মালিগ্রাম আলিম মাদ্রাসার নিয়োগ পরীক্ষা প্রবেশপত্রে উল্লেখিত প্রতিষ্ঠানে না নিয়ে অন্য প্রতিষ্ঠানে সম্পন্ন করে অধ্যক্ষ শফিকুল ইসলাম মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে মনোনীত প্রার্থীদের চাকরি দিয়েছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন একাধিক পরীক্ষার্থী, অভিভাবক ও স্থানীয়রা।
বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তি পেতে অনেক শিক্ষিত ছেলে মেয়েরাও নৈশ প্রহরী,পরিচ্ছন্নতা কর্মী ও আয়া পোস্ট চাকরির জন্য আবেদন করেন। কিন্তু মাদ্রাসার অধ্যক্ষের নিয়োগ বাণিজ্য ও স্বেচ্ছাচারিতার কারনে অনেক উপযুক্ত ও মেধাবী যুবক যুবতীরাও চাকরি প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হয়েছে। প্রবেশপত্রে উল্লেখিত পরীক্ষাকেন্দ্রে নিয়োগ পরীক্ষা হলে তার নিয়োগ বানিজ্যের ও পরীক্ষা কারচুপির গোপন তথ্য ফাঁস হয়ে যাবে, এই ভয়ে তিনি নিয়োগ পরীক্ষা আবেদধনকারী পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষার কেন্দ্র পরিবর্তনের কোন নোটিশ বা মেসেজ দিয়ে অবগত না করেই নিমনগর বালুবাড়ী বালিকা আলিম মাদ্রাসায় নিয়োগ পরীক্ষা সম্পন্ন করে। মেধার ভিত্তিতে চাকরি প্রাপ্তি থেকে তাদের সন্তানরা বঞ্চিত হওয়ায় এলাকাবাসী মাদ্রাসায় গিয়ে বিক্ষোভ করেন।
২৩ফেব্রুয়ারি সকালে মালিগ্রাম আলিম মাদ্রাসায় গিয়ে সরেজমিনে বিক্ষোভকারীএলাকাবাসী ও সচেতন ব্যক্তিদের সঙ্গে বললে তারা জানায় মাদ্রাসার অধ্যক্ষ শফিকুল ইসলামের দুর্নীতি চরমে পৌঁছে গেছে। এক সময় যার পেটে ভাত ছিল না এখন এই মাদ্রাসার সুবাদে শহরে তিনতলা বাড়ি থেকে শুরু করে বিপুল অর্থ সম্পদের মালিক বনে গেছেন। মাদ্রাসায় তিনি অধ্যক্ষ হওয়ার পর থেকে মাদ্রাসাটি পরিণত হয়েছে অর্থ উপার্জনের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে। মাদ্রাসায় কোনোদিনই শিক্ষার্থীদের ক্লাস নির্দিষ্ট সময় শুরু বা শেষ হয় না। ১২টা ১টা না বাজতেই মাদ্রাসা ছুটি হয়ে যায় এবং শিক্ষকরাও বাড়ি চলে যায়।মাদ্রাসায় নীয়ম-নীতির কোনো বালাই নেই। অর্থ উপার্জনই যেন মাদ্রাসার অধ্যক্ষের প্রধান উদ্দেশ্য।
বঞ্চিত নিয়োগ প্রার্থী, অভিভাবক ও এলাকাবাসীর স্বাক্ষরিত বিভিন্ন দপ্তরে ও সাংবাদিকদের দেয়া লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত ১৭ফেব্রুয়ারি (শুক্রবার) মালিগ্রাম কামিল মাদ্রাসায় চারটি পদে জনবল নিয়োগের কার্যক্রম সম্পন্ন হয়।অফিস সহায়ক,কম্পিউটার অপারেটর,আয়া ও পরিচ্ছন্নতা কর্মী এই চারটি পদে প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ শফিকুল ইসলাম ও প্রতিষ্ঠানের কার্যকরি কমিটির সদস্য
সাইদুর রহমান যোগসাজস করে তাদের পছন্দনীয় ব্যাক্তিদের মোটা অংকের নগদ অর্থের বিনিময়ে নিয়োগ দেন। কেউ কেউ চাকরির জন্য হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়ায় আবার কারো পরিবারের একজন চাকরি করার পরও তার পরিবারের আরেকজনকে একই প্রতিষ্ঠানে চাকরি দেয়া এটা কোনো ধরনের সচ্ছতা তার আর বলার অবকাশ রাখে না।
মালিগ্রাম আলিম মাদ্রাসার জমি দানকারী দাতা পরিবারের জমিল উদ্দীন সরকারের ছেলে এনামুল হক অফিস সহায়ক কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে আবেদন করলে প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ এক আওয়ালীগ নেতার পরামর্শে ৫ লাখ টাকা গ্রহণ করেও তাকে চাকরি না দিয়ে তার স্থলাভিত্তিক একই মাদ্রাসার আরবির প্রভাষক রবিউলের স্ত্রী মৌলতা মৌকে সিলেক্ট করে। আয়া পোস্টে স্থানীয় এইচএসসি পাস করা আবু বক্কর সিদ্দিকের মেয়ে আফরিনা, আব্দুস সামাদের স্ত্রী মৌসুমী আবেদন করলেও তার পরিবর্তে কমিটির সদস্য সাইদুর রহমান ও অধ্যক্ষের মনোনীত ১০নং কমলপুর ইউনিয়নের নাজমা নামের একজনকে সিলেক্ট করেন।এভাবে প্রতিটি পদেই মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ না দিয়ে আগে থেকেই ঠিক করে রাখা প্রার্থীদের দিয়ে শুধু লোক দেখানো নিয়োগের বৈধতা দেওয়ার জন্য পরীক্ষা নেয়া হয়। নিয়োগের পরীক্ষা নেওয়ার ক্ষেত্রেও প্রবেশপত্রে উল্লেখিত পরীক্ষাকেন্দ্রে পরীক্ষা না নিয়ে পরীক্ষা কেন্দ্র পরিবর্তনের কোন ধরনের নোটিশ প্রদান না করেই তাদের ইচ্ছেমতো বালুবাড়ি বালিকা আলিম মাদ্রাসায় পরীক্ষা নিয়ে প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ শফিকুল ইসলাম তার নিয়োগ বাণিজ্য সফল করেছেন। তদন্ত সাপেক্ষে পূর্বের নিয়োগ পরীক্ষা বাতিল করে পুনরায় পরীক্ষা নিয়ে সচ্ছতার সঙ্গে মেধানু ও যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগ সম্পন্ন করার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেন এলাকাবাসী ও বঞ্চিত নিয়োগ প্রার্থীরা।
মালিগ্রাম আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মো. শফিকুল ইসলামের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে তাকে প্রতিষ্ঠানে না পেয়ে মুঠো ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি প্রতিনিধিকে জানান নিয়মতান্ত্রিকভাবেই প্রতিষ্ঠানের সভাপতির নির্দেশেই নিয়োগ পরীক্ষা নেয়া হয়েছে এবং মেধার ভিত্তিতেই নিয়োগ যোগ্য প্রার্থীদের সিলেক্ট করা হয়েছে। প্রবেশপত্রে উল্লেখিত পরীক্ষাকেন্দ্রে পরীক্ষা না নিয়ে রাতারাতি পরীক্ষাকেন্দ্র পরিবর্তনের বিষয় জানতে চাইলে তিনি জানান ইতিপূর্বে বেশ কয়েকবার পরীক্ষার ডেট পিছিয়েছে তাই এবার সম্পন্ন করার জন্য বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড, ঢাকা থেকে আগত নিয়োগ বোর্ডের প্রতিনিধির সময় স্বল্পতার কারণেই তার নির্দেশে স্থান পরিবর্তন করা হয়েছে। আমাদের মাদ্রাসার নিয়োগ পরীক্ষার প্রতিটি কার্যক্রম সভাপতির নির্দেশেই সম্পন্ন হয়েছে বলে অধ্যক্ষ শফিকুল ইসলাম জানান।
(ঢাকাটাইমস/২৬ফেব্রুয়ারি/এআর)

মন্তব্য করুন