গুলিস্তান বিস্ফোরণ: ‘স্বামীর ঘর করার আগেই বিধবা হইলাম’
শরীয়তপুরের গোসাইরহাট উপজেলার রবিন হোসেন শান্ত (২৩)। বিয়ে করেছেন পাঁচ মাস আগে। তবে নতুন বউ ঘরে তোলেননি এখনও। আশা ছিল ঈদের পর বউকে ঘরে তুলবেন। সেই আশা আর পূরণ হলো না।
গত মঙ্গলবার (৭ মার্চ) রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিকবাজারে ভয়াবহ বিস্ফোরণে মৃত্যু হয়েছে তার। একমাত্র সন্তানকে হারিয়ে পাগলপ্রায় শান্তর বাবা-মা। কান্না থামছে না তার নববধূর।
নিহত রবিন হোসেন শান্তকে বুধবার (৮ মার্চ) শরীয়তপুরের গোসাইরহাট উপজেলার নাগেরপাড়া ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব নাগেরপাড়া গ্রামে দাফন করা হয়েছে।
নিহত শান্তর বাবা সোহরাব সরদারের বলেন, ‘একটা মাত্র ছেলে ছিল। আল্লাহ আমাকে মেয়ে দেয় নাই। অনেক কষ্ট করে ছেলেকে ইন্টার পাস করিয়েছিলাম একটু সুখের আশায়। কিন্তু বিধাতা বুঝি তা চান নাই। তাই দুই বছর আগে আমার ব্রেইন স্ট্রোক হলে পড়াশোনা ছেড়ে ছেলে আমার গুলিস্তানের সিদ্দিকবাজারের একটি সিরামিকের দোকানে চাকরি নিয়ে সংসারের হাল ধরেছিল। ৭ হাজার টাকা বেতনের চাকরি করে আমাদের বুড়া-বুড়ির ওষুধ ও সংসারের বাজার করত শান্ত। এখন কে আমাকে ওষুধ কিনে দিবে। কে আমার মুখে খাবার দিবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বুড়া-বুড়ি কখন মরে যাই জানি না। ছেলের বউ দেখার আশায় পাঁচ মাস আগে বিয়ে করিয়েছিলাম শান্তকে। কিন্তু অভাবের সংসার, অনুষ্ঠান করতে পারিনি বলে এখনো বউ নাইয়র আনা হয় নাই। সিরামিক দোকানের মালিক বলেছিল রমজানের ঈদের পরে শান্তর বেতন বাড়াবে। আশা ছিল কোরবানির ঈদের পর গ্রামের মুরব্বিদের নিয়ে লাল শাড়ি পরায়া আমার ছেলের বউ আনব। কিন্তু আল্লাহ আমার এটা কি করল? নাইয়র না আসা বউ আইলো স্বামীরে মাটি দিতে।’
শান্তর মা তাসলিমা (৪৫) ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমি এখন এই ছেলের বউকে কী করব? আমার তো আরেকটা ছেলেও নাই যে তার জন্য রেখে দেব। কে আমার অসুস্থ স্বামীরে দেখবে? আমি কাল সকালে কী রাধব? আল্লাহ আমারে এ কোন পরীক্ষায় ফালাইল?’
শান্তর স্ত্রী জিয়াসমিন (১৮) ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমি স্বামীর ঘর করার আগেই বিধবা হইলাম। ইয়া আল্লাহ তুমি আর কারও সঙ্গে এমনটা কইরো না। আমি এখন কী করব? আমার কী হইব? আমার শ্বশুর বৃদ্ধ মানুষ, নিজেই এখন খেতে পারবেন না। আমাকে খাওয়াবেন কোথা থেকে?
এদিকে অসহায় এই পরিবারটির পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দিয়েছেন শাহাদাত হোসেন নামে এক যুবক।
তিনি সোহরাব সরদারের পালক ছেলে। ঢাকায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন।
শাহাদাত হোসেন ঢাকা টাইমস কে বলেন, ‘আল্লাহ বুঝি মানুষের ভাগ্য আগেই লিখে রাখেন। তা না হলে সোহরাব চাচা কেন আমাকে ছোটবেলা থেকে লালন-পালন করবেন? তার মৃত্যু পর্যন্ত তাকে আমি দেখে রাখব। আমি বুঝি বাবা-মায়ের কষ্ট কী! আমি ডাল-ভাত খেলে সোহরাব চাচা আর তাসলিমা চাচিরেও খাওয়াব। আমি না খাইলে তারাও না খেয়ে থাকবেন। ’
প্রতিবেশী আব্দুর রাজ্জাক ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘তার কোনো জমি নাই। বয়সকালের জমানো টাকা দিয়ে ৫ শতাংশ জমি নাগেড়পাড়ায় কিনছিলেন। কথা ছিল ঘর তুলবেন জমিতে। কিন্তু সেই জমিতে ছেলেকে দাফন করে দিয়েছেন। বংশের ধারাবাহিকতা রক্ষার মতো কেউ রইল না আর সোহরাব সরদারের।’
শান্তর চাচি নাছিমা আক্তার বলেন, ‘শান্তর মতো ভদ্র ছেলে আমি আর দেখি নাই। অল্প বয়সে সংসারের হাল ধরেছিল। বৃদ্ধ বাবাকে দেখাশোনা করত। এখন আর কেউ রইল না দেখাশোনা করার জন্য।’
গুলিস্তানের সিদ্দিকবাজারে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ২৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। অনেকে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
(ঢাকাটাইমস/১০মার্চ/এসএ)