হাসি ফুটল গৃহহীনের মুখে, খুশিতে ভিজল চোখ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২৩ মার্চ ২০২৩, ১১:৪১ | প্রকাশিত : ২৩ মার্চ ২০২৩, ০৭:৫৫

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহারের ঘর পেয়ে হাসি ফুটেছে আরও ৪০ হাজার গৃহহীন পরিবারের মুখে। নিমিষেই মুছে গেছে এসব পরিবারের মাথা গোঁজার ঠাঁই নিয়ে দুশ্চিন্তা। নতুন ঘর পেয়ে যেন খুশির সীমা ছিল না তাদের। অনেকেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য হাত তুলে দোয়াও করেছেন।

গতকাল ৪০ হাজার গৃহহীনকে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘর হস্তান্তর করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। স্থায়ীভাবে মাথা গোঁজার ঠাঁই পেয়ে আনন্দে আত্মহারা গৃহহীন ৪০ হাজার পরিবার। খুশিতে ছলছল করছিল তাদের চোখ। চতুর্থ দফা গৃহ হস্তান্তরের মাধ্যমে দেশের আরও সাত জেলা গৃহহীন ও ভূমিহীনমুক্ত হলো। এর আগে দেশের প্রথম জেলা হিসেবে পঞ্চগড় ও মাগুরা জেলাকে ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত ঘোষণা করা হয়। অর্থাৎ এসব জেলায় ঘর কিংবা জমি ছাড়া কেউ বসবাস করছে না।

‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অঙ্গীকার, দেশের কোনো মানুষ ভূমিহীন-গৃহহীন থাকবে না’ এ লক্ষ্যে গতকাল গণভবন থেকে সকাল সাড়ে ১০টায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় আরও ৩৯ হাজার ৩৬৫টি ঘর হস্তান্তর করেন প্রধানমন্ত্রী। এর মাধ্যমে দেশের ৯টি জেলা ও ২১১টি উপজেলা ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত হলো।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, দেশের মাদারীপুর, গাজীপুর, নরসিংদী, রাজশাহী, জয়পুরহাট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও চুয়াডাঙ্গা জেলার সব উপজেলা গৃহহীনমুক্ত হয়েছে নতুন ঘর হস্তান্তরের মাধ্যমে।

১৯৯৭ সালে ভূমিহীন-গৃহহীনকে পুনর্বাসনের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ‘আশ্রয়ণ’ নামে একটি প্রকল্প গ্রহণ করে, যা প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয়ে আসছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে মুজিববর্ষে প্রথম পর্যায়ে ২০২১ সালের ২৩ জানুয়ারি ৬০ হাজার ১৯১টি ঘর ও ২০ জুন ৫৩ হাজার ৩০০টি ঘর হস্তান্তর করা হয়েছে। প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ে মোট নির্মিত ঘরের সংখ্যা ১ লাখ ১৭ হাজার ২৯।

এখন পর্যন্ত এই প্রকল্পের আওতায় ৫ লাখ ৫৪ হাজার ৫৯৭টি পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। আশ্রয়ণ ও অন্যান্য মন্ত্রণালয় বা সংস্থাসহ ঘর নির্মাণ করে ১৯৯৭ সাল থেকে এখন পর্যন্ত পুনর্বাসন করা হয়েছে ৭ লাখ ৭১ লাখ ৩০১টি পরিবারকে। প্রতি পরিবারের পাঁচ জন সদস্য হিসাবে দেশে মোট উপকারভোগীর সংখ্যা ৩৮ লাখ ৫৬ হাজার ৫০৫।

তৃতীয় পর্যায়ে নির্মাণ করা একক ঘরের সংখ্যা ৬৫ হাজার ৬৭৪। এর মধ্যে ৩২ হাজার ৯০৪টি হস্তান্তর হয়েছে গত বছরের ২৬ এপ্রিল এবং দ্বিতীয় ধাপে ২১ জুলাই জমির মালিকানাসহ ২৬ হাজার ২২৯টি হস্তান্তর করা হয়। বুধবার চতুর্থ পর্যায়ে হস্তান্তর হচ্ছে ৩৯ হাজার ৩৬৫টি ঘর।

প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ পর্যায়সহ মোট হস্তান্তরিত একক ঘরের সংখ্যা দাঁড়াচ্ছে ২ লাখ ১৫ হাজার ৮২৭টি। চতুর্থ পর্যায়ে অবশিষ্ট নির্মাণাধীন ঘরের সংখ্যা ২২ হাজার ৬টি। চতুর্থ পর্যায়ে চরাঞ্চলে বরাদ্দ করা বিশেষ ডিজাইনের ঘরের সংখ্যা ১ হাজার ৩৭৩টি এবং পার্বত্যাঞ্চলের বিশেষ ডিজাইনের মাচাং ঘর ৬৩৪টি।

‘কাঙ্গাল ছেলাম, হাসিনা মায় আমারে ঘর দেছে’

‘আমার কিচ্ছু নাই, আমি কাঙ্গাল ছেলাম, হাসিনা মায় আমারে ঘর দেছে। ঘর পাইয়া মুই খুব খুশি হইছি। আমি যতদিন বাইচ্চা আছি, হের লাইগ্গা দোয়া হরমু।’ কথাগুলো বলছিলেন পিরোজপুর সদর উপজেলার শিকদার মল্লিক ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের জহুরা বেগম। সরকারের আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরের দলিল হাতে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন তিনি। তিনি ছাড়া এমন উপকারভোগীদের অনেকের চোখেই বইছে আনন্দের অশ্রুধারা।

গতকাল পিরোজপুরে ১ হাজার ১৬০টি ঘরের দলিল হস্তান্তর করার সময় উপজেলা পরিষদের শহীদ ওমর ফারুক অডিটরিয়মে এ দৃশ্যের অবতারণা হয়। তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হসিনার প্রতি কান্নাজড়িত কন্ঠে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। অনুষ্ঠানে উপকারভোগী আরতী দাস বলেন, ‘আমি আগে পরের জায়গায় একটু ঘর উডাইয়া থাকতাম। এহন শেখ হাসিনা ঘর দেছে। হেই ঘরে এহন থাকমু। আগে অনেক কষ্ট কেলেশ করছি।’

টোনা ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের হাসি বেগম বলেন, ‘স্বামী অসুস্থ। নিজের জায়গাজমি নাই। মানষের ঘরে থাকছি। শেখ হাসিনা না থাকলে আমি ঘর পাইতাম না। তার জন্য অনেক দোয়া হরি।’

ধন্যবাদ জানিয়ে হেপি বেগম বলেন, ‘শেখ হাসিনা বাংলাদেশের লাইগ্গা যা হরছে এ রকম কোনো সরকার আর হরবে না। জনগণের জন্য রাস্তা, সেতু, আবাসন যতগুলা দেছে, যত মানুষের ছায়া দেছে হেগো দোয়া শেখ হাসিনা পাবে। হেরে যদি সামনে পাইতাম তয় যে কি করতাম হেয়া কইতে পারি না। আমি হের উপর অনেক খুশি। সে আবারও প্রধানমন্ত্রী হবে, আমরাই বানামু।’

বাসভবন গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল সকালে ভার্চুয়ালি সারাদেশে সাত জেলা ও ১৫৯ উপজেলাকে ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত ঘোষণা করেন। এ সময় ৩৯ হাজার ৩৬৫টি ঘরের দলিল ও চাবি হস্তান্তর অনুষ্ঠানে পিরোজপুর জেলার ৬ উপজেলাকে ভূমিহীনমুক্ত ঘোষণা করেন তিনি। আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর পেয়েছে ১ হাজার ১৬০ পরিবার। এ জেলায় মোট ৫ হাজার ৭৯০টি ভূমি ও গৃহহীন পরিবারের তালিকা করা হয়। এদের মধ্যে ৫ হাজার ২৭৬ পরিবার ইতোমধ্যে ভূমি ও গৃহহীনমুক্ত হয়েছে। বাকি থাকা পিরোজপুর সদর উপজেলাও আগামীতে এর আওতায় আসছে বলে জানা গেছে।

এদিন পিরোজপুরে থেকে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) সেলিম হোসেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মরিয়ম জাহান, শংকরপাশা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তোফাজ্জেল হোসেন মল্লিক স্বপন, পিরোজপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি শফিউল হক মিঠু প্রমুখ।

ঢাকাটাইমস/২৩মার্চ/আরআর/আরকেএইচ

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

জাতীয় এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :