সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে মোকাবিলায় আওয়ামী লীগ সর্বদা প্রস্তুত: সুজিত রায় নন্দী

জাফর আহমেদ, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২৬ মার্চ ২০২৩, ১৪:১৭ | প্রকাশিত : ২৬ মার্চ ২০২৩, ১৪:১৫

স্বাধীনতা আর দেশের মানুষের অধিকারের প্রশ্নে আওয়ামী লীগ একচুলও বিচ্যুত হবে না। নির্বাচন এলে দেশে যে সাম্প্রদায়িক হামলা বেড়ে যায়, সেই বিষয়েও আওয়ামী লীগ সদা সতর্ক। একটি মহল সাম্প্রদায়িক হামলা ঘটিয়ে দেশেকে অস্থিতিশীল করতে গভীর ষড়যন্ত্র করছে। এই অপশক্তির ষড়যন্ত্রের মোকাবিলা করতে আওয়ামী লীগ সবসময় প্রস্তুত।

ঢাকা টাইমসকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী এসব কথা বলেন। শনিবার দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিসহ নানা বিষয়ে কথা বলেন।

ছাত্রলীগ দিয়ে রাজনীতিতে আসা সুজিত রায় নন্দী ২০০৩ সালে আওয়ামী লীগের উপকমিটির সহ-সম্পাদক, ২০০৯ ও ২০১২ সালে দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। পরপর দুইবার দলটির ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন।

সর্বশেষ আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় কাউন্সিলে দলের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হন তিনি। রংপুর বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন।

ঢাকা টাইমস: বিভিন্ন বির্তকিত কর্মকাণ্ড করে দল থেকে বহিষ্কার হয়েছে এবং রংপুর বিভাগের যেসকল নেতাকর্মী ক্ষমার চিঠি নিয়েছে তাদের প্রতি বার্তা কি থাকবে আ.লীগের?

সুজিত রায় নন্দী: সাংগঠনিক যে সমস্যা আছে সেগুলো সমাধান করার কাজ করে যাচ্ছি। এক সঙ্গে কেউ যেন বির্তকিত কর্মকাণ্ড না করে সেই বার্তাও দিয়ে যাচ্ছি। এজন্য নিয়মিত মিটিং করে নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। যারা দলের মধ্যে থেকে বিশৃঙ্খলা করে বা বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে দল থেকে বহিষ্কার হয়েছে এখন আবার তাদেরকে ক্ষমা করা হয়েছে। দল তাদের বিষয়ে সতর্ক আছে। যারা ক্ষমা পেয়েছে তারা দলের কোনো গুরুত্বপূর্ণ পদ থাকবে না। তারা শুধু সাধারণ কমিটিতে থাকবে। যারা দলের ক্ষমা পেয়েছে তাদেরকে যেহেতু শান্তির আওতায় আনা হয়েছে ভবিষ্যতে তারা ভুল পদে যাবে না আশা করি। তারপর যদি কেউ দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হয় বা বিশৃঙ্খলা করে তাহলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ঢাকা টাইমস: রংপুর বিভাগের আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক অবস্থা কেমন?

সুজিত রায় নন্দী: শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি রংপুর বিভাগের সাংগঠনিক সমস্যা সমাধান করতে। আমি দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে রংপুর বিভাগের বিভিন্ন জেলায় সফর করেছি৷ এমনকি সাংগঠনিক বিষয় নিয়ে ঢাকায়ও মিটিং করেছি। এছাড়া নীলফামারী ও কুড়িগ্রাম জেলার নেতাকর্মীদের নিয়ে মিটিং করে তাদের সাংগঠনিক বিষয় জনতে চাওয়া হয়েছে এবং বিভিন্ন বিষয় কথা হয়েছে, যে সমস্যা আছে তা সমাধান করা হয়েছে।

রংপুর বিভাগের যেসকল জেলা ও উপজেলায় কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ সেগুলো নিয়ে কাজ চলছে। পাশাপাশি সদস্য সংগ্রহের কাজও চলছে। উপজেলাগুলোর পূর্ণাঙ্গ কমিটির করার কাজও চলছে। একমাত্র বাকি গাইবান্ধা সেটাও খুব শিগগিরই হয়ে যাবে।

আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি রংপুর বিভাগের সকল সমস্যা সমাধান করে সাংগঠনিক কাঠামোকে শক্তিশালী করতে। যেখানে যে সমস্যা সেটা সমাধান করেই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।

ঢাকা টাইমস: সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কোনো সংলাপের প্রয়োজন বলে মনে করেন?

সুজিত রায় নন্দী: আওয়ামী লীগ সরকার সবসময় শান্তি-শৃঙ্খলার পক্ষে কাজ করে। আওয়ামী লীগ নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে কাজ করে যাচ্ছে। সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত করার জন্য আওয়ামী লীগ নির্বাচন কমিশনকে সবধরণের সহযোগীতা করবে। কোনো দল নির্বাচনের না আসলে তাদের আনার দায়িত্ব আমাদের না। আওয়ামী লীগ সুষ্ঠু নির্বাচন করার জন্য যা যা করার দরকার তাই করবে। তবে কোনো দলের সঙ্গে বিশেষ ভাবে সংলাপের প্রয়োজন নেই।

ঢাকা টাইমস: বিএনপি অভিযোগ করছে দুর্নীতিতে দেশ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে...

সুজিত রায় নন্দী: বিএনপির মুখে দুর্নীতির কথা শোভা পায় না। তারা ক্ষমতায় থাকলেও দুর্নীতি করে, না থাকলে দুর্নীতি করে। যে দল পাঁচবার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন তারা কিভাবে এদেশকে দুর্নীতি মুক্ত করবে? তারা নিজেদের অপকর্ম ঢাকতে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ করে।

গতবার তারা মনোনয়ন বাণিজ্য করে সেটাই প্রমাণ করেছে। এক আসনে তিন-চারজনকে মনোনয়ন দিয়েছে। শুধু যে মনোনয়ন বাণিজ্য করে টাকা পাচার করে তা কিন্তু নয়, তারা সন্ত্রাসী দল হিসেবে চিহ্নিত।

বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের রাজনীতিতে আশ্রয় দিয়েছে বিএনপি। তাদের আমলে দশ ট্রাক অস্ত্র এনে দেশকে জঙ্গিবাদী রাষ্ট্রে পরিণত করতে চেয়েছিল। বিএনপি ক্ষমতায় থাকতে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় শেখ হাসিনাকে হত্যার করার জন্য গ্রণেড হামলা করা হয়েছে।

বিএনপি জানে শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তার কাছে তারা আগামী নির্বাচনে পরাজয় বরণ করবে। তাই পিছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতা আসতে গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হচ্ছে বিএনপি।

ঢাকা টাইমস: আপনি চাঁদপুর-৩ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী, নির্বাচন করার জন্য কতটা প্রস্তুত?

সুজিত রায় নন্দী: আমি ছাত্রজীবন থেকে রাজনীতি করি। যখন সেলিম দেলোয়ারকে হত্যা করা হয় তখন আমরা মিছিল করেছি। আমার রাজনীতি শুরু তৃণমূল থেকেই। তাই তৃণমূল মানুষের সঙ্গে আমার আত্মার সম্পর্ক। ২০০৭ সালে ২২ জানুয়ারি আমাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। এরপর মনোনয়ন পায়নি, এটি আমার জন্য দুর্ভাগ্যের।

দলের সভাপতি যখন যা বলেন তাই করতে আমি প্রস্তুত আছি। সবসময় তৃণমূল মানুষের সঙ্গে আছি। আমার কার্যক্রম শুধু নির্বাচনকে ঘিরে নয়, আমি সবসময় শেখ হাসিনার নির্দেশনায় সাধারণ মানুষের পাশে থেকে কাজ করে যাচ্ছি। মানবিক ও সামাজিক কার্যক্রম আমি সারাবছর করে যাচ্ছি।

ঢাকা টাইমস: নির্বাচন এলেই দেশের মধ্যে সাম্প্রদায়িক অপশক্তি মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে এবং সাম্প্রদায়িক ঘটনা বেড়ে যায়...

সুজিত রায় নন্দী: নির্বাচন এলেই একটি মহল সাম্প্রদায়িক ষড়যন্ত্র শুরু করে। এরা দেশের শত্রু, জাতির শত্রু। এরা সাম্প্রদায়িক ঘটনা ঘটিয়ে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চায়। সাম্প্রতিক ঠাকুরগাঁও বালিয়াডাঙ্গিতে যে ঘটনা ঘটেছে এটা খুবই দুঃখজনক। এই ঘটনার কথা শুনেই আমরা সঙ্গে সঙ্গে সেই এলাকায় গিয়েছি এবং প্রতিবাদ সমাবেশ করেছি। সেই সমাবেশে হাজার হাজার লোকজন উপস্থিত ছিল।

এছাড়া আহমদিয়া সম্প্রদায়ের ওপর যে ঘটনা ঘটেছে সেখানেও আমরা গিয়েছি। আওয়ামী লীগ সবসময় শান্তির পক্ষে, মানবতার পক্ষে, অসাম্প্রদায়িকতার পক্ষে। স্বাধীনতার প্রশ্নে মানুষের অধিকারের প্রশ্নে আমরা একচুল বিচ্যুত হবো না।

নির্বাচন এলে সাম্প্রদায়িক হামলা বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে আওয়ামী লীগ সতর্ক আছে। সাম্প্রদায়িক অপশক্তি ও তাদের ষড়যন্ত্রের মোকাবিলা করতে আমরা সদা প্রস্তুত আছি।

ঢাকা টাইমস: আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক থেকে সাংগঠনিক সম্পাদক নিজেকে দলের আর কোন জায়গায় দেখতে চান?

সুজিত রায় নন্দী: আমি তৃণমূল থেকে উঠে আসা কর্মী। জননেত্রী শেখ হাসিনার একজন কর্মী। তৃণমূল মানুষের সঙ্গে আমার আত্মার সম্পর্ক। আমি জনগণের সঙ্গে আছি। আমার কার্যক্রম শুধু নির্বাচন বা সন্মেলন ঘিরে না। আমার মানবিক কার্যক্রম, সামাজিক কার্যক্রম সারা বছরব্যাপী আমি করে আসছি।

(ঢাকাটাইমস/২৬মার্চ/ডিএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :