`অসাম্প্রদায়িক চেতনা বিকাশে লড়াই চালিয়ে যেতে হবে’

বাগেরহাট প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ২৯ মার্চ ২০২৩, ১৯:২২
অ- অ+

মুক্তিযুদ্ধকালীন মুজিব বাহিনীর প্রধান বীর মুক্তিযোদ্ধা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ কামরুজ্জামান টুকু বলেছেন, স্বাধীনতার যে মূলমন্ত্র সকল বর্ণের ধর্মের মানুষের সমান অধিকার, নারী এবং পুরুষের সমান অধিকার। আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি ঠিকই, কিন্তু ধর্মনিরপেক্ষ,অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সকল মানুষের সমান অধিকারের যে প্রশ্নটি তার পূর্ণাঙ্গ সমাধানটি এখনো হয়নি।

বুধবার বিকালে ৫৩তম মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে বাগেরহাট শহরের ঐতিহ্যবাহী এ সি লাহা মিলনায়তনে বাগেরহাট ফাউন্ডেশন আয়োজিত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মাননা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।

তিনি আরও বলেন, অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নির্মাণের স্বপ্ন নিয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু আমাদের যুদ্ধের ময়দানে পাঠিয়েছিলেন। বাঙালিরা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে নির্যাতিত হতে থাকল, তখন আমাদের মধ্যে মুক্তির আকাঙ্খাটা জাগ্রত হলো। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চ ভাষণের পর তা আরও বেগবান হলো। ৩ মার্চ খুলনা শহরে মিছিলে গুলি হয়। এরপর খুলনা চারটি বন্দুকের দোকানের অস্ত্র লুট করে পাহারা বসাই। ২৭ মার্চ রাতে খুলনাতে প্রথম অভিযান পরিচালনা করি পাকিস্তানি ক্যাম্পে। এভাবে যুদ্ধ অগ্রগতি হতে থাকল। বাগেরহাটের কাড়াপাড়া এলাকায় যেদিন পাকিস্তানি আর্মি নামে, সেদিন মুক্তিযোদ্ধারা সামনে এগোলে পাকিস্তানিদের ছোড়া গুলিতে আমার সামনে থাকা একজন সহযোদ্ধা গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। কোন প্রশিক্ষণ ছাড়াই আমরা যুদ্ধ করছিলাম। তখন মনে হলো পাকিস্তানি আর্মিদের সাথে যুদ্ধ করতে হলে প্রশিক্ষণ দরকার। পরে আমরা ভারতে গিয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে আবার দেশে ফিরে যুদ্ধে অংশ নিলাম। এরপর খুলনার বিভিন্ন জেলায় পাকসেনাদের পরাজিত করতে থাকলাম। আমরা একটি স্বাধীন রাষ্ট্র পেলাম। নারীরা যারা বীর মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পেয়েছেন এবং এর বাইরেও অনেক নারী রয়েছেন যারা মুক্তিযুদ্ধের সময় অসামান্য অবদান রেখেছেন তাদের শ্রদ্ধা জানাই। বাগেরহাট ফাউন্ডেশন নারী বীর মুক্তিযোদ্ধাদের যে সম্মাননা দিল- তা সত্যিই প্রশসংনীয়। অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক চেতনা বিকাশের জন্য সকল ধর্মের মানুষের জন্য সমান অধিকারকে জাগিয়ে তুলে লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। এই অধিকারের বিপক্ষে যারা আছে তাদের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলার আহ্বান জানান তিনি।

বুধবার বিকালে ৫৩তম মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে বাগেরহাট শহরের ঐতিহ্যবাহী এ সি লাহা মিলনায়তনে বাগেরহাট ফাউন্ডেশন নামে একটি সংগঠন নারী বীর মুক্তিযোদ্ধাদের এই সম্মাননা দেয়।

বাগেরহাটের বিভিন্ন এলাকার বিশজন নারী বীরমুক্তিযোদ্ধাকে সম্মাননা দেয়া হয়েছে। প্রত্যেক মুক্তিযোদ্ধাকে উত্তরীয়, ক্রেস্ট ও নগদ টাকা দেয়া হয়। বাগেরহাটে এই প্রথম মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য নারী বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মাননা দেয়া হলো।

সম্মাননা পেয়ে নারী বীর মুক্তিযোদ্ধা নুর জাহান বেগম ও রমনী রায় বলেন, জীবনবাজি রেখে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিলাম। আমরা অসাম্প্রদায়িক চেতনা হৃদয়ে ধারণ করে মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা করেছি। সাধারণ মানুষকে রাজাকারদের হাত থেকে রক্ষা করতে থাকার জায়গা দিয়েছি। আমরা নিজেদের নারী না ভেবে একজন মানুষ ভেবেই সেদিন মুক্তির সংগ্রাম করেছি। সরকার আমাদের ভাতা, ঘরসহ অনেক কিছু দিয়েছে। আমরা নারী নয়, আমরা এদেশের নাগরিক। আমাদের সবাই চিনত না। আজ সবাই আমাদের চিনল। মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের অবদানের কথা স্মরণ করে আজ যে সম্মাননা দিল তাতে আমরা আনন্দিত।

বাগেরহাট ফাউন্ডেশনের সভাপতি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুর রহমানের সভাপতিত্বে সম্মাননা অনুষ্ঠানে মুখ্য আলোচক ছিলেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক অমিত রায় চৌধুরী, বিশেষ অতিথি ছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য মীর শওকাত আলী বাদশা, শিক্ষানুরাগী অধ্যাপক মোজাফফর হোসেন, বাগেরহাট ফাউন্ডেশনের সহসভাপতি ফরিদা আক্তার বানু লুচি। অনুষ্ঠানটি সঞ্চলনা করেন বাগেরহাট ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক আহাদ উদ্দীন হায়দার।

(ঢাকাটাইমস/২৯মার্চ/এলএ)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
ধানে কারেন্ট পোকার আক্রমণ, দিশেহারা জামালপুরের কৃষক 
ফরিদপুরে দেড় লাখ টাকায় ‘বিক্রি হওয়া’ সেই শিশু উদ্ধার
আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত করল ইসি
ঝিকরগাছায় পুকুরে ডুবে শিশুর মৃত্য
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা