ভূমিদস্যুদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ আড়াই হাজার ভূমিহীন, ২০ বছরেও হয়নি বন্দোবস্ত

নোয়াখালী প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০৬ এপ্রিল ২০২৩, ১৩:৪৫ | প্রকাশিত : ০৬ এপ্রিল ২০২৩, ১২:১৪

বাড়ির আঙিনায় ধান, সর্জন পদ্ধতিতে করা হয়েছে মাছ ও বিভিন্ন ধরনের সবজির চাষ। পুরো বাড়ি জুড়ে ফলদ-বনজ গাছ। হাস-মুরগি-কবুতর ও গবাদি পশু রয়েছে প্রতিটি বাড়িতে। একেকটি বাড়ি যেন এক-একটি সমন্বিত কৃষি খামার। এসব বাড়িতে উৎপাদিত শস্যে নিজেদের পুষ্টির চাহিদা মিটিয়ে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। এলাকার বিভিন্ন স্থানে রয়েছে সরকারি আশ্রয়ণ কেন্দ্র কাম বিদ্যালয়, বাজার, পাকা সড়ক, বিদ্যুৎ সংযোগসহ সরকারি সকল সুযোগ-সুবিধা।

বাসিন্দারা বলছেন, নদীর সঙ্গে যুদ্ধ করে প্রায় দীর্ঘ ২০ বছর এ এলাকায় তাদের বসবাস, কিন্তু এখনও পর্যন্ত তাদের বসবাসরত দখলকৃত জমির মালিক হতে পারেনি কেউই।

এমনই চিত্র নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলার মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের মেঘনার কুলের চর মাকসুমুল মৌজার ৪টি সমাজের প্রায় আড়াই হাজার পরিবারের। দীর্ঘ ২০ বছর ধরে বিভিন্ন কৃষি পণ্য উৎপাদন করে দেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখা পরিবারগুলো এখন রয়েছেন নিজের বসতকৃত জমি হারানোর আতংকে। অথচ এ জমিতে অনেকের জন্ম হয়েছে, মৃত্যুর পরবর্তী দাফনও করা হয়েছে অনেককে। বছরের পর বছর চাষাবাদ করে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করছেন তারা। কিন্তু সম্প্রতি অচেনা মানুষরা জমি ছাড়তে হুমকি, দফায় দফায় হামলা করে মারধর করছে বলেও অভিযোগ এসব বাসিন্দার

ভ‚মিহীনরা বলছেন, সুবর্ণচর উপজেলার মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা তারা। বাড়ির খাজনা, বিদ্যুৎ বিলসহ সকল নাগরিক সুবিধা পাচ্ছে তারা। এ চরে দীর্ঘ ২০ বছর ৪টি সমাজে অন্তত ১৫ হাজার মানুষ বসবাস করছে। কিন্তু সম্প্রতি পার্শ্ববর্তী কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার চরএলাহী ইউনিয়নের কিছু ভূমিদস্যু ও দখলদাররা নিজেদের এসব জমির মালিক দাবি করে নির্যাতন শুরু করে অসহায় ভূমিহীনদের ওপর। সরকারি সংশ্লিষ্ট দপ্তরে ধরনা দিয়েও কোনো প্রতিকার মিলছে না ভ‚মিহীন এসব মানুষের।

ভ‚মিহীন বাসিন্দা বেলাল হোসেন বলেন, গত কয়েক মাস ধরে কোম্পানীগঞ্জের কয়েকজন ভ‚মিদস্যূ ভূয়া নথি ও কাগজপত্র নিয়ে আমাদের এলাকায় আসে। তাদের দাবি এ জমিগুলো তাদের নিজেদের, তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে এ জমি খালি করে দিতে হবে। সহজ কথায় জমি ছেড়ে না দিলে তারা আমাদের বিরুদ্ধে কঠিন ব্যবস্থা নিবে বলেও হুমকি দেয়।

নাম প্রকশে অনিচ্ছুক একাধিক ভ‚মিহীনের অভিযোগ, ভ‚মিদস্যূদের অব্যহত হুমকি ও বিভিন্ন সময় হামলার ঘটনায় জেলা এবং স্থানীয় প্রশাসনকে জানানো হলেও এখনও তাদের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। যেহেতু আমরা দীর্ঘ বছর ধরে এসব জমি ব্যবহার ও রক্ষণাবেক্ষণ করতেছে এবং জমি আমাদের দখলে আছে সে ক্ষেত্রে সরকারিভাবে জমিগুলো বন্দোবস্ত পাওয়া আমাদের অধিকার। দখলে থেকেও খাস জমিতে বন্দোবস্ত না পেয়ে হতাশ ভ‚মিহীনরা, আবার দখলে নেই এমন প্রভাবশালীরা ভুয়া নথি দিয়ে তাদের ভ‚মির দাবি করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে তারা। তাই তাদের দাবি জেলা প্রশাসকের সঠিক তদারকি, আন্তরিকতা এবং জরিপের মাধ্যমে সরকারিভাবে সবার দখল হিসেবে জমিগুলো যেন তাদের নামে বন্দোবস্ত দেওয়া হয়।

জেলা প্রশাসন দেওয়ান মাহবুবুর রহমান বলেন, সুবর্ণচর ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার মধ্যে সীমানা সংক্রান্ত জটিলতা থাকায় এসব ঘটনা ঘটছে। তবে জটিলতা যাই থাকুক, দীর্ঘদিন দখলে থাকা ভূমিহীনরাই এসব খাস জমির বরাদ্দ পাবে। তবে সবার আগে ভূমি জরিপ করে দুই উপজেলার সীমানা নির্ধারণ করা প্রয়োজন। তাই খুব দ্রুতই আমরা জরিপের কাজ শেষ করবো। জরিপ শেষে জমি বরাদ্দ হয়ে গেলে এসব সমস্যা কেটে যাবে।

ঢাকাটাইমস/৬এপ্রিল/এআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :