নাগরিকদের আজ দাসে পরিণত করা হয়েছে: কাদের গনি চৌধুরী

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ০৮ এপ্রিল ২০২৩, ২০:০৭
অ- অ+

বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সদস্য সচিব, কেন্দ্রীয় বিএনপির তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সহ-সম্পাদক কাদের গনি চৌধুরী বলেছেন, বাংলাদেশ এখন একটি পরিবারের জমিদারিতে পরিণত হয়েছে। ওই পরিবার যাই করুক কোনো সমালোচনা করা যাবে না। সমালোচনা করলেই চৌদ্দ শিকের ভাত খেতে হবে। দেশের মালিক নাগরিকদের আজ দাসে পরিণত করা হয়েছে।

শনিবার বিকালে ফটিকছড়ি উপজেলা বিএনপি আয়োজিত অবস্থান কর্মসূচিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে কাদের গনি চৌধুরী এসব বলেন। ফটিকছড়ি উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কর্ণেল (অব.) আজিম উল্লাহ চৌধুরী বাহারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ অবস্থান কর্মসূচিতে প্রধান বক্তা ছিলেন বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ফয়সল মাহমুদ ফয়েজী।

দেশে এক ভয়ানক দুঃশাসন চলছে উল্লেখ করে কাদের গনি বলেন, বিচারহীনতার সংস্কৃতি চালু হওয়ায় মানুষ আজ ন্যায় বিচার বঞ্চিত। অপরাধীরা দিন দিন শক্তিশালী হয়ে উঠছে। প্রতিবাদকারীরা হচ্ছে জুলুমের শিকার। আজ মানবাধিকার র‍্যাবের তপ্ত বুলেটে ক্ষতবিক্ষত। গণতন্ত্র পুলিশের বুটের তলায় পৃষ্ঠ। মানবতা আজ "আয়নাঘরে" আহাজারি করছে।

পেশাজীবীদের এ নেতা বলেন, মানুষের ভোটাধিকার লুণ্ঠন করা হয়েছে। কেড়ে নেয়া হয়েছে বাকস্বাধীনতা। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মাধ্যমে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা শৃঙ্খলিত করা হয়েছে। হরণ করা হয়েছে গণতন্ত্র। স্বৈরতন্ত্রের খোলসের ভেতরে দুর্নীতি, লুটপাট, অর্থ পাচার আজ মহামারি আকারে রূপ নিয়েছে। গুম, খুন, বিনাবিচারে হত্যা, ধর্ষণ সহ্যসীমা ছড়িয়ে গেছে।এ থেকে পরিত্রাণ দরকার। এজন্য সবার আগে প্রয়োজন রাতের আঁধারে লুট হয়ে যাওয়া মানুষের ভোটের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা। লুণ্ঠিত গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করা। স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি নিশ্চিত করা।

‘দেশ আজ একটি দল ও পরিবারের হাতে জিম্মি। কোথাও কাউকে জবাবদিহিতা করতে হচ্ছে না। বিনা ভোটে জয়ী হওয়ার সংস্কৃতি চালু হয়েছে। স্বাধীন দেশে আজ ভিন্ন মত দমনে রাষ্ট্রযন্ত্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে কর্তৃত্ববাদী শাসনের সামাজিক ভিত্তি রচনা করা হচ্ছে। ক্ষমতার লিপ্সা রাষ্ট্রীয় সব প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দিয়েছে, রাষ্ট্রকে দেউলিয়া করে ফেলেছে। সুতরাং দেশ ও জনগণের স্বার্থেই এ অবৈধ আওয়ামী সরকারের পতন ও রাষ্ট্র মেরামত আবশ্যক হয়ে পড়েছে।’, বলেন কাদের গনি।

কাদের গনি চৌধুরী বলেন, গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার মূল ভিত্তি হচ্ছে জনগণের শাসন। আর এই শাসন ব্যবস্থা আবর্তিত হয় মানুষের ভোটাধিকার প্রয়োগের মধ্য দিয়ে। ‘আমার ভোট আমি দেবো, যাকে খুশি তাকে দেবো’-এটাই মানুষের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার মূল শর্ত। দুর্ভাগ্য মানুষ এখন আর পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারছে না। এমনকি ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোটও দিতে পারছে না। আমরা দেখলাম, দিনের ভোট আগের দিন রাতেই হয়ে গেছে। সুপ্রিম কোর্ট বার নির্বাচনেও আইনজীবীরা ভোট দিতে পারে নি।এর আগে জাতীয় প্রেস ক্লাবে সাংবাদিকরা ভোট দিতে পারে নি।এভাবে সর্বস্তরে ভোটাধিকার হরণ করা হচ্ছে।ভোটাধিকার কেড়ে নেয়া মানে গণতন্ত্রকে হত্যা করা।যা প্রতিনিয়ত এ বিনাভোটের সরকার করছে। একটি স্বাধীন রাষ্ট্রে এর চাইতে বড় লজ্জার বিষয় আর কিছু হতে পারে না।

সাংবাদিকদের এ নেতা বলেন, গণতন্ত্র বলেন, আইনের শাসন বলেন, সুশাসন বলেন, জবাবদিহিতা বলেন-এর সবকিছুই নির্ভর করছে মানুষের ভোটাধিকার প্রয়োগ নিশ্চিত করার ওপর। সে অধিকার এখন আর এ দেশের মানুষের নেই, ফ্যাসিস্ট সরকার গায়ের জোরে কেড়ে নিয়েছে। গণতন্ত্রের ন্যুনতম মানদন্ডও মানা হচ্ছে না। তাই সবার আগে লুট হয়ে যাওয়া ভোটের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে হবে। এজন্য প্রয়োজন নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার এবং একটি স্বাধীন, নিরপেক্ষ এবং শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন। প্রয়োজন সরকারি প্রভাবমুক্ত, কারসাজিমুক্ত নির্বাচন। কালোটাকা ও পেশিশক্তির প্রভাবমুক্ত নির্বাচন। যে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনগণ তাদের পছন্দের মানুষকে ভোট দিয়ে জয়ী করবেন। এই অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্যই খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানলড়াই করেছেন।

ফয়সল মাহমুদ ফয়েজী বলেন,আগের রাতে ব্যালট পেপারে সিল মেরে ব্যালট বক্স ভর্তি করে জোর করে ক্ষমতা দখলকারী গণধিকৃত এই সরকার ক্ষমতা হারানোর ভয়ে ক্রমেই বেসামাল হয়ে পড়েছে। আমরা ফ্যাসিস্ট সরকারকে হুঁশিয়ার করে জানিয়ে দিতে চাই, খুন করে, রক্ত ঝরিয়ে বেশিদিন ক্ষমতায় টিকে থাকা যায় না। দেশের জনগণ আজ দুঃশাসনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ। তারা দুঃশাসনের অবসান চায়। তারা বাঁচার মতো বাঁচতে চায়। তারা স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি চায়। সব পেশাজীবীসহ দেশবাসীকে দুঃশাসনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানাচ্ছি।

কর্ণেল অব. আজিম উল্লাহ বাহার বলেন, সরকার দলীয়করণের মাধ্যমে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস ও নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করেছে। এই সরকার দুদক, নির্বাচন কমিশনসহ সব সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে ফেলেছে। আজ ন্যায় বিচারের পথ রুদ্ধ।মানবাধিকার ভুলুন্ঠিত। মানুষের জীবনের কোনো নিরাপত্তা নেই।সে কারণে রাষ্ট মেরামত করা জরুরি হয়ে পড়েছে।

এ সময় অন্যদের মধ্যে ফটিকছড়ি উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব জহির আজম চৌধুরী, ইদ্রিস মিয়া ইলিয়াস, জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, সারোয়ার হোসেন, আলহাজ্ব এজহার মিয়া,শওকত উল্লাহ চৌধুরী,এডভোকেট আফসার উদ্দিন হেলালি, মোরশেদ হাজারী,নুরুল আমিন আজাদ, মাহমুদুল হাসান দিলু, শহিদুল ইসলাম, আজিজ উল্লাহ, মইনুল্লাহ উজ্জল, রায়হানুল আনোয়ার রাহী, শফিউল আজম চৌধুরী, হাসান চৌধুরী দিপু,আবদুল্লাহ আল মামুন, ইঞ্জিনিয়ার বেলাল উদ্দিন মুন্না, ইলিয়াস মেম্বার, খোরশেদুল আলম উপস্থিত ছিলেন।

(ঢাকাটাইমস/০৮এপ্রিল/জেবি/কেএম)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
বাউফলে বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে শ্রমিকের মৃত্যু
আবদুল হামিদের দেশ ছাড়ার ঘটনায় তিন উপদেষ্টার তদন্ত কমিটি
ডিবি হারুন ধরাছোঁয়ার বাইরেই থাকলো?
মিরপুরে ট্রাফিক সদস্যদের মাঝে স্যালাইন বিতরণ 
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা